Logo
Logo
×

বিচ্ছু

রম্যগল্প

মোরগ কেনা

Icon

হানিফ ওয়াহিদ

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মোরগ কেনা

মিটারে মুরগির ওজন মাপা হচ্ছে। মূল্য ধরা হচ্ছে দুইশ চল্লিশ টাকা কেজি। বললাম, ‘ভাই, মুরগির মূল্য তো আপনি বলে দিয়েছেন দুইশ ত্রিশ টাকা, চল্লিশ টাকা ধরছেন কেন?’

দোকানি বলল, ‘মুরগি এই আপা নিবেন। উনি দুইশ চল্লিশ টাকা রাজি হয়েছেন।’

‘আপনি তো আমাকে দুইশ ত্রিশ টাকায় দেবেন বলেছেন! এখন এই আপাকে দিতে চাচ্ছেন কেন?’

‘আপনি অন্যটা নেন। ত্রিশ টাকা-ই দিয়েন।’

‘অসম্ভব! এই মুরগিটাই আমার লাগবে। প্রয়োজনে আমি চল্লিশ টাকাই দেব।’

পাশের মহিলা বললেন, ‘এই মুরগি আমি দাম করেছি, এটা আমার লাগবে। আপনি অন্যটা নেন।’

‘ম্যাডাম, এই মুরগি আগে আমি পছন্দ করেছি। দোকানি ত্রিশ টাকায় রাজি হয়েছিল, আপনি এসে প্যাঁচ লাগিয়ে দিয়েছেন, চল্লিশ টাকায় রাজি হলেন কেন?’

‘আমার খুশি চল্লিশ টাকায় রাজি হয়েছি। আপনি রাস্তা মাপেন!’

‘আপা, একা একা তো রাস্তা মাপা যাবে না, আপনাকেও সঙ্গে গজ ফিতা ধরতে হবে! সঙ্গে গজ ফিতা এনেছেন? আসেন মাপা শুরু করি!’

মহিলা আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘অভদ্র!’

দোকানি ছেলেটা মুরগির চামড়া টেনে আলাদা করছিল। মহিলা ছেলেটাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘মুরগির দাম আমি দুইশ পঞ্চাশ টাকা দেব, মুরগি আমার চাই!’

আমি বললাম, ‘এই খবরদার, যদি মুরগি কাউকে দিবি, আমি তোর ঠ্যাং কেটে আলাদা করে ফেলব! তারপর তোর ঠ্যাংয়ের জায়গায় হাত, হাতের জায়গায় ঠ্যাং লাগিয়ে দেব। তুই জানিস আমি কে? আমি মুরগির দাম দুইশ ষাট টাকা কেজি দেব, তুই মুরগি আমাকে দে। আজ যদি এ মুরগি আমি না পাই, রক্তারক্তি হয়ে যাবে তবু মুরগি কাউকে দেব না। বউয়ের আদেশ বলে কথা!’

ধমক খেয়ে ছেলেটা বলল, ‘আপা, মুরগি এই ভাইজানকে দেই, আপনে অন্যটা নেন।’

‘আচ্ছা দে। এই লোক বোধহয় লাট সাহেবের নাতি। আমি আমার জীবনে এমন বউপাগল লোক দেখি নাই! কেন যে এসব পাগল-ছাগল বাজার করতে আসে!’

‘আপা, আমাকে পাগল-ছাগল বললেন, এখন যদি কামড়ে দিই?’

মহিলা চলে যাচ্ছিলেন। আমি বললাম, ‘মুরগি আমি নেব না, আপনি নেন।’

মহিলা ফিরে আসতে আসতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এখন মুরগি নেবেন না কেন? আপনিই নিন।’

‘এই মুরগি আপনি পছন্দ করেছেন, এখন বাসায় গিয়ে এই মুরগি রান্না করলে খেয়ে স্বাদ পাওয়া যাবে না, সিদ্ধ হবে না। আপনার বদনজর লেগেছে!’

মহিলা ফিক করে হেসে দিলেন।

ছেলেটা মুরগির দাম সত্যি সত্যি দুইশ ষাট টাকা ধরেছে। আমি বললাম, ‘চড় মেরে তোর তেত্রিশ দাঁত ভেঙে ফেলব হারামজাদা! তুই আমার কাছে মুরগি দুইশ ত্রিশ টাকা কেজি বিক্রি করেছিস, সেই দাম রাখ।’ ছেলেটা ভয় পেয়ে দুইশ ত্রিশ টাকা দামেই মুরগি ছেড়ে দিল।

বাজারে আসার সময় বউ পইপই করে বলে দিয়েছে, ‘খবরদার! ভুলেও কিন্তু মুরগি আনবে না, মোরগ আনবে, মুরগি আমার দুচোখের বিষ, সহজে সিদ্ধ হয় না। স্বাদও কম।’

আমি বললাম, ‘আচ্ছা, একটা কথা বল তো, এই যে স্ত্রী জাতি হয়ে আরেক স্ত্রী জাতিকে অপছন্দ কর, কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?’

বউ অবাক হয়ে বলল, ‘কী বলতে চাইছ?’

‘মোরগ হলো পুরুষ জাতি, মুরগি হচ্ছে স্ত্রী জাতি। নিজে স্ত্রী জাতি হয়ে আরেক স্ত্রী জাতিকে অপছন্দ কর, দিস ইজ আনফেয়ার!’

‘তোমার পছন্দ হলে তুমি এনো, তোমাকে নিষেধ করল কে? ভুলেও আমার জন্য মোরগ ছাড়া অন্য কিছু আনবে না।’

‘তুমি নিশ্চিত থাক, আমি মোরগই আনব, ভুলেও মুরগি আনব না। আমি শুধু মুরগির স্ত্রী জাতি কেন, কোনো স্ত্রী জাতিকেই পছন্দ করি না!’

বউ আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইল!

তরকারি কেনা শেষে মুরগির দোকানে এসেছিলাম। মোরগ পাওয়া যায় না, সব দোকানে মুরগি। মোরগ আগেই বিক্রি হয়ে যায়, দামও মুরগির চেয়ে দশ-বিশ টাকা কেজিতে বেশি।

অবশেষে একটা দোকানে পাওয়া গেল। তার কাছে মাত্র একটা মুরগি এবং একটা মোরগ আছে। আমি বললাম, ‘ভাই, মোরগের দাম কত কেজি?’

দোকানি বলল, ‘দুইশ চল্লিশ।’

বললাম, ‘দুইশ ত্রিশ টাকা রাখা যায় না?’

দোকানি তখন বলল, ‘ভাই দাঁড়ান, হাতের কাজটা শেষ করি, তারপর আপনাকে দেই।’

আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম। মাঝখানে এসে সেই মহিলা দুইশ চল্লিশ টাকা দিয়ে সেই মোরগ কিনে নিয়ে যাচ্ছে! মহিলা চলে যাচ্ছে। আমি পেছন থেকে ডেকে বললাম, ‘একটা ধন্যবাদ অন্তত দিয়ে যান। আমার কারণে কতগুলো টাকা কমে পেলেন!’

‘আপনাকে চেনা চেনা লাগছে। আপনি কি লেখালেখি করেন? আপনি কি হানিফ ওয়াহিদ?’

লে হালুয়া! মহিলা আমার নাম জানেন! তাহলে কি ফেসবুক ফ্রেন্ড? হায়, হায়! এই মহিলা আমার পরিচয় পেলে তো সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ফেসবুকে ছবি এডিট-মেডিট করে দিই, এমন হাবড়া জানলে তো ডাইরেক্ট ব্লক মেরে দেবে!

বললাম, ‘আপনি কোন হানিফ ওয়াহিদের কথা বলছেন?’

‘ফেসবুকে গল্প লিখেন। আমি তার লেখা পছন্দ করি। নিয়মিত লাইক কমেন্ট করি।’

কিছুটা অসুস্থ থাকায় আলসেমি করে দশ দিন যাবত সেভ করি না। মাথার চুল উসকোখুসকো, গরমে নেয়ে ঘেমে একাকার। পরনে লুঙ্গি। দেখাচ্ছে পাগলের মতো। কী করে বলি, আমি হানিফ ওয়াহিদ!

বললাম, ‘ম্যাডাম, হানিফ ওয়াহিদের কি দাড়ি-গোঁফ আছে?’

‘না।’

‘ইয়া বড় একটা ভুঁড়ি আছে?’

‘ভুঁড়ি তো দেখি নাই। সামনাসামনি দেখা হয় নাই। ফেসবুকে দেখেছি। দেখতে সুন্দর।’

‘তাহলে আমার মতো ভুঁড়িওয়ালা, গোঁফওয়ালাকে হানিফ ওয়াহিদ ভাবছেন কেন? হয়তো আমার চেহারার সঙ্গে কিছুটা মিল আছে!’

‘ঠিক বলেছেন। ওই লোক অবশ্য আপনার মতো এত কাইল্যা না। আপনার মতো অভদ্রও না। অমায়িক লোক। আচ্ছা, যাই।’

মহিলা হনহন করে চলে গেলেন। আমি থ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম!

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম