আমি তখন গোয়েন্দা গল্প পড়তে পড়তে আর টিভিতে গোয়েন্দা সিরিজ দেখতে দেখতে নিজেকে আধা গোয়েন্দা ভাবতে শুরু করেছি। কোথাও কোনো ক্লু পেলেই চারপাশের মানুষদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাই। সামান্য দড়ির মাথা দেখলে সেটাকে বাঘের লেজ ভেবে টেনে টেনে পুরো বাঘ বের করে আনার চেষ্টা করি। ভাবটা এমন যেন রাস্তায় পড়ে থাকা পোড়া ম্যাচের কাঠি থেকেই আবিষ্কার করে বসব মিসরের পিরামিড রহস্য বা গোয়ান্তানামা কারাগারের প্রবেশ মুখ।
একদিন নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পাশের বাড়ির গোলাপ মামাদের বাসায় গেলাম। গোলাপ মামা তখন পড়ছিলেন। অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা।
মামার পাশে বসে দু’একটা কুশল বিনিময়ের পর চোখে-মুখে সন্দেহের ছাপ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মামা, রোজীর সঙ্গে আপনার কত দিনের সম্পর্ক?’
মামা হঠাৎ থমকে যাওয়ার মতো মুখ কাঁচুমাচু করে হালকা হেসে উলটো আমাকেই প্রশ্ন করলেন, ‘কার কাছে শুনেছিস রোজীর কথা?’
আমি বললাম, ‘তা পরে বলব, আগে বলুন রোজীর সঙ্গে আপনার কত দিনের সম্পর্ক?’
মামা এবার বলা শুরু করলেন, ‘মেয়েটার সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয়। প্রথমে বন্ধুত্বের মতো ছিল সম্পর্কটা। পরে ধীরে ধীরে ডিপ আইমিন গভীর হলো। এখন ওকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না। জানিস, কিছুদিন আগে আমাদের বাসার সবাই দুদিনের জন্য ছোট খালার বিয়েতে অ্যাটেন্ড করতে গিয়েছিল। তখন রোজী এসে আমার জন্য দুপুর আর রাতের খাবার রান্না করে রেখে গেছে। ওর হাতের রান্না যে কী মজার!’
‘আর কী কী মজার মামা?’
মামা এবার ধমকে উঠলেন, ‘চুপ থাক, ফাজিল কোথাকার...!’
‘বাড়ির অন্যরা কি জানে রোজী মামির বিষয়টা?’
‘তা কি এখনই বলার বিষয়! আগে পড়াশোনা শেষ করি, চাকরি পাই, তারপর সবাইকে জানাব। ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করব। বরযাত্রীর গাড়িতে তোকেও রাখব পাশে। এবার বল রোজীর সম্পর্কে কার কাছ থেকে জেনেছিস?’
আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম, ‘আপনার রুমে ঢোকার সময় দরজার ওপর চৌকাঠে দেখলাম পেন্সিল দিয়ে ইংরেজিতে ছোট করে লিখে রেখেছেন রোজী। আর-ও-এস-ই।’
মামা মুখ ভেংচে বললেন, ‘ধুত্তরি ছাই, ওটা তো রৌজ। আর-ও-এস-ই, রৌজ। মানে গোলাপ। মানে আমার নাম। রৌজকে পড়েছিস রোজী! তোর ইংরেজির অবস্থা তো দেখছি যাচ্ছেতাই!’
অপমান গায়ে না মেখে বললাম, ‘যাক, এখন তো আমি রোজী মামির কথাও জেনে গেছি। চাইলে যখন-তখন, যাকে-তাকে বলতে পারব। সার্থক আমার গোয়েন্দাগিরি।’
মামা রাগের সুরে বললেন, ‘সাবধান! কাউকে যদি বলিস এমনভাবে পেটাব চোখে-মুখে সর্ষেফুল না দেখে রোজ দেখবি!’
হারুয়া, কিশোরগঞ্জ