Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

সতেজ সজীব পরিবেশ আল্লাহর বিশেষ রহমত

Icon

আলম শামস

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সতেজ সজীব পরিবেশ আল্লাহর বিশেষ রহমত

সুন্দর পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন আবহাওয়া আমাদের জীবনের জন্য আপরিহার্য। সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত। অথচ আমরা নিজেরাই আমাদের পবিবেশকে নষ্ট করছি। বিষাক্ত করে ফেলছি আমাদের আবহাওয়াকে। পাহাড় কেটে, নদী দখল করে, কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পানির উৎসে ফেলে, বন-বাগানের গাছ নির্বিচারে কেটে, মিল-ফ্যাক্টরি, ইটভাটার ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া মানুষসহ সব প্রাণী ও বৃক্ষের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি পৃথিবীতে এ জন্যই পাহাড়গুলো সৃষ্টি করে রেখেছি, যাতে পৃথিবী পাহাড়গুলো নিয়ে হেলে-ঝুঁকে পড়তে না পারে।’ (সূরা আম্বিয়া : ৩১; সূরা নহল : ৭)। এ পৃথিবীর স্রষ্টা রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষা, তাদের জীবনযাত্রা ও বংশধারার সুষ্ঠু বিকাশ, সংরক্ষণ এবং উন্নয়নে সৃষ্টি করেছেন মানববান্ধব প্রকৃতি এবং নিরুপম পরিবেশ। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তিনিই মহান সত্তা, যিনি ভূমণ্ডলে ভারী বোঝা (পাহাড়-পর্বত) স্থাপন করেছেন।’ (সূরা রা’দ : ৩)।

মহানবি মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ জমিনকে সৃষ্টি করলে তা নড়তে শুরু করল। এরপর আল্লাহ পাহাড়-পর্বত তৈরি করলেন। এরপর জমিনের ওপর দিয়ে পাহাড়-পর্বত ঘুরে এলে জমিনের স্থিতিশীলতা কায়েম হলো।’ (তিরমিজি : ৩২৯১)।

গত কয়েক দশকে আমাদের দেশের চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বৃহত্তর সিলেট ও নেত্রকোনার বহু পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতি, নালিতাবাড়ী এবং শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড় কেটে অবাধে পাথর উত্তোলন করা হয়। এতে করে পাহাড়ের মাটি ধসে পাহাড়ি বন বিনষ্ট হয়। জুম চাষেও পাহাড়ের গাছপালা কেটে পাহাড়ের ক্ষতিসাধন করা হয়। ১৯৯০ সালে ইমারত আইন ১৯৫২ সংশোধন করে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটায় অবৈধভাবে গাছ পোড়ানোসহ বিষাক্ত ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে অনেক আইনেরই কোনো প্রয়োগ নেই। বরং আমাদের দেশের আইন ও প্রশাসনের কাছে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে অসহায়।

মূলত পৃথিবীর ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণের প্রয়োজনেই মহান আল্লাহ পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পাহাড়-পর্বতকে জমিনের ওপর সুউচ্চ করে স্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি ভূপৃষ্ঠের অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং এগুলোতে তিনি বরকত দান করেছেন।’ (হামিম সাজদা : ১০)। এতে প্রমাণিত হয়, পাহাড়-পর্বতে রয়েছে প্রকৃতির অফুরন্ত দান। এসব পাহাড়-পর্বতের ওপর এবং এগুলোর অভ্যন্তরে মানুষ ও জীবজন্তুর জন্য হাজারও নেয়ামত লুকায়িত আছে। এগুলো শুধু প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে না, বরং এগুলো মানুষের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য পানি সৃষ্টির কাজেও প্রয়োজন পড়ে। আল্লাহর অনুপম নিদর্শন এই যে, তিনি সমুদ্রের পানিকে বাষ্পাকারে আকাশে তুলে নিয়ে, এসব বাষ্পকে মেঘমালায় রূপদান করেন। এরপর বাষ্পে সৃষ্ট মেঘমালাতে গতি সঞ্চার করলে এগুলো ধাবিত হতে থাকে এবং ধাবিত এসব মেঘে মেঘে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টিধারায় ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। নেমে আসা এসব পানির মাধ্যমেই স্নিগ্ধ ও সিক্ত হয় পৃথিবী। পাহাড়ের গায়েও ধাক্কা খেয়ে নেমে আসা পানি দ্বারা শুষ্ক ও মৃত ভূপৃষ্ঠ শস্য শ্যামলিমা ফুলফল ও সবুজ বনানীতে ভরে ওঠে পৃথিবীর বুক। জমে ওঠে পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রাণিকুলের খাদ্যসম্ভার। কখনো আবার আকাশে ভাসমান ধাবমান মেঘমালা আটকে যাচ্ছে পর্বতগাত্রে এবং আটকে যাওয়া মেঘ জমা হয়ে পর্বতগাত্রে গড়ে তুলছে বিরাট বিরাট বরফের স্তূপ। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে পর্বতগাত্রে জমে থাকা বরফের স্তূপ পানিরূপে গলতে শুরু করে এবং গলিত এসব পানি ঝরনাধারায় রূপ নিয়ে চলতে থাকে নদ-নদী ও সমুদ্রের পানে। এভাবেই সমুদ্রের নোনা পানি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পরিশোধিত করে মহান আল্লাহ পৃথিবীবাসীকে উপহার দিয়েছেন তাদের বাঁচার উপকরণ স্বাদু-সুপেয় পানি। শুধু প্রাণিজগতের পানীয়ই নয় বরং ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি, ভূমিকে উদ্ভিদরাজি সৃষ্টির জন্য উপযুক্তকরণে এবং বেড়ে ওঠা এসব উদ্ভিদ থেকে শস্যদানা খাদ্যপণ্য উৎপাদনে পানির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অর্থাৎ পানিচক্রের কর্মকাণ্ডের মধ্যে পাহাড়-পর্বতের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আল কুরআনের সূরা গাশিয়ার ৮৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা (মানবজাতি) কি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য করে না, কীভাবে তা স্থাপিত হয়েছে?’ পাহাড় কাটা এবং এর ক্ষতিসাধনের পরিণাম ভয়াবহ। পাহাড়-পর্বত কেটে ফেললে প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়ে পারিপার্শ্বিক অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা ও অপ্রত্যাশিত বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এটি বিশ্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরুদ্ধে একটি অন্যায় হস্তক্ষেপ। এতে নানা ধরনের দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে ওঠে। এরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ ইসলামে নিষিদ্ধ। মানবজাতির বিরুদ্ধে যে কোনো বিপর্যয় সৃষ্টি করা ও তাদের অস্তিত্ব রক্ষার পরিপন্থি কোনো কর্ম ইসলাম অনুমোদন করে না। আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না।’ (আনকাবুত : ৩৬; বাকারা : ৫৯)। ‘তিনি যে কোনো বিপর্যয় ও এগুলো সৃষ্টিকারীকে কখনোই পছন্দ করেন না’ (সূরা বাকারা : ২০৫; সূরা মায়িদা : ৬৫)। তিনি বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ও সীমালঙ্ঘনকারীকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। সূরা রুমার ৪১ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘জলে-স্থলে সৃষ্ট বিপর্যয় সবই মানুষের কর্মফল।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম