সুপ্ত প্রতিভা আল্লাহর সেরা দান
মোঃ আবদুল গনী শিব্বীর
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সুপ্ত প্রতিভা মহান আল্লাহর সেরা দান। বান্দাদের মাঝে যাকে ইচ্ছা তিনি এ সুপ্ত মেধা দান করেন। এ মেধার ধারকদের জন্য মহান প্রভু হৃদয়কে প্রশস্ত করে দেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন, আমরা কি আপনার বক্ষ আপনার কল্যাণে প্রশস্ত করে দেইনি? (সূরা ইনশিরাহ : ০১)। তিনি অন্য আয়াতে আরও বলেন, কাজেই যে ব্যক্তিকে আল্লাহ্ হেদায়াত দান করার ইচ্ছা করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। (সূরা আল-আন আম : ১২৫)।
সুপ্ত মেধা প্রদানের জন্য মহান আল্লাহ হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করেন, যেমনটি ঘটেছিল স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর বেলায়। এ প্রসঙ্গটি হাদিসে এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে, ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশে বাহ্যত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বক্ষ বিদারণ করে তাকে যাবতীয় পঙ্কিলতা থেকে পরিষ্কার করে তাতে জ্ঞান ও তত্ত্বকথা দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছিলেন। (মুসলিম : ১৬৪)।
এ ছাড়া আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে ‘আল্লাহতায়ালা যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। বস্তুত আমি শুধু বণ্টনকারী। আর আল্লাহতায়ালা আমাকে দান করেন। (বুখারি ও মুসলিম)।
সুপ্ত প্রতিভার জন্য দোয়া
নবি ও রাসূলদের জীবনীতে সুপ্ত মেধার জন্য দোয়ার আমল পরিলক্ষিত হয়। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত রয়েছে, মূসা (আ.) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কর্ম সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’ (সূরা ত্বহা, ২৫-২৮)। রাসূল (সা.) কে উপলক্ষ্য করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘(বলো) হে আমার প্রভু, আমার ইলম বৃদ্ধি করে দাও’ (সূরা ত্বহা)।
রাসূল (সা.) তার উম্মতদের সুপ্ত মেধার জন্য দোয়া করার পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করবে, হে আল্লাহ আপনি যা সহজ করে দিন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নেই। আর আপনি চাইলে পেরেশানিযুক্ত কাজও সহজ করে দিন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, ৯৭৪)।
যেভাবে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে
ব্যক্তির জীবনে সুপ্ত মেধার বা প্রতিভার বিকাশ ঘটতে পারে। সুপ্ত মেধার বিকাশ আল্লাহর ইচ্ছায় ব্যক্তির প্রচেষ্টায় হয়ে থাকে। সুপ্ত মেধা বিকাশের কতগুলো স্তর রয়েছে। সেগুলো হলো-
ফাহম (সাধারণ বুঝ বা মৌলিক ধারণা)
আল্লাহতায়ালা সব মানুষকে ফাহম দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সব মানুষ ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ করে তাই ‘ফাহম’। এক কথায় স্বাভাবিক বোধগম্যতাকে ফাহম বলে। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, অতঃপর আমরা সুলায়মানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমরা দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আর আমরা পর্বত ও পাখিদের দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম, তারা তার সঙ্গে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত, আর আমরাই ছিলাম এ সবের কর্তা। (সূরা আম্বিয়া : ৭৯)।
তাফাক্কুহ (হৃদয়ঙ্গম)
মানুষ স্বাভাবিক ফাহম বা মৌলিক ধারণা পাওয়ার পর মেধার সুপ্ততা প্রখরিত হয় তাফাক্কুহ-এর মাধ্যমে। তাফাক্কুহ বলতে যা বুঝায় তা হলো, যে কোনো বিষয়কে সুষ্ঠুভাবে হৃদয়ঙ্গম করা, অপরকে সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে বোঝাতে পারা। তাফাক্কুহ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর মুমিনদের সবার একসঙ্গে অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়।
অতঃপর তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে তারা সতর্ক হয়। (সূরা তাওবাহ : ১২২)।
তাফাক্কুর (চিন্তাভাবনা)
সুপ্ত মেধা বিকাশের সুচনা হলো তাফাক্কুর-এর পর্যায় থেকে। এ জন্য পবিত্র কুরআন সুন্নাহয় তাফাক্কুর বিষয়ে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার। (সূরা বাকারা : আয়াত : ২১৯)।
তাদাব্বুর (গভীর চিন্তা, গবেষণা)
সুপ্ত মেধার পরিচিত স্তর হলো তাদাব্বুরের স্তর। এ স্তরে যেসব ভাবুক বা গবেষক উপনীত হয়, সে ব্যক্তির সুপ্ত মেধার বিকাশ ধারায় স্ফূরণ ঘটে। সে ব্যক্তি অনুধাবন করতে পারে মহান রবের সেরা দানের কথা। কাজেই ওই ব্যক্তি গবেষণাকার্যে অনুপ্রাণিত হয়। তাদাব্বুর প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, তারা কি কুরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? (সূরা মুহাম্মাদ : আয়াত : ২৪)।
সুপ্ত প্রতিভার স্ফূরণ যেভাবে ঘটে
সব সময় সুপ্ত মেধার স্ফূরণ ঘটে না। দৃঢ় বিশ্বাস, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, তীব্র বাসনা ও মহান রবের অনুগ্রহের মধ্য দিয়ে বিশেষ মুহূর্তে সুপ্ত প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে। এ বিষয়ে আলী (রা.) বলেন, ‘বিশ্বাসের চার স্তর : সূক্ষ্মদর্শিতা, প্রজ্ঞার বিশ্লেষণ, অভিজ্ঞতা লাভ ও পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি। যে সূক্ষ্মভাবে কিছু বিশ্লেষণ করল সে প্রজ্ঞার ব্যাখ্যা জানতে পারল। যার প্রজ্ঞা লাভ হলো যাচাই-বাছাই ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেল। অভিজ্ঞতাই পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ দেয়।’ (তারিখু মদিনায় দামেস্ক : ৪২/৫১৫)।
আকলে সালিম বা সুস্থ বিবেক বা বিবেচনাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি সঠিক জ্ঞানচর্চা, গবেষণার মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটান। তার এ বিকশিত মেধা মনন মানবকল্যাণে উৎসর্গিত হয়। ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে সুপ্ত মেধার ধারক ও বাহক ব্যক্তিরা প্রভূত কল্যাণ লাভ করে। আল্লাহপাক তাদের সম্মানিত করেন।
লেখক : মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদ্রাসা,
সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী