‘খবরের ফেরিওয়ালা’ থেকে ইউপি সদস্য চম্পা
পবিত্র তালুকদার, চাটমোহর (পাবনা)
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে স্কুটি চালিয়ে শহর পানে ছোটেন জান্নাতুল সরকার চম্পা। আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌাঁছান শহরে। স্কুটির সামনে-পেছনে পত্রিকা নিয়ে শহর ঘুরে ঘুরে পত্রিকা বিলি করেন প্রতিদিন। এভাবেই পাড়ি দিয়েছেন সতেরো বছর। একটা সময় চম্পার পরিচয় ছিল ‘খবরের ফেরিওয়ালা’। কিন্তু সেই পরিচয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘ইউপি সদস্য’।
যে বয়সে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করার কথা, সেই বয়সে প্রতিদিন তাকে ছুটে বেড়াতে হয় শহর ও গ্রামের অলিগলিতে। পত্রিকা বিক্রি করে যা উপার্জন করেন সেই টাকায় মা-ভাইয়ের সংসারের দেখভাল করেন তিনি। সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে স্বামী পরিত্যক্তা এই নারীকে। এলাকার মানুষ তাকে ভালোবেসে ইউপি সদস্য করলেও সেখানেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে হতাশ হতে হয়েছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মল্লিকবাইন গ্রামের মৃত ইছাহক আলীর মেয়ে চম্পাকে। বর্তমান ঘুণে ধরা সমাজে একজন অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন চম্পা। অন্য আর দশজন নারীর কাছে তিনি এখন অনুপ্রেরণার নাম।
জানা গেছে, জান্নাতুল সরকার চম্পার বাবা ইছহাক আলী ছিলেন ইউপি সদস্য। ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কিছু একটা করবেন এবং নিজে স্বাবলম্বী হবেন এই আশায় একটি চাকরির খোঁজ করতে থাকেন চম্পা। ২০০২ সালে ঈশ্বরদীর আলহাজ টেক্সটাইল মিলে নিরাপত্তা বিভাগের হাবিলদার হিসেবে চাকরি নেন। ২০০৫ একই উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামে জনৈক এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় চম্পার। বিয়ের পর বেশ ভালোই চলছিল সংসার। এরপর সেই চাকরি ছেড়ে একটি বীমা কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। তবে বছর না পার হতেই স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিচ্ছেদ হয়। চম্পা চলে আসেন বাবার বাড়িতে।
জান্নাতুল সরকার চম্পা যুগান্তরকে বলেন, নিজের জীবনের সংগ্রাম দেখেই বুঝেছি একজন নারীর কত ধরনের সমস্যা। বাস্তবতা আমাকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বরাদ্দে একজন পুরুষ ও নারী ইউপি সদস্যের মধ্যে বৈষম্য করা হয়। যা মোটেই কাম্য নয়। তবে, আমিও হাল ছাড়তে রাজি নই। আমি অধিকার বঞ্চিত নারীদের নিয়ে কাজ করতে চাই।