Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

নিজেকে তুচ্ছ ভাবাই মনুষ্যত্ব

Icon

সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিজেকে তুচ্ছ ভাবাই মনুষ্যত্ব

বর্তমান পৃথিবীতে বিচ্ছিন্নতা ও বিভক্তির মূল কারণ, নিজের পথ ও মতকে সম্মানিত ভেবে অন্য মানুষের পথ ও মতকে তুচ্ছ করা, জাহান্নামি বলা, মন্দ লোক মনে করা।

ফলে মানুষ নিজের মত ও পথকে সঠিক মনে করে বহু দলে বিভক্ত হচ্ছে, মানুষে মানুষে হানাহানি, মারামারি, জুলম, যুদ্ধ-বিগ্রহ, আমানত খেয়ানতে লিপ্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে মুত্তাকি মনে করে অন্যকে তুচ্ছ ভাবে; যা সম্পূর্ণভাবে কুরআনের আয়াত ও হাদিস লঙ্ঘন করা।

অথচ মহান আল্লাহ বলেন, যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য থেকে, ছোটখাটো অপরাধ বা গুনাহ্ করলেও তোমার রবের ক্ষমা অপরিসীম। আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে ভালো জানেন। যখন তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছিলেন মাটি থেকে এবং যখন তোমরা ভ্রূণরূপে মাতৃগর্ভে অবস্থান কর। অতএব, তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনিই ভালো জানেন, মোত্তাকি কে ( আল কুরআন : ৫৩:৩২)।

আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মুত্তাকি কে এটা আল্লাহ ভালো জানেন। নবি-রাসূল ও মুমিনগণ নিজের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে ভীত থাকতেন যা ছিল বিনয়তা ও পরহেজগারিতা।

আল্লাহতায়ালা সব সৃষ্টিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। একদল জান্নাতে যাবে অন্যদল জাহান্নামে যাবে যা পূর্বনির্ধারিত। জগৎ সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে এ বিভক্তি হয়ে গেছে। মানুষ এ পৃথিবীতে তার তকদির অনুসারে আমল করে। তাই রাসূল (সা.) বলেন, পৃথিবীতে একজন মানুষও নেই যার জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারণ হয় নাই। মানুষ কোনো আমলের কারণে জান্নাতে যাবে না বরং মানুষ জান্নাতে যাবে আল্লাহর রহমতে।

রাসূল (সা.) বলেন, ‘শুধু হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রহমত ছিনিয়ে নেওয়া হয়’ (জামে আত তিরমিজি, হাদিস ১৯২৩)। অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন ‘একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের ওপর হস্তক্ষেপ করা হারাম। কোনো ব্যক্তি নিকৃষ্ট প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করবে’ (সুনান আবু দাউদ ৪৮৮২)।

আল্লাহ নিজে নম্র, তাই তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। তিনি নম্রতার দরুন এমন কিছু দান করেন যা কঠোরতার দরুন দান করেন না; আর অন্য কোনো কিছুর দরুনও তা দান করেন না, (সুনান আবু দাউদ ৪৮০৭) ।

নবি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নম্র আচরণ থেকে বঞ্চিত সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত, সূত্র, সহিহ মুসলিম : ৬৪৯২ মান: সহিহ। নবি (সা.) আরও বলেছেন, তোমরা নম্র হও এবং কঠোর হয়ো না। শান্তি দান কর, বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না, (সহিহ বোখারি ৬১২৫)।

অন্যের দোষ গোপন করার মধ্যে রয়েছে নিজের কল্যাণ। নবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি (অন্য কারও) গোপনীয় দোষ দেখতে পেয়েও তা গোপন করল সে যেন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জীবনদান করল, (সুনান আবু দাউদ ৪৮৯১)। মৃত ব্যক্তিদের বদনাম করা উচিত নয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কোনো সঙ্গী মারা গেলে তাকে আল্লাহর ওপর ছেড়ে দাও এবং তার সম্পর্কে কটূক্তি করো না, (সুনান আবু দাউদ ৪৮৯৯)।

কারও পাপ দেখে পাপী বলে কটাক্ষ করা উচিত নয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, বনি ইসরাইলের মধ্যে দুব্যক্তি ছিল। তাদের একজন পাপ কাজ করত এবং অন্যজন সর্বদা ইবাদতে লিপ্ত থাকত। যখনই ‘ইবাদতে রত ব্যক্তি, অপর ব্যক্তিকে দেখত তখনই তাকে খারাপ কাজ পরিহার করতে বলত। একদিন সে তাকে পাপ কাজে লিপ্ত দেখে বলল, তুমি এমন কাজ হতে বিরত থাক।

সে বলল, আমাকে আমার রবের ওপর ছেড়ে দাও। তোমাকে কি আমার ওপর পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? সে বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর দুজনকেই মৃত্যু দিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত করা হলে তিনি ‘ইবাদতগুজারি আবেদ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি আমার সম্পর্কে জানতে? অথবা তুমি কি আমার হাতে যে ক্ষমতা আছে তার ওপর কি তুমি ক্ষমতাবান ছিলে?

এবং পাপীকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করো। আর আবেদ ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ বললেন, তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! সে এমন উক্তি করেছে যার ফলে তার দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই বরবাদ হয়ে গিয়েছে (আবু দাউদ ৪৯০১)।

ওই আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, কোনো মানুষ অন্য মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, মন্দ ধারণা করা, পাপী বা জাহান্নামি ভাবা বা বলা উচিত নয়। যার যার আমল তার তার। কেউ কারও কর্মের জন্য দায়বদ্ধ নয়। মানুষ উপদেশ দিতে পারে কিন্তু হিসাবের দায়িত্ব আল্লাহর। সুতরাং প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করাই শ্রেয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম