কৃষকের ভরসা ফসলের ডাক্তার
মো. রইছ উদ্দিন, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নারী দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন।’ সমাজের অবহেলিত-নির্যাতিত ও নিপীড়িত নারীদের ভাগ্য বদলে নারীরা কাজ করছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। বর্তমানে এ উপজেলায় ফসলের ডাক্তার হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন রোকেয়াসহ কয়েক নারী। কৃষাণ-কৃষাণীদের ভাগ্যের চাকা বদলে দেওয়ার সংগ্রামে নিয়োজিত তারা। পরিত্যক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন, ফসলের রোগবালাই দমন ও বসতবাড়িতে পরিকল্পিত সবজি চাষের জন্য ছুটছেন বাড়ি বাড়ি। তারা সবাই এ্যাডরা বাংলাদেশের কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে কর্মরত নারী কর্মী। নার্স বা ডাক্তারের মতো সাদা অ্যাপ্রোনে ছুটে চলেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ঘরে-বাইরে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে দিনরাত পরিশ্রমী এ নারী কর্মীরা এলাকায় এখন ‘ডাক্তার আপা’ নামে পরিচিত। প্রকল্পের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বাবুল সি গমেজ জানান, উপজেলার বোকাইনগর, রামগোপালপুর, অচিন্তপুর, মইলাকান্দা, গৌরীপুর সদর, মাওহা, ডৌহাখনা ও সহনাটী ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রামে এ নারী কর্মীরা কাজ করছেন। আইল ফসল উৎপাদন করে ভাগ্যের চাকা বদলে দিয়েছেন ৩২৮ জন গৃহিণী। তাদেরই একজন মিনা বেগম। তিনি উল্লয়াকোনার শাহ জাহান মিয়ার স্ত্রী। নিজ জমির আইলে প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ করে ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করেছেন তিনি। আরও ৭-৮ হাজার টাকা আয় হবে বলে তিনি জানান। অতিরিক্ত এ আয়ে মিটে যাচ্ছে দুই সন্তানের স্কুলের খরচ। রামগোপালপুরের আব্দুল্লাহর স্ত্রী ফাতেম খাতুন জানান, তিনি আইলে ফসল উৎপাদন করে বেশ লাভবান হয়েছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। পুকুরপাড়ে সবজি চাষে সাফল্যের সন্ধান মিলেছে মইলাকান্দা ইউনিয়নের লামাপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী পারভীন বেগমের। রামগোপালপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজার (সিডিও) সীমা রানী দে জানান, যতদূর চোখ যায়, ততদূর আমরা ধান খেতে সবজির দেওয়াল করে দিয়েছি। এ অঞ্চলের কৃষকদের সহযোগিতায় গৃহিণীরা অতিরিক্ত মুনাফা পাচ্ছেন। অনুন্নয়ন আর পিছিয়ে পড়া এসব পদ্ধতিতে ৬৫৪ জন নারী আজ খুঁজে পেয়েছেন ক্ষুধা আর দরিদ্রতা বিমোচনের নতুন পথ। এবার জলাবদ্ধতায় সবজি চাষের নতুন এক পদ্ধতির নাম ‘টাওয়ার’ পদ্ধতি। এ পদ্ধতি বিস্তারে নারী কর্মীরা ছুটে চলছেন বন্যা ও জলাবদ্ধ এলাকায়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্যাকবলিক বা বর্ষা মৌসুমে কৃষকরা পানিতেই সবজি চাষ করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বলেন, কৃষককে নতুন ফসলের স্বপ্ন দেখাবে ‘টাওয়ার’। এ পদ্ধতি ছড়িয়ে গেলে পরিত্যক্ত জমিতে অতিরিক্ত ফসলও উৎপাদন হবে। নারীদের ভাগ্যবদলের এ কাজে নিয়োজিত আছেন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজার হাওয়া আক্তার, শিখা দেবনাথ, নাদিমুল হাসান, শিরিনা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার, হাফিজা খাতুন, মালা বসাক, তানজিলা তাবাসসুম, লাজিতা চাম্বুগং, সুব্রত সরকার, দুলাল মিনজী, কমিউনিটি ওয়ার্কার সোমা দে, মৌসুমী সাহা, শিমা আক্তার, দ্বিপালী দাস, লিমা আক্তার, কানিজ ফাতেমা, ফাহিমা খাতুন, জান্নাতুল ইসলাম, তানিয়া আক্তার।