Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার

Icon

ড. মো. গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার

দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার, ফাইল ছবি

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত যেমন ফরজ; স্ত্রীর দেনমোহর প্রদান করাও তেমন ফরজ। মানব ইতিহাসের মতো দেনমোহরের ইতিহাসও পুরোনো। বাবা আদম ও মা হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করে বেহেশতের মধ্যে তাদের বিয়ে পড়ানোর পর আল্লাহপাক বলেন, হে আদম! তুমি যতক্ষণ হাওয়ার দেনমোহর পরিশোধ না করবে ততক্ষণ তার কাছে যেতে পারবে না। হজরত নূহ (আ.), হজরত শিশ (আ.), হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত ইসমাইল (আ.), হজরত মুছা (আ.) থেকে শুরু করে সব নবি ও রাসূলের সময় দেনমোহরের প্রচলন ছিল। শেষ নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মতের ওপরও আল্লাহপাক দেনমোহর ফরজ করেছেন। আল্লাহ বলেন-তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের খুশি মনে দেনমোহর পরিশোধ কর। (সূরা নিসা-৪)।

আল্লাহপাক আরও বলেন তাদের মধ্যে (স্ত্রীদের) যাদের তোমরা সম্ভোগ করেছ তাদের দেনমোহর অর্পণ কর। (সূরা নিসা-২৪)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা ন্যায়সংগতভাবে তাদের দেনমোহর পরিশোধ কর।’ (সূরা নিসা-২৫)। দেনমোহর সম্পর্কে নবি করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো নারীকে কম বা বেশি দেনমোহরে বিবাহ করল আর সে অন্তরে স্ত্রীকে দেনমোহর আদায় না করার ইচ্ছা পোষণ করল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর দরবারে ব্যভিচারী হিসাবে উপস্থিত হবে। হুজুর (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি দেনমোহর নির্ধারণের মাধ্যমে কোনো নারীকে বিবাহ করে অথচ আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তি সম্পর্কে জানেন যে, তার অন্তরে স্ত্রীকে দেনমোহর আদায়ের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই, তাহলে সে আল্লাহর নামে ওই মহিলার সঙ্গে প্রতারণা করল এবং অবৈধভাবে তার লজ্জাস্থানের মালিক হলো, এ কারণে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে ব্যভিচারী হিসাবে উপস্থিত হইবে।’ (মসনদে আহমদ, সুনানে কুবরা, বায়হাকি)।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, দেনমোহর কত গুরুত্বপূর্ণ। যে দেনমোহর পরিশোধ করে না তাকে রাসূল (সা.) ব্যভিচারী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন অথচ আমাদের দেশে দেনমোহরের তেমন গুরুত্ব দিতে দেখা যায় না। অনেক স্ত্রী জানেনও না যে দেনমোহর তার অধিকার। বিপরীতে যৌতুক নামের অভিশাপ সমাজকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে-দেনমোহর ফরজ ইবাদত, বান্দার হক, যা আল্লাহ মাফ করেন না। তাই অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তবে দেনমোহর এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন স্বামীর পক্ষে তা আদায় করা সম্ভব হয়। স্বামী-স্ত্রীর সার্বিক অবস্থার দিকে লক্ষ রেখে তা নির্ধারণ করতে হবে। দেনমোহরের সর্বনিম্ন সীমা হচ্ছে ১০ দিরহাম কিন্তু সর্বোচ্চ কোনো সীমা নেই।

হালাল সব বস্তু দিয়ে দেনমোহর পরিশোধ করা যায়। নগদ অর্থ, বৃক্ষ, কাপড়, স্বর্ণ, রুপা, দেনমোহরের সমপরিমাণ মূল্যের জমি ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে; দেনমোহর শুধু স্ত্রীর অধিকার। তার বাবা-মা, ভাইবোনের কোনো অংশ এর মধ্যে নেই। অভিভাবকদের জন্য এ মোহরানা তছরুফ করা সম্পূর্ণ হারাম। বাসর রাতে দেনমোহর ক্ষমা চাওয়ার বিধান ইসলামে নেই। বাকিতে পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। সম্পূর্ণ পরিশোধ করা ভালো, অসুবিধা হলে বিবাহের সময় আংশিক পরিশোধ করবে অবশিষ্ট আস্তে আস্তে পরিশোধ করবে। সম্পূর্ণ মোহর সময় নিয়ে পরিশোধ করা যায়। সম্পূর্ণ মোহর পরিশোধ করার আগে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে না এ কথার ভিত্তি নেই। ভবিষ্যতে স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা যদি খারাপ হয়ে যায় তবে স্ত্রী ইচ্ছে করলে আংশিক বা সম্পূর্ণ মোহরানা ক্ষমা করে দিতে পারেন। হারাম বস্তু দিয়ে দেনমোহর পরিশোধ করা যায় না।

লেখক : পির সাহেব, খানকায়ে জাব্বারিয়ায়ে চিশতিয়া আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম