মলাট বৃত্তান্ত
ব্যয় বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর নিনজা টেকনিক
মো. রায়হান কবির
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাবু সাহেব সবসময় হিসাব করে চলেন। প্রতি কদমে কদমে তার হিসাব। যে কোনো দিকে যাওয়ার আগে ১০ বার হিসাব করেন; সবচেয়ে শর্টকার্ট পথ কোনটা? কারণ বেশি হাঁটলে বেশি ঘাম ঝরবে, তাতে শার্ট দ্রুত ধুতে হবে। এতে করে বেশি বেশি ডিটারজেন্ট লাগবে, শার্ট বেশি ধুলে দুর্বল হয়ে যাবে। এক কথায় সবদিক দিয়ে লোকসান। সুতরাং, বাবু সাহেবের লাইফস্টাইল দেখে অনেকে তাকে কৃপণ ভাবলেও তার ছেলেদের কাছে কিন্তু তিনি হিরো। কারণ, খরচ কমানোর মতো অনন্য আইডিয়া তারচেয়ে বেশি কেউ জানত না। আর তার সন্তানরা সেটা সামনে থেকে অবলোকন করত বলে তারা বাবাকে কখনোই কিপ্টে মনে করত না। আর এভাবেই তাদের জীবন লিভিং লিজেন্ডকে নিয়ে অতিবাহিত হচ্ছিল।
একটা সময় বাবু সাহেবের ছেলেরা বিয়ের উপযুক্ত হলো। বিয়ে প্রায় ঠিক। শুধু বিয়ের আয়োজন নিয়ে আলোচনা বাকি। বাবুল সাহেব যৌথ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব দিলেন এবং সে আয়োজনের দায়িত্ব নিজেই নেওয়ার কথা বললেন। আলোচনা চলছে, এমন সময় বাবু সাহেব বললেন, ‘বিয়েতে কমপক্ষে ১ হাজার লোকের আয়োজন হতে হবে।’
মেয়ের বাবা বললেন, ‘বাবু ভাই, আপনার আর আমার দু’পক্ষ মিলিয়ে ৫০০ লোকও তো হবে না, তাহলে শুধু শুধু এত লোকের আয়োজন কেন?’
বাবু সাহেব ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘আজকাল বাজেট দিয়ে কিছু হয়? ধরুন যাদের দাওয়াত দিলেন, তারা সঙ্গে করে আরও কোনো লোক নিয়ে এলো, আপনি তাদের না খাইয়ে পারবেন? তাছাড়া আয়োজন বেশি থাকলে সমস্যা নেই, কিন্তু কম পড়লে কোথায় পাবেন?’
মেয়ের বাবা বিয়াই সাহেবের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করতে পারলেন না। বেশি লোকের আয়োজনে মত দিলেন। দু’পক্ষ সমান সমান খরচ বহন করবে। অর্থাৎ ৫০০ লোকের খরচ একেক পক্ষ বহন করবে।
বাসায় ফিরে ছেলে বাবু সাহেবকে জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, শুধু শুধু এত লোকের আয়োজন কেন করবে? কী দরকার খাবার নষ্ট করার?’
বাবু সাহেব বললেন, ‘শোন, তোদের কথায় চললে ঢাকা শহরে আর চতুর্থতলা বিল্ডিং করা হতো না আমার। সামাজিক কারণে যৌতুক নিতে পারছি না। অন্তত বিয়ের খরচটা যদি ওদের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া যায় তো মন্দ কী? আয়োজন ৫০০ লোকেরই হবে এবং ওদের খরচেই হবে। আমার খরচ আর করতেই হবে না!’ ছেলে তার বাবার নিনজা টেকনিক বুঝে গেল। বলল, ‘বাবা, তুমি তো রাজনীতি করলেই পারতে, খরচ বাড়িয়ে কীভাবে নিজের আয় বাড়ানো যায়, সেটা তোমার চেয়ে ভালো রাজনৈতিক নেতারাও পারবে না!’
বাবু সাহেব বললেন, ‘বাবা রে সংসার চালানো রাজনীতির চেয়ে কম না, এখানে তোর মায়ের মতো বিরোধীদল, তোদের ভাইবোনের মতো কর্মী বাহিনী যারা মিনিটে মিনিটে স্বার্থের কারণে কখনো আমার দলে কখনো মায়ের দলে পল্টি মারিস-আমার আর রাজপথে গিয়ে রাজনীতি করার কোনো দরকার আছে?’
ছেলে এবার বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করে বলল, ‘বাবা, আমরা উত্তরাধিকার রাজনীতি বিশ্বাস করি না, তবে নতুন সংসার শুরুর আগে তোমার রাজনীতির ঝাণ্ডা বহন করে নিতে চাই।’
বাবু সাহেব মনে মনে হাসলেন। জীবন হচ্ছে টেকনিক করে চলার আরেক নাম। কর্মক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে সংসারে-সর্বত্র ব্যয় বাড়িয়ে আয় না করতে জানলে উন্নতি করা যায় না। টেকনিকটা ধীরে ধীরে ছেলেরাও শিখছে-এর চেয়ে আনন্দের আর
কী আছে!