
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩২ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
‘মার্চ ফর গাজা’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে ২০ দফা ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা পেশ করা হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বিশ্ব, মুসলিম উম্মাহ ও সরকারের প্রতি চার স্তরে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা; গণহত্যা বন্ধে কার্যকর সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া ভারতের মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নেওয়ার কথা বলা হয়। আয়োজক সংগঠন প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভেমেন্টের পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
এতে বলা হয়-‘আমরা বাংলাদেশের জনতা, যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি। এখানে সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার এবং একটি শপথ।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দাবি : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব জাতির অধিকার রক্ষা, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে। এ কারণে জায়নবাদী ইসরাইলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
মুসলিম উম্মাহর প্রতি দাবি : ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ। গাজা এখন শুধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়, এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি। এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসির মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোকে ইসরাইলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে। জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরাইলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।
সরকারের প্রতি দাবি : পাসপোর্টে ‘ইসরাইল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বলা হয়, ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। ইসরাইলি কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে। হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয় বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর। পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেন ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।
অঙ্গীকারনামা : এতে বলা হয়, আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে বয়কট করব, যারা ইসরাইলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করব, যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে। আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব, যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে। আমরা বিভাজিত হব না, কারণ বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করব নিজেদের ঘর থেকে ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ-সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে। আমরা মনে রাখব, গাজার শহিদরা শুধু আমাদের দোয়া চান না, তারা আমাদের প্রস্তুতিও চান।
গাজার জনগণকে অভিনন্দন : গাজার জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আপনারা ইমান, সবর আর কুরবানির মহাকাব্য রচনা করেছেন। দুনিয়াকে দেখিয়েছেন ইমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ-শাহজালাল আর শরীয়াতুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই, আপনাদের শহিদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই, আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দোয়া, হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার ওপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়নিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।