Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ছড়িয়ে দিন তাকওয়ার রং

Icon

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ছড়িয়ে দিন তাকওয়ার রং

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের আলাদা করে তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। তিনি আমাদের বাহ্যিকতা ও অন্তরের অবস্থানের একত্রে হিসাব মেলান।

আল্লাহতায়ালা সূরাতুল হাজ্জের ৩৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিকট কখনোই তোমাদের কুরবানির পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছাবে না। কিন্তু আল্লাহর নিকট তোমাদের তাকওয়া বা অন্তরের অবস্থানই পৌঁছে থাকে’। কেউ যদি টানা ৭০ বছর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন, সঙ্গে তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল সালাতও আদায় করেন কিন্তু তার হৃদয় যদি আল্লাহর জন্য বিনয়ী না হয়, তিনি যদি আদায়কৃত সালাতে একনিষ্ঠ ও মনোযোগী না হন। তার হৃদয় যদি মহান মনিবের সামনে হাজির না থাকে, তাহলে সিজদার কারণে তার কপালে হয়তো দাগ পড়তে পারে, সালাতের কারণে সামাজিক অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে কিন্তু আল্লাহতায়ালা তার এ সালাতের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবেন না। অন্তঃসারশূন্য তার এই ৭০ বছরের সালাত পরকালে তেমন কোনো কাজে আসবে না। বাহ্যিক আচার-আচরণের চেয়ে ইসলাম অন্তরের অবস্থানকেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে। আমিরুল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শুধু নিয়্যাত অনুসারেই কর্মের প্রতিফল পাওয়া যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। আপনি যদি এক কোটিবার উচ্চারণ করে বলেন আপনি কাউকে ভালোবাসেন, কিন্তু মনে মনে আপনি তাকে পছন্দ করেন না। তাহলে কোটিবার উচ্চারণেরও কোনো মূল্য থাকে না বরং এটা নিশ্চিতভাবে প্রতারণা। মানুষের উপস্থিতিতে আমরা আল্লাহভীরু সাজতে ভালোবাসি, ভালো ভালো কথা শুনিয়ে চোখের অশ্রু ঝরিয়ে আমাদের তাকওয়ার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দরজা বন্ধ করে আমরা হাতের মোবাইল সেটের মাধ্যমে অনবরত হারাম কাজে সময় ব্যয় করি। এটাকে মোটেও আল্লাহকে ভয় করা বা তাকওয়া বলে না।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা যদি জিকির করতে থাকেন, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’ এ আমল দিয়ে আপনি আল্লাহর বিচারে তাকওয়াবান প্রমাণিত হবেন না। কিন্তু ওই বাক্যটি যিনি একবারের জন্যও বলেন না কিন্তু সর্বদা তিনি মনে প্রাণে এবং বাহ্যিকভাবে আল্লাহতায়ালা তাকে যা বর্জন করতে বলেছেন তা বর্জন করে যাচ্ছেন এবং আল্লাহতায়ালা তাকে যা করতে বলেছেন তা করে যাচ্ছেন তাহলে তিনিই প্রকৃত তাকওয়াবান। তিনি আল্লাহতায়ালার বিচারে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত।

আল্লাহতায়ালা সূরাতুল হুজরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে বলেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালার নিকট তিনি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যিনি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করেন।’ তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা মোটেও দেখানো বা শোনানোর বিষয় নয়। তাকওয়া মনে মনে লালন করার বিষয়। তবে অন্তরে স্থায়ী হয়ে যাওয়া তাকওয়ার প্রতিফলন বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত হবে। যা হবে একেবারেই স্বাভাবিক। মোটেও কৃত্রিম হবে না।

কৃত্রিমভাবে প্রকাশিত তাকওয়া উপকার তো দেবেই না বরং ইহকালে ও পরকালের তা হবে ধ্বংসের অন্যতম কারণ। মানুষের কাছে ভালো সাজা আর মৌলিকভাবে ভালো হওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। মানুষের কাছে সাজানো ভালোমানুষী খুব বেশি ধরা পড়ে না। কিন্তু অন্তর্যামী আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম