মলাট বৃত্তান্ত
আমাদের হোয়াইট হাউসে তিনি বেড়াতে আসবেন
কত্ত বড় সাহস! তুই আমার কাছে ট্যাকা চাস? জানিস, ট্রাম্প আমার মামাতো ভাইয়ের খালুর দূরসম্পর্কের আপন জ্যাঠা শ্বশুরের বন্ধু! * বস কি তাইলে ডলারে পেমেন্ট করবেন?
শফিক হাসান
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রুহিতনপুরের আকাশে, বাতাসে, জমিনে বর্তমানে একটাই গবেষণা-ট্রাম্প কেন জিতলেন, কমলা কেন হারলেন! জাতীয় রাজনীতি থেকে এরা আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষণে এত দ্রুত হয়তো যেত না; লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করে দিয়েছে রুহিতনপুর গ্রামের পুরোনো দম্পতি।
কাবিল হোসেন বরাবরই কোনো কারণ ছাড়াই ট্রাম্পের অন্ধভক্ত। ট্রাম্প নির্বাচনে প্রার্থী হলেই কাবিল ফেসবুক স্ট্যাটাসে দিয়ে হলেও ভোট চায়। অন্যদিকে জরিনা আক্তার বরাবরই নারীর ক্ষমতায়নকামী। আগেরবার হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন দিয়ে, সে নিজের মান-সম্মান নামক জামানত খুইয়েছে, এবারও পরিস্থিতি অনুকূলে এলো না! জরিনা চেয়েছিল কমলা জিতে টুকটুকে আপেল হয়ে যাক। কমলা জিতলে তার সঙ্গে পান-সুপারি খেতে খেতে গল্পগুজব করা যেত না সত্য, মনে তো শান্তি আসত। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের শুরু থেকেই কমলার নিকটতম প্রচার-প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল নিজ স্বামীই। কাবিল কায়মনোবাক্যে চেয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতুক। তাই ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পরপরই আনন্দের আতিশয্যে এলাকায় পোস্টারিং করে কাবিল।
বিশাল ব্যবধানের ভোটে বিজয়ী হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইকে অভিনন্দন!
জরিনা বোঝানোর চেষ্টা করল, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ঘায়েল করার জন্য এটাও বলল, ‘আমারে শাড়ি-গয়না দিবার পারো না, ঠিকই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ছবি দিয়া পোস্টার ছাপাইতে পারো! কারচুপি হইছে, সঠিক ভোট অইলে কমলা আপারই জিতনের কতা!’
মাথা ঠাণ্ডা রেখেই কাবিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, ‘বেশি বুঝস? কমলায় যেইডা কয় নাই, তুই কস ক্যা?’
‘মুকে কইব ক্যান! বেডি আমার মতো ভালা মানুষ বইলা চুপ মাইরা আছে। অধিক শোকে পাত্থর।’
বউয়ের মনোজ্বালাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে কাবিল গুনগুন গান ধরে-‘তোমরা দেখো গো আসিয়া/ কমলায় নৃত্য করে থমকিয়া থমকিয়া...’।
‘খাড়াও, তোমার গান বাইর করতাছি।’
কাবিল হাসে, ‘রাগস ক্যান! তোর নামেই আছে ‘না’, জরি-না। কমলার নামের লগে আছে ‘হারিস’। তোরা পারবি ক্যামতে?’
পেরে না উঠে জরিনা সমবেদনা জানিয়ে কমলাকে চিঠি লেখে।
প্রিয় কমলা বুবু,
মনে দুঃখ নিয়েন না। জীবনে হার-জিত থাকবই। আমিও কি সংসারে হারছি না? হাড়-মাংসরে কিমা বানাইতেছি। মন খারাপ কইরা লাভ নাই। আমরা এক থাকলে একদিন জিতমুই। বেডা মাইনষেরা আমগোরে দিয়া আর কতদিন হান্ডি-পাতিল ঠেলাইব! আপনে কী তরকারি রাঁনতে পছন্দ করেন, জানাইয়েন।
ইতি-
আপনের ছোড বইন
জেরিন ওরফে জরি
জরিনা খাম কিনে আনতে বলায় কাবিল চিঠিটা পড়ে দেখতে চায়। ওর বদনাম আছে কিনা! চিঠি দেখেই মাথা গরম হয়, ‘বাংলায় লেখছস ক্যান, তোর আপায় বাংলা-শিক্ষিত নাকি?’
বিষয়টা আগে মাথায় আসেনি। জরিনাও ইংরেজি জানে না। এখন উপায়!
মাথা ঠাণ্ডা হলে কাবিল বলে, ‘চিডি অনুবাদ কইরা পাডাইতে অইব। তবারকগঞ্জে কম্পিউটার কম্পোজের দোকান আছে। তারা অনুবাদও কইরা দেয়। আমি ব্যবস্থা করতাছি।’
অনুবাদ করিয়ে আনার পর আরেকটা সমস্যা দেখা গেল। আপার ঠিকানা কেউই জানে না! বিকল্প হিসাবে জরিনা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছোটভাই কুতুবের শরণাপন্ন হলো। সে যেন ছুটির দিনে চিঠিটা আপুর হাতে হাতে দিয়ে আসে। কুতুব জানায়, তার ছুটি বা ভিসা কোনোটাই নেই।
বউ মুষড়ে পড়লে কাবিল দয়াপরবশ হয়ে বলে, ‘তুই নিজেই আমেরিকার ভিসা নিয়া নে। আপার লগে দেখা কইরা আইলি আর ট্রাম্প ভাইয়ারে আমার শুভেচ্ছাও পৌঁছাইয়া দিলি!’
প্রস্তাবটা পছন্দ হয় জরিনার। নিজেই যাবে তবারকগঞ্জের দোকানে। উপকারি সংসারবন্ধু কাবিলকে খুশি করার জন্য বলে, ‘দেখ না ট্রাম্প ভাইরে দিয়া তোমার টেইলারের দোকানের কোট-প্যান্টের মডেলিং করাইতে পার কিনা। তাইলে দেশ-বিদেশের ম্যালা কাস্টমার পাইবা।’
বুদ্ধিটা পছন্দ হয় কাবিলের। ডোনাল্ড ট্রাম্প মডেলিংয়ের অফার গ্রহণ করলে ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠবে দ্রুত।
এ প্রথমবারের মতো স্বামীর সঙ্গে জরিনাও ট্রাম্পকে পছন্দ করা শুরু করে। গ্রামে-গঞ্জে পোস্টারিং করেছে কাবিল, এটা ইউটিউবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে পড়লে প্রস্তাবে হয়তো না করবেন না। মনোবিধানের বাইরে এসে জরিনা প্রস্তাব দেয়-আমেরিকার হোয়াইট হাউসের সঙ্গে মিলিয়ে তারাও সাদা বাড়ি বানাবে। তারপর ট্রাম্প ভাইকে ডাল-ভাতের দাওয়াত দেবে। তিনি এলে সাদা বাড়ি ও মডেল হওয়া দোকানের ফিতা কাটবেন একদিনেই। প্রেসিডেন্টের সময়ের দাম আছে না!
ভালো মনে করে ওরা ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের সঙ্গেও বিষয়টা শেয়ার করে। কিন্তু লোকজন বাহ্বা দেওয়ার বদলে উলটা মুখ লুকিয়ে হাসে। এবার যৌথ তেলে-নুনে না পুড়ে উপায় থাকে না আমেরিকাপ্রেমী দম্পতির। তাদের অভিন্ন বক্তব্য-আমাদের সাদা বাড়িতে যদি ট্রাম্প ভাইয়া বেড়াতে আসেন, তোদের সমস্যাটা কী?