Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

বিজ্ঞানবিমুখ মুসলিমদের পথ দেখাবে কে?

Icon

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিজ্ঞানবিমুখ মুসলিমদের পথ দেখাবে কে?

সভ্যতার পতন হয় কিসে? এক কথায়-ঠুনকো বিষয়ে বাড়াবাড়ি একটি সভ্যতার পতন ডেকে আনে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, জাহাজের ইঞ্জিনের ত্রুটি সারানোর ইঞ্জিনিয়ার যদি ক্যান্টিনের ডালে লবণ কম হওয়া বা চায়ে চিনি বেশি হওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, আর এভাবে বছরের পর বছর জাহাজটি চলতে থাকে, কোনো সার্ভিসিং না হয় এবং লবণ-চিনি নিয়ে মাতামাতি-হাতাহাতি চরম আকার ধারণ করে, তাহলে ওই জাহাজ সময়ের ব্যবধানে মাঝ সমুদ্রে ডুববেই ডুববে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

চিফ ইঞ্জিনিয়ার যখন ইঞ্জিনের দিক থেকে নজর সরিয়ে ক্যান্টিনের লবণ আর চিনির প্রতি ঝুঁকে পড়েন, তখন অন্যদের দৃষ্টিও ওই লবণ আর চিনির মধ্যেই আটকে যায়।

প্রিয় পাঠক! আজকের দুনিয়ার ইসলাম ওই জাহাজের মতো হয়ে উঠেছে। জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার তথা বড় বড় আলেমরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মাতামাতি-দলাদলিতে লিপ্ত থাকার ফাঁকে কবে যে ইসলামের মূল চালিকাশক্তি বা ‘ঐক্য’ নামক ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে গেছে সে বিষয়েও জগদ্বাসী বেখবর। নষ্ট ইঞ্জিনের জাহাজের যে বেহালদশা আজকের বিশ্ব মুসলমানেরও একই দশা।

ঐক্যহারা ইসলাম নামক জাহাজ না পারছে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে, না পারছে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। একদিকে আমাদের ধর্মজ্ঞানীরা কথায় কথায় পাশ্চাত্য সমাজের নিন্দায় মুখে ফেনা তুল ফেলছেন, অন্যদিকে তাদের সন্তানরাই পশ্চিমের নাগরিকত্ব পেতে জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলছে।

ধর্মের এ দুঃসময় কখন আসে? যখন চিফ ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিন ছেড়ে চিনি লবণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আজ আমাদের কিছু আলেম সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে আট দশটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন। নামাজে হাত বুকের ওপর নাভির ওপর বাঁধা, আমিন জোরে আস্তে বলা, মোনাজাতে হাত তোলা না তোলা ইত্যাদি সুন্নাত-মুস্তাহাব বিষয় নিয়ে আমাদের আলেমরা এত এত বাড়াবাড়ি করছেন যার ফলে মূল জায়গায় দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগই হয়ে উঠছে না।

তুরস্কের প্রখ্যাত হাদিস গবেষক শাইখুল হাদিস মেহমেদ গরমেজ লিখেছেন, এসব ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে মাতামাতির ফলেই ইসলামের সুমহান সভ্যতার পতন হয়েছে। দীর্ঘ চৌদ্দশ বছরের সমৃদ্ধ সভ্যতা তথা কুরআনি সভ্যতার পতন হয়েছে।

আজকের দুনিয়ায় অন্যতম সমস্যা হলো প্রাণবৈচিত্র্যের হুমকির সমস্যা। কুরআনে পিঁপড়ার আবাস নিয়ে কথা আছে, হাতি ও মাছের প্রসঙ্গ আছে, মাকড়সার আলোচনা আছে। কিন্তু আমাদের কুরআন গবেষকরা কি যুগের সমস্যা সমাধানে অবদান রাখতে পেরেছেন বা মানুষকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে কোনো ভূমিকা রেখেছেন? রাখেননি।

ফলে আজকের জ্ঞান-বিজ্ঞান মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। যতদিন জ্ঞান-বিজ্ঞান মুসলমানদের হাতে ছিল, যতদিন ইবনে সিনা, আল রাজি, ফারাবির মতো বিজ্ঞানী ও আলেমরা ছিলেন ততদিন সভ্যতার নেতৃত্ব দিয়েছেন মুসলমানরা।

এখনো যদি কোনো জাতি কুরআন আঁকড়ে ধরে অল্প সময়ের ব্যবধানে জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে পৌঁছে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পির সাহেব, আউলিয়ানগর

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম