সদ্য ঘোষিত এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে অটোপাশের দাবিতে। তাদের দাবি নিয়ে আমাদের কথা নেই। আমাদের কথা পাশাপাশি সমাজের আরও মানুষকেও অটোপাশ দেওয়া উচিত। মানবিক কারণে এই প্রথা জোরদার করতে হবে। অটোপাশের প্রকৃত দাবিদার অন্যদের নিয়েও থাকছে বিস্তারিত। সুপারিশ করছেন জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে অটোপাশ করা ভাবুক বিজ্ঞানী শফিক হাসান
লটারির টিকিট ক্রেতা
যদি লাইগ্যা যায়- চল্লিশ লাখ টাকা! এ চল্লিশ লাখ টাকার লোভে লটারির টিকিট কিনেছেন এমন মানুষ লাখে লাখে। তাদের ক’জন শেষ পর্যন্ত লাখ টাকার কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন? এটি বড় প্রশ্ন। বিষয়টি মানবিকও বটে। চাইলে অটোপাশের মতো দশ টাকার লটারির টিকিট ক্রেতা সবাইকে চল্লিশ লাখ টাকা করে দিয়ে দেওয়া সম্ভব। যেহেতু টাকার জোগান দেবেন গৌরী সেন। সমস্যা হচ্ছে, সবাই গৌরী সেনের নাম জানলেও ঠিকানা জানেন না একজনও!
বাসের কন্ডাক্টর
নিয়ম-শৃঙ্খলা যতভাবেই বেঁধে দেওয়া হোক- ঢাকার বাস কন্ডাক্টররা বধিরের ভূমিকায় অভিনয় করবে। কিছু শুনেও শুনবে না, দেখেও দেখবে না, জেনেও জানবে না। এদেরও এক ধরনের অটোপাশ দেওয়া জরুরি। বিশেষ করে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিলেও পরক্ষণে এসে আবার ভাড়া চায়। বাড়তি ভাড়া দাবির ক্যাচালও পুরোনো। কন্ডাক্টরদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধির বটিকা দেওয়া উচিত। পাশাপাশি তোতা পাখির মতো মুখস্থ করা ‘হাফ পাস নাই’ কথাটাও তাদের ভুলিয়ে দিতে হবে। অটোপাশ না করার প্রভাবে কেউ কেউ ‘পাস’ বানানকে ‘পাশ’ লিখতে উদ্বুদ্ধ করে। এটিও রদ করা সময়ের দাবি।
ঘটক
ঘটকের চোখ থাকে হাটে-মাঠে-ঘাটে। যে কারণে তারা বিবাহযোগ্য পুত্রকন্যার হদিস রাখতে পারেন। আবার কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা, পুত্রদায়গ্রস্ত মাতারাও এদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। ঘটক তাই তিলকে তাল বানিয়ে দুশ্চরিত্র কাউকে ‘চরিত্র ভালো’ সনদ দেন অকাতরে। এসবে ভ্রুকুটি করে লাভ নেই। ঘটক সম্প্রদায়কে অটোপাশ দেওয়া জরুরি, যারা মাধ্যমে বোঝানো যায়-এরা যাই করুন ভুল খোঁজা চলবে না। সত্য-মিথ্যার সংজ্ঞাও এদের ভাষ্যের আলোকেই নির্ধারণ করতে হবে।
পরচর্চাকারী
পরনিচর্চার চেয়ে বড় কোনো বিনোদন বোধহয় নেই বাংলাদেশে। অথচ এটাকে কেউ কেউ তির্যক দৃষ্টিতে দেখেন। অন্যের খোঁজখবর রাখার মতো বড় মন কিন্তু সবার থাকে না। পাশের বাসার ভাবি অবসরে কার সঙ্গে প্রেম করেন, এমন খবর যিনি আত্মস্থ করতে পারেন তার চেয়ে বড় শুভানুধ্যায়ী আর কে! এভাবে কোনো বাড়ির কর্তার বদদৃষ্টি এমন খবর ছড়াতেও ভোলে না ছেলে-বুড়ো মেয়ে-বুড়িরা। এমন সবাইকে ‘অটোপাশ ইউনিভার্সিটি’ থেকে অনারারি ডিগ্রি প্রদান অবশ্য করণীয়।
আধুনিক কবি
আধুনিক কবিদের শুধু অটোপাশ দিলেই চলবে না, ফটোপাশও দিতে হবে। যেহেতু অনেকেই প্রচার কাঙাল, তাই ফটো প্রচারের মাধ্যমে যেন নামধাম ছড়িয়ে যায় বহুদূরে। তাদের প্রায়ই নিজেদের লেখাজোকা নিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয়। এটিও বলতে হয়, ‘দুর্বোধ্যতা বলে কিছু নেই। ইদানীং মূর্খ মানুষও কবিতা পড়ছে। মূর্খদের জন্য কবিতা পাঠ নিষিদ্ধ করতে হবে। এতে কবিতার অসম্মান হয়। তালুকদার কবিও যথাযোগ্য মর্যাদাবঞ্চিত হচ্ছেন।’ এমন ভাষ্য সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে-তাই এমন অটোপাশ জারিও সময়ের দাবি।
বাংলা সিনেমার দর্শক
অল্প কিছু সিনেমা হল এখনো টিকে আছে। আবার ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার কারণে দর্শক কমেছে। এমন অবস্থায় বিশেষ ব্যবস্থায় সিনেমার দর্শক সমাগম বাড়ানো যায়। সিনেমার নামে পরিচালকরা যাই নির্মাণ করুন না কেন, সহানুভূতির সঙ্গেই দেখা উচিত। হলে গিয়ে যেসব দর্শক ঘুমিয়ে পড়েন, তাদের জন্য রাখতে হবে মনোলোভন আয়োজন। ঘুম না আসার জন্য পরিচালক-প্রযোজক সমিতির পক্ষ থেকে ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে। সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার-দাবার। খাবার চিবাতে থাকলে ঘুম আসার সুযোগই পাবে না!