Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

দ্বীনের আলো ছড়ায় তাবলিগ

Icon

মুফতি হেলাল উদ্দিন হাবিবী

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বীনের আলো ছড়ায় তাবলিগ

তাবলিগ শব্দটি আমাদের সবার কাছে পরিচিত। এর আভিধানিক অর্থ, ‘পৌঁছানো’। ইসলামের শাশ্বত বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াকে তাবলিগ বলে। মহান রাব্বুল আলামিন এ ধরণিতে এক লাখ বা দুই লাখ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর প্রেরণ করেছেন। সবাই তার একত্ববাদের তাবলিগ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এ ধরাপৃষ্ঠে আগমন করে সম্পূর্ণ প্রতিকূলতার মাঝেও শান্তি, কল্যাণ ও একত্ববাদের প্রচার করেছেন। বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামের মর্মবাণী। যার ফলে আইয়্যামে জাহেলিয়্যাত পরিণত হয়েছিল সোনালি যুগে।

বিদায় হজের ভাষণে প্রিয়নবি (সা.) ঘোষণা করেছিলেন, আমার কাছ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। প্রিয়নবি (সা.)-এর এ নির্দেশ পালনার্থে যুগে যুগে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবেতাবেয়িন, হক্কানি পির-মাশায়েখ ও ইসলামি মনীষীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ইসলামের তাবলিগ করে গেছেন। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাই ছিল তাদের মিশন এবং ভিশন।

মহান রাব্বুল আলামিন স্বয়ং তার প্রিয় বান্দাদের শান্তি ও কল্যাণের দিকে তাবলিগ করে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, আর আল্লাহ শান্তির ঘর তথা জান্নাতের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন। (সূরা ইউনুস, আয়াত-২৫)।

মহান আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বন্ধু হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে বিশ্বময় দাওয়াতের নির্দেশ প্রদান করে বলেন, আপনি বোঝাতে থাকুন, নিশ্চয় বোঝানো ইমানদারদের উপকারে আসবে। (সূরা জারিয়াত, আয়াত-৫৫)।

পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আরও ইরশাদ করেন, হে নবি! আপনি আপনার রবের দিকে জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশ দ্বারা দাওয়াত দিন এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল, আয়াত-১২৫)।

যারা মানুষকে শান্তি, কল্যাণ ও একত্ববাদের দাওয়াত দেয় এবং ইসলামের দিকে আহ্বান করে, তাদের প্রশংসা করে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, তার চেয়ে উত্তম কথা কার? যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, নেক আমল করে এবং বলে আমি মুসলমান। (সূরা হা-মীম সিজদা, আয়াত-৩৩)।

মহান আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর; যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ নিয়োজিত আছে, তারা কোনো বিষয়ে আল্লাহতায়ালার অবাধ্য হয় না, আর তারা সেটাই করে যা তাদেরকে নির্দেশ করা হয়। (সূরা তাহরীম, আয়াত-৬)।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা মানুষের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করো, রূঢ় আচরণ করো না, সুসংবাদ দাও, ভীতসন্ত্রস্ত করো না। (বোখারি, মুসলিম)।

প্রিয় পাঠক! ইসলামের বাণী প্রচার করতে গিয়ে আমাদের প্রিয়নবি (সা.) কত কষ্ট, নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। সুদীর্ঘ তেরো বছর মক্কার কাফেরদের নির্মম নির্যাতন হাসি মুখে বরণ করেছেন। অবরুদ্ধ জীবন কাটিয়েছেন। মক্কা ও তায়েফে কাফেরদের পাথরের আঘাতে বারবার রক্তাক্ত হয়েছিল তার পবিত্র দেহ মোবারক। ওহুদের ময়দানে শহিদ হয়েছিল তার দুই-দুইটি দাঁত মোবারক। ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেটে একাধিক পাথর বাঁধতে হয়েছিল। তদুপরি এক মুহূর্তের জন্য তিনি একত্ববাদের দাওয়াত বন্ধ করেননি।

হজরত মুনিব আজাদী (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে জাহিলিয়্যাতের যুগে দেখেছি, তিনি বলছিলেন, হে মানবজাতি! তোমরা বলো ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নাই’ তাহলে সফলকাম হবে। এ কথা শুনে কেউ তার পবিত্র চেহারা মোবারকে থুথু নিক্ষেপ করছিল, আবার কেউ তার ওপর মাটি নিক্ষেপ করছিল, আর কেউ তাকে গালি দিচ্ছিল। এভাবে দিনের অর্ধেক কেটে গেল। তারপর একটি মেয়ে তার কাছে পানির পাত্র নিয়ে আগমন করল। তিনি সেই পানি দ্বারা নিজের চেহারা ও উভয় হাত ধৌত করলেন এবং বললেন, হে আমার মেয়ে! তুমি তোমার পিতার ব্যাপারে অপমৃত্যু ও অপমানের আশঙ্কা করবে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম এ মেয়েটি কে? লোকজন বলল, ইনি রাসূল (সা.)-এর কন্যা যয়নব (রা.)। তিনি একজন সুশ্রী বালিকা ছিলেন। (তাবরানী, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ)।

দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে ইসলাম নামক বটবৃক্ষে ডালপালা ছড়ায়, পাতা গজায়; যদিও মহান এ কাজ অত্যন্ত কঠিন ও বিপদসংকুল। সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবির উম্মত হিসাবে এ পবিত্র দায়িত্ব আজ আমাদের ওপর অর্পিত। তাই জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ইসলামের মর্মবাণী প্রচারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের দাওয়াতি কাফেলায় শামিল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম