পরকালের পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হবেন যারা
মাহমুদ হাসান ফাহিম
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
আমরা ইহকালের ধন-সম্পদের পেছনে ছুটে পরকাল বিস্মৃত হতে বসেছি। আমাদের কৃতকর্মগুলো যদি আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় হয়, তাহলে এ বিলাস, বিত্তবৈভব কি কাজে আসবে আমাদের। পরকালে উপায় কী হবে এ কথা ভাবি না। এটা যে আমাদের চরম ভুল তাও মনে থাকে না অনেক সময়। ইহকালের ধন-সম্পদ আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির পরিচায়ক নয়। কেননা, আল্লাহতায়ালা তার সব বান্দার প্রতিই দয়ালু। এ দয়াবশত তিনি সবাইকে রিজিক দেন, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দান করেন। এতে উপযোগিতার ভিত্তিতে কমবেশিও হয়। তিনি যাকে যে পরিমাণ ইচ্ছা, দান করেন। কিন্তু সবাইকেই দেন। এটা কেবল দুনিয়াতেই চলবে। ইহকালীন এ দয়া দেখে এমন ভাবার সুযোগ নেই যে, আমাদের তরিকা সত্য এবং পরকালেও আমরা এরূপ দয়ার ভাগিদার হব। এটা পর্থিব জীবনের পরিষ্কার ধোঁকা। ইরশাদ হয়েছে, ‘পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয় (আয়াতাংশ, সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)।
পরকাল এমন এক জায়গা যাতে সুকর্মের পুরস্কার ও কুকর্মের শাস্তি দুটিই থাকবে। আমাদের যাদের সব অনিষ্টের মূল ইহকালীন ধন-সম্পদের গর্ব, তাদের উচিত তা থেকে বিরত হয়ে পরকালের চিন্তা করা। কেননা, পবিত্র কুরআনে হাকিমে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি আখেরাতের সফলতা কামনা করে, আমি তাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিই। আর যে ব্যক্তি কেবল দুনিয়াই চায়, তাকে আমি দুনিয়ায় খানিকটা দান করি। আর আখেরাতে তার কোনো অংশ নেই (সূরা শুরা : ২০)। বাড়িয়ে দেওয়ার মানে বহুগুণ সওয়াব দেওয়া। যেমনটি পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, একটি সৎকর্মের বিনিময়ে দশগুণ সওয়াব দেওয়া হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো পুণ্য নিয়ে আসবে, তার জন্য তাকে দেওয়া হবে দশগুণ সওয়াব (আয়াতাংশ, সূরা আনআম : ১৬০)।
আর যে বা যারা শুধু ইহকালের সফলতাই কামনা করে এবং তাদের সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা দুনিয়ার ভোগ সম্ভার লাভের লক্ষ্যে ব্যয় করে, পরকালের জন্য কিছুই করে না, আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে তাদের যা দেওয়ার তা দুনিয়াতেই দিয়ে দেবেন এবং পরকালে তার কোনো অংশ থাকবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিছু লোক তো এমন আছে, যারা (দোয়া করার সময়) বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দান কর, আখেরাতে তাদের কোনো অংশ নেই’ (সূরা বাকারা : ২০০)। উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, দুনিয়ার পার্থিব জীবনটাই যাদের একমাত্র কামনা বাসনা, আসল চাওয়া পাওয়া এবং এর জন্যই তাদের সব চেষ্টা, পবিত্র কুরআনের ভাষায় তারাই হবে পরকালবঞ্চিত মানুষ। সুতরাং পরকাল বিশ্বাসী প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হলো, আখেরাতের প্রকৃত সফলতা অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তাদের এসব চেষ্টার মূল্যায়ন করে কুরআনে হাকিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে ব্যক্তি আখেরাত লাভ করতে চায় এবং সেজন্য যথাসাধ্য চেষ্টাও করে, সে যদি মুমিন হয়, তবে তার এরূপ চেষ্টার পরিপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হবে। (অর্থাৎ আখেরাতে সেই হবে সফলকাম) (সূরা বনী ইসরাঈল : ১৯)।