প্রতীকী ছবি
পৃথিবীতে রহমতস্বরূপ আল্লাহ পাক রাসূল (সা.)কে পাঠিয়েছেন। তার জীবনাচার পৃথিবীর জন্য বড় নিদর্শন। দুনিয়া সৃষ্টি হওয়ার বহু আগে আল্লাহ পাক নুরে মুহাম্মাদিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ নিজেকে ভালোবাসে এক অপার আনন্দ অনুভূতি থেকে উচ্চারণ করলেন-‘ওগো আমি, তুমি বন্ধু হয়ে আমা হতে পৃথক হয়ে যাও’। সেই নুর আল্লাহ থেকে পৃথক হয়ে পাঁচ হাজার বছর পর্যন্ত আরশে মোয়াল্লাকে তওয়াফ করল। সে নুরের মধ্য থেকে আওয়াজ হতে থাকল-আলহামদুল্লিল্লাহ। এ হামদের জন্যই তার নাম হলো মুহাম্মাদ বা প্রশংসাকারী।
হাদিসে কুদসিতে বলা হচ্ছে-‘খালাকতু মুহাম্মাদান মিন নুরি ওয়াজহি’ অর্থাৎ মুহাম্মাদকে আমি আমার খাস নুর দ্বারা সৃষ্টি করেছি [কুরআন, হাদিস ও সুফিতত্ত্বের ভূমিকা]। আমাদের সম্মুখে তার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশ পায়নি। কেননা যদি আমাদের সম্মুখে তার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশ পেত তাহলে আমাদের চর্মচক্ষু তা দেখার মতো শক্তি রাখত না [জামেউত তিরমিজি]। আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতে ওয়াল আরদ [সূরা নুর/৩৫]- আল্লাহ হচ্ছেন এই আসমান ও জমিনের নুর। এর সঙ্গে রাসূলে পাক (সা.)-এর হাদিস মিলিয়ে পড়লে, ‘আনা মিন নুরিল্লাহ ওয়া খালাকা কুল্লুহুম মিন নুরি-আমি আল্লাহর নুর থেকে এবং এ ব্রহ্মাণ্ড আমার নুর থেকে তৈরি।
সূরা কাহাফের শেষ আয়াতে আল্লাহপাক তার রাসূলকে বলতে বলছেন : ‘আমি তোমাদেরই মতো মানুষ কিন্তু আমার ওপর ওহি আসে।’ মোট কথা তিনি মানুষ হয়ে জন্মেছিলেন, আকৃতিতে আমাদের মতো হলেও তিনি সত্যি সত্যি আমাদের মতো ছিলেন না। আমাদের ওপর কি ওহি আসে?
প্রিয় নবি (সা.)কে উম্মি নবি বলা হয়। এ ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। জগতে বিদ্যশান অন্যান্য সব ভাষার মতো আরবিতেও একই শব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। উম্মি শব্দের এক অর্থ হচ্ছে মাওয়ালা, অর্থাৎ যার শুধু মা দুনিয়া জীবিত আছেন। আমাদের রাসূল (সা.)কে তাই নবিউল উম্মি বলা হয়। অপর শব্দের অর্থের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই, কারণ তিনি বলেছেন ‘আমি জ্ঞানের শহর আর আলী তার সিংহ দুয়ার। কুরআন যে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে সে ভাষা যেমন সমৃদ্ধ তেমন জটিল।
রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, কুরআনের একটি জাহের ও একটি বাতেন আছে। এ বাতেনেরও একটি বাতেন আছে-এই শেষোক্ত বাতেনেরও আবার সাতটি বাতেন আছে [বুখারি]। অতএব, আমরা যেন শেষোক্ত উম্মির মধ্যে না ফেলি। তার শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ পাক। তিনি লিখতেন না এ কারণেই যে, অবিশ্বাসীরা মনে করতে পারে যে, তিনি কুরআন স্বহস্তে লিপিবদ্ধ করেছেন। কুরআনের সূরার বিন্যাস তিনি নিজেই জীবদ্দশায় করিয়েছেন।
‘যারা আল্লাহ এবং রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের দুনিয়া এবং আখেরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি [সূরা আহযাব/৫৭]। রাসূল (সা.)-এর যথাযোগ্য সম্মান করতে যারা কুণ্ঠিত তাদের নিজেদের বিদ্যার অহংকার সম্পর্কে সজাগ হওয়ার প্রয়োজন আছে। রাসূলের মুহাব্বত ছাড়া কোনো এবাদত কবুল হবে না। এ কথা কুরআনেই বারবার এসেছে। হে আল্লাহ তোমার ও তোমার হাবিবে পাকের মুহাব্বত আমাদের হৃদয়ে দান করো। আমিন