
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪০ এএম
সাক্ষাৎকার ড. মাহদী আমিন: সংস্কারের প্রধান প্রস্তাবক ও ধারক বিএনপি
#তারেক রহমান হঠাৎ করে আসেননি, ৩৭ বছর ধরে রাজনীতি করে এখন জনগনের মনে মহানায়ক # নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারেক রহমান দেশকে নেতৃত্ব দেবেন # ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া অধিকাংশ সুপারিশের সঙ্গে বিএনপি একমত # ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কেউ গণভোট ও গণপরিষদের কথা বলেননি, জনগণেরও ধারণা নেই # বিএনপি সংস্কার চায় না- এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠি, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

ড. মাহদী আমিন
আরও পড়ুন
উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছে বিএনপি। পাশাপাশি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময়সীমা নির্ধারণ বা ক্ষমতা হ্রাসের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে। এছাড়া এ কমিশনের দেওয়া অধিকাংশ সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে দলটি। এসব তথ্য যুগান্তরকে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন। তার মতে, সংস্কারের প্রধান প্রস্তাবক ও ধারক বিএনপি। বর্তমানে যে সংস্কারের কথা উঠছে সেগুলোর অধিকাংশই ৩১ দফায় ছিল। গণভোট ও গণপরিষদের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ কথা বলেননি, জনগণেরও ধারণা নেই। আর বিএনপি সংস্কার চায় না-এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারেক রহমান প্রসঙ্গে তার অভিমত-তিনি হঠাৎ করে আসেননি, ৩৭ বছর রাজনীতি করে এখন জনগণের মনে মহানায়ক। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তারেক রহমানই দেশকে নেতৃত্ব দেবেন। সম্প্রতি রাজধানীর দারুসসালাম এলাকায় তার নিজ বাসায় দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রাজনীতি, বর্তমান পরিস্থিতি, বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফা, ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রস্তাবসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তরুণ এই রাজনীতিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার তারিকুল ইসলাম।
যুগান্তর : বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ছেড়ে কেন রাজনীতিতে এলেন?
মাহদী আমিন : পেশাগত জীবনে যাই থাকুক না কেন, সবাই চায় দেশ ও মানুষের জন্য যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে। স্বাভাবিকভাবেই যদি দেশে অনেক কর্মসংস্থান এবং যুবক ও নারীদের ক্ষমতায়ন সৃষ্টি করতে চাই; কৃষক, শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়ন করি-তাহলে সবচেয়ে বড় পরিসরের সুযোগ রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে। আর বিএনপি সেই দল বারবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের জন্য অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। সুতরাং বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে যেভাবে মানুষ ও দেশের উন্নয়ন করা যাবে, জনগণকে স্বাধীন নাগরিকের সম্মান দেওয়া যাবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ হবে, এটি আর কোনোভাবেই সম্ভব না। সে আকাঙ্ক্ষা ও আদর্শ থেকে, দেশের প্রতি মমত্ববোধ থেকে আমার রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা।
যুগান্তর : গণতন্ত্রপন্থি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিএনপি ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রণয়ন করে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সংস্কার।
মাহদী আমিন : শেখ হাসিনার পরবর্তী যে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, এখানে অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। বাস্তবতা হচ্ছে-সর্বপ্রথম আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন সংস্কারের জন্য সুনির্দিষ্ট রূপকল্প দিয়েছিলেন, তখন কেউ জানত না কখন শেখ হাসিনার পতন ঘটবে, কখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। সেই সময় ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারেক রহমান ৩১ দফা প্রণয়ন করেছিলেন। কারণ, তার বিশ্বাস ছিল ১৬ বছরে যে গুম-খুন-হামলা-মামলার বিপরীতে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য বড় রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছে, এই ত্যাগ-সংগ্রাম অবশ্যই বৃথা যাবে না। একটা সময় শেখ হাসিনার পতন ঘটবে, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিপুল জনপ্রিয় দল হিসাবে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব বিএনপির ওপরে আসবে। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়া রাষ্ট্র কাঠামোগুলোকে আমরা কীভাবে মেরামত করব, প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে আরও বেশি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হিসাবে গড়ে তুলব, কীভাবে নিশ্চিত করব দেশের মানুষ সত্যিই যার যার রাষ্ট্রীয় মালিকানা ফেরত পান এবং স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে নিজেদের অধিকার, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, সেই রূপকল্প নিয়েই কিন্তু ৩১ দফা প্রণয়ন করা হয়েছিল।
যুগান্তর : বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছিল। সেখানে কী ছিল? উচ্চকক্ষে বিএনপি কেন নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতকে প্রস্তাব করেছে?
মাহদী আমিন : সেই ২০১১ সালে যখন আমি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছিলাম, তখন আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে খুব কাছ থেকে কাজ করার। তখন দেখেছি তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা আমরা করতে পারি কি না ওয়েস্টমিনস্টার ডেমোক্রেসির পার্ট হিসাবে। দেখেছিলাম, তখন তিনি আমার ইউনিভার্সিটি ক্যামব্রিজের ফ্যাকাল্টি মেম্বার, অক্সফোর্ডের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, ওনাদের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করেছিলেন। বাংলাদেশে কীভাবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ তৈরি করা যায়, তা নিয়ে কাজ করেছিলেন। ওয়েস্টমিনস্টার ডেমোক্রেসির পার্টি হিসাবে দেখি, সেই যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তার আলোকে পৃথিবীর কোথাও কিন্তু এক্ষেত্রে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব করা হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশ, সাবকন্টিনেন্ট এবং বৃহত্তর পরিসরে অন্য যেসব দেশেও এই ওয়েস্টমিনস্টারাল ডেমোক্রেসি রয়েছে, যার মূল লক্ষ্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তি, যাদের দেশপ্রেম রয়েছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রয়েছে, হতে পারেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, আইনজীবী, সংবাদকর্মী, মানবাধিকারকর্মী যার যে পেশাই থাকুক না কেন, ওনারা যদি সেই পেশায় সফল হন; তাদের যদি দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও দেশপ্রেম থাকে, তাহলে ওনাদেরকে কীভাবে আমরা রাষ্ট্র কাঠামোয় সম্পৃক্ত করতে পারি, কীভাবে নিম্নকক্ষে যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদের আরও বেশি জবাবদিহিমূলক একটা কাঠামোর ভেতর নিয়ে আসতে পারি-সেই ভারসাম্য তৈরি করার জন্য তাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি আমাদের যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তাদের আরও বেশি জবাবদিহি, আরও সৃজনশীল করার জন্য এই দ্বিকক্ষ সংসদীয় প্রস্তাব বিএনপি করেছে। ২০২৫ সালে এসে অনেকে কথা বললেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবার আগে কিন্তু সেই ২০১৬ সালে খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ প্রণয়ন করেছিলেন। সুতরাং আজ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট নিয়ে যা কিছু আলোচনা হোক না কেন, এর মূল ভিত্তি হচ্ছে সেই ২০১১ সাল থেকে তারেক রহমানের করা সেই গবেষণালব্ধ প্রস্তাব।
যুগান্তর : রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে বিএনপি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
মাহদী আমিন : রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভারসাম্য বলতে এখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য বিষয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রিসভার ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইনসভা বা পার্লামেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা আছে। এবং সুনির্দিষ্টভাবে একটি রাষ্ট্রে আমরা দেখি বিচার বিভাগ রয়েছে, আইনসভা রয়েছে, নির্বাহী বিভাগ রয়েছে-এ তিনটা অর্গানের ভেতরেও কিন্তু একটা ব্যালেন্স অব পাওয়ার থাকা উচিত। সেটা কীভাবে করব, ডিটেইল মেকানিজম কী হবে, আমাদের ৩১ দফায় আছে। যদি আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলি, ফ্যাসিবাদের সময় দেখেছি, একজন প্রধানমন্ত্রী তিনি কিন্তু বিরোধীদলের নেতা কে হবেন, কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কারা বিরোধী দলের এমপি হবেন, তাও ঠিক করে দিয়েছেন নিজের দলের বাইরে গিয়ে। আমরা দেখেছি, নির্বাহী বিভাগের প্রতিটা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, প্রতিটা পদোন্নতির ক্ষেত্রে দলীয়করণ করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করা হয়েছিল। আমরা সেই অবস্থা চাই-একজন ব্যক্তি এককভাবে সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিয়ে কর্তৃত্ববাদী, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যাতে না পারেন। সেজন্য আমাদের প্রস্তাবে একটা ব্যালেন্স অব পাওয়ার রেখেছি, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসের সমগ্র রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতর সেটার একটি বাস্তবসম্মত ও সুনির্দিষ্ট বিন্যাস সৃষ্টি হবে। আমাদের যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদব্যবস্থা, তারই একটি প্রতিফলন।
যুগান্তর : প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময়সীমা নির্ধারণ বা ক্ষমতা হ্রাসের প্রস্তাব কি বিএনপি সর্বপ্রথম দিয়েছিল?
মাহদী আমিন : এটি ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে তারেক রহমান সেই ২০১১ সাল থেকেই কিন্তু এই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা-ব্যালেন্স অব পাওয়ার নিয়েও কাজ করছেন। আমরা দেখেছি, ওয়েস্টমিনস্টার ডেমোক্রেসিতে যেমন ৫ বছর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ থাকে, অধিকাংশ জায়গায় সেটার লিমিট থাকে না। দুইবার বা পরপর দুইবার বা এর চেয়ে বেশি তা না। আপনি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় দেখতে পারেন, যুক্তরাজ্যে দেখতে পারেন, অস্ট্রেলিয়ায় দেখতে পারেন, ওখানে কোনো লিমিট নেই। কিন্তু আমরা দেখেছিলাম যে শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখার জন্য নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল-যে কোনো মূল্যে গুম-খুন, হামলা-মামলার মাধ্যমে হলেও প্রধানমন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে হবে। সেই রাজনৈতিক বাস্তবতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে যদি দেখেন, সেই ২০১৬ সালে ভিশন-২০৩০ থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে বলেছি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার একটা বিন্যাস করা প্রয়োজন। তিনি নিজেই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পরপর দুইবারের বেশি কারও হওয়া উচিত না। তার মূল কারণ এটাই-উনি চান নতুন নেতৃত্ব ওঠে আসুক। পরপর দুবারের বেশি না হওয়ার একটা বড় কারণ-আমরা চাই, যারা সৎ, মেধাবী এবং দেশের মানুষ যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চান, তাদের জন্য যেন একটা রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়।
যুগান্তর : অধিকাংশ মৌলিক সংস্কারের প্রধান প্রস্তাবক যদি বিএনপি হয়, তবে কেন একটি ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে বিএনপি সংস্কার চায় না?
মাহদী আমিন : দেখুন, যে রাজনৈতিক দল সবার আগে বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। ২০১৬ সালে ভিশন-২০৩০ দিয়েছি, ২০২২ সালে ২৭ দফা দিয়েছি, ২০২৩ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে ৩১ দফা দিয়েছি। এর মাধ্যমে কিন্তু সংস্কারের একটা পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। তখন কিন্তু ফ্যাসিবাদ ছিল, তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দিয়েছে। আজকে যদি ফ্যাসিবাদ পরিবর্তনের পরে এমন একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেউ প্রশ্ন করেন বিএনপি সংস্কারের কথা বলছে না। তাহলে এটা কি অজ্ঞতা, নাকি অপপ্রচার, নাকি কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ন্যারেটিভ-এটা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট কনফিউশন রয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বিএনপি একমাত্র দল যারা সংস্কারের জন্য রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে সুনির্দিষ্ট কাঠামো যেমন দিয়েছে, ঠিক একইভাবে সমাজের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কিভাবে সংস্কার করব, কিভাবে ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করব, কিভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনব, কিভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব, কিভাবে নারীর নিরাপত্তা দেব, কিভাবে ছোট ও বড় বিজনেসগুলোর জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করব, কিভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনব, নতুন নতুন কারখানা তৈরি করব-সবকিছু বিএনপির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারে রয়েছে। আজকে বাংলাদেশের সংস্কারে যতগুলো মৌলিক ভিত্তি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা তৈরি করা কিংবা নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা-এর প্রত্যেকটার ভিত্তি কিন্তু আমাদের ৩১ দফা। হয়তো এখানে কাঠামোগত কিছু পার্থক্য রয়েছে, পদ্ধতিগত কিছু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যারা ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানেরও অনেক পরে, গত ৩ মাস ধরে সংস্কারের কথা প্রথবারের মতো বলা শুরু করেছেন, তারা যখন বলেন বিএনপি সংস্কারের কথা বলছে না, হয় অথবা হতে পারে উনারা ইতিহাসটা জানেন না। অথবা হতে পারে উনারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। আমরা বলব, বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেহেতু সংস্কারের ধারক ও বাহক বিএনপি এবং প্রতিটি বাস্তবসম্মত সংস্কারের ভিত্তি আমাদের ৩১ দফা-সবাই যেন এটা অনুধাবন করেন, উপলব্ধি করেন। এবং তার আলোকেই যেন বাস্তবসম্মত বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার করেন। কারণ এটাই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, যেটা সত্যি ও সঠিক তা জাতির সামনে আমরা সবাই তুলে ধরব।
যুগান্তর : সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কি?
মাহদী আমিন : সংস্কার এবং নির্বাচনকে যদি মুখোমুখি তৈরি করা হয়, সেটা একটা অনভিপ্রেত বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা মনে করি সংস্কার কেতাবি কোনো বিষয় নয়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার মানে খুব সুন্দর করে সংবিধানে কিছু লিখে দিলাম, সেটা না। সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য হবে জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করা, জনগণের অধিকার এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আমরা শুধু এতটুকুই বলব, রাষ্ট্রের মৌলিক যে কাঠামোগত সংস্কার এগুলো করার জন্য একটা নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। জনগণের ম্যান্ডেটের প্রয়োজন। একটি অনির্বাচিত সরকার কখনোই জনগণের আকাঙ্ক্ষার বা জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
যুগান্তর : গণভোট ও গণপরিষদ নির্বাচনের বিরোধিতা বিএনপি কেন করছে?
মাহদী আমিন : ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত একটিবারের জন্যও কেউ গণভোট ও গণপরিষদের কথা বলেননি। আমরা জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, বাংলাদেশে একটা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী রয়েছেন, যারা গণভোট ও গণপরিষদ কি সে সম্পর্কে কোনো ধারণাও রাখেন না। এগুলো ৫ আগস্টের অনেক পরে বলা, ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার বিভিন্ন টুলস হিসাবে সামনে এসেছে। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এগুলো কোনোটাই ছিল না।
যুগান্তর : কেউ কেউ বলছেন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা। এ ব্যাপারে আপনার ভাবনা কি?
মাহদী আমিন : নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলতে আমরা সেটাই বুঝি যেখানে ফ্যাসিবাদী যে এলিমেন্টগুলো ছিল সেগুলো যেন আর না আসে। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে যে রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থাকে, তারা বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য মানবাধিকার, আইনের অনুশাসন এবং বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। যেখানে সহাবস্থান থাকবে, পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকবে, আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে এমন একটি রাজনৈতিক শিষ্টাচার গড়ে উঠবে যেখানে আরেকজনকে হেয়প্রতিপন্ন করব না, আরেকজনকে অপমান-অপদস্থ করব না। আমাদের সঙ্গে ভিন্নমত বা ভিন্ন পদ থাকতে পারে এটাই গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য, কিন্তু ভিন্নমতের কারণে একজনকে একটা অরগানাইজড অ্যাটাকের ভেতরে চলে যাবে, সেটা তো আমরা চাই না। ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত যখন সরকার ছিল না, কোনো থানা-পুলিশ ছিল না। এই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে ধারণ করে কিন্তু আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন এই যে থানা-পুলিশবিহীন বাংলাদেশ সেটাকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব বিএনপির। এ কারণেই বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী পাড়ায়-মহল্লায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিয়েছিল। এটাই তো নতুন বন্দোবস্ত। যখন পূজার সময় দেশে বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু আমাদের নেতার নির্দেশে প্রত্যেকটা পূজামণ্ডপে এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের সঙ্গে পাশে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকটা জায়গায় নিরাপত্তা দিয়েছি, সুরক্ষা দিয়েছি, সুষ্ঠু সুন্দরভাবে পূজাটা সম্পন্ন করেছি। সেটাই নতুন বন্দোবস্ত। বন্যার সময়ে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী ত্রাণ নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছুটে গিয়েছে। নতুন বন্দোবস্ত সেটাই যেখানে আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকব, পাশে থাকব, সমস্যার সমাধান করব।
যুগান্তর : আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কি?
মাহদী আমিন : ফ্যাসিবাদের ১৬ বছরে এবং গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি শহিদ-পঙ্গু-আহতের রাজনৈতিক দল হিসাবে, সবচেয়ে বেশি গুম-খুন, হামলা-মামলার শিকার দল হিসাবে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার ধারক হিসাবে বিএনপি বারবার বলে এসেছে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের এবং ব্যক্তিগতভাবে তার নেতৃত্বের অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হতে হবে। গত ৮ মাসে কেন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। কেন বিচারিক আদালতের গতি থমকে আছে, সেটিই একটি রহস্য। সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এই বিচারিক প্রক্রিয়া যেন মানদণ্ড মেনে ও টেকসইভাবে করা হয়, যেন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়, যেন দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা যায়, সেটিও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
যুগান্তর : বিএনপি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় কেন?
মাহদী আমিন : গণ-অভ্যুত্থানে একটা প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল এমন একটি বাংলাদেশে বসবাস করা যেখানে অবৈধ বা অনির্বাচিত সরকার থাকবে না। যেখানে জনগণ তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে, সেই মানুষটাকে ভোট দেবে, সেই দলটাকে ভোট দেবে, যাকে প্রতিনিধি হিসাবে দেখতে চান। এর ভিত্তি হচ্ছে যেই দল তাদের নির্বাচনি ইশতেহারের মাধ্যমে সরকার কিভাবে পরিচালনা করবে সেটা তুলে ধরবে। জনগণ যদি মনে করে যে একটি নির্দিষ্ট দলের যে ইশতেহার রয়েছে, সেটার সঙ্গে এন্ডোরস করছেন, তাহলে সেই রাজনৈতিক দলের ওপর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আসবে। সারা দেশে সবার জবাবদিহিতামূলক সংস্কৃতির অংশ হিসাবে সেই রাজনৈতিক দলের দ্বারা গঠিত সরকারকে দায়বদ্ধ করতে হবে। এটাই তো গণতন্ত্র। এজন্য চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা সংসদ নির্বাচন চাই। অবিলম্বে সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ আমরা চাই।
যুগান্তর : বিএনপির নির্বাচনি ইশতেহারে সংস্কারের বিষয়গুলো থাকবে?
মাহদী আমিন : অবশ্যই থাকবে। আমরা সংস্কারকে নির্বাচনি অঙ্গীকার বা ইশতেহারে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবশ্যই রাখব। একটা জনসম্পৃক্ত, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন যেন এর মাধ্যমে ঘটে।
যুগান্তর : সভা-সমাবেশে তারেক রহমানের বক্তব্যকে রাষ্ট্রনায়কোচিত মনে করছেন দেশের মানুষ। দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর কারণ কি?
মাহদী আমিন : এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। আওয়ামী লীগ কিন্তু এটা জানত। জানত বলেই রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ তারেক রহমানের বক্তব্যকে আইন-আদালত ব্যবহার করে নিষিদ্ধ করেছিল? এটা বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে নজিরবিহীন। কারণ তারা জানত কোনোভাবেই রাজনৈতিকভাবে তারেক রহমানের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে মোকাবিলা করার শক্তি বা সামর্থ্য তাদের নেই। খুব কাছ থেকে আমি দেখেছি উনি কিভাবে তৃণমূলের আদর্শকে ধারণ করেন। বাংলাদেশে এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানকার নেতাকর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বিদেশ থেকেও যোগাযোগ করেননি। যখন তিনি বাংলাদেশে ছিলেন প্রতিটা ওয়ার্ডে ছুটে গিয়েছিলেন। ছিন্নমূল, তৃণমূল, প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর জন্য রাজনীতি করেছেন। আজও উনি একমাত্র রাজনীতিবিদ, যার বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে ডিটেইল পলিসি রয়েছে। কিভাবে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে, জনগণের ক্ষমতায়ন করবেন এটা নিয়ে উনি কাজ করছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে যখন তারেক রহমানের বক্তব্য দেশের মানুষ দেখা শুরু করল, সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তারা দেখছেন প্রাঞ্জল ভাষায় কি সম্মান দিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলছেন। এটাই কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন। আমরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তর কথা বলছি সেটাও তাই। এই যে সম্মান, সহাবস্থান, নিজের অবস্থানকে খাটো করে অন্যকে বড় দেখানো-সেটা কিন্তু এর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষা, মূল ভিত্তি কি ছিল? ঐতিহাসিক একদফা সবার আগে তারেক রহমান দিয়েছিলেন। কোটা আন্দোলনের অনেক আগে ২০১৪ সালে তারেক রহমান প্রথমবারের মতো বলেছিলেন, বাংলাদেশে ৫ শতাংশের বেশি কোটা কোনোভাবে হওয়া উচিত নয়। এটা সংস্কার করা প্রয়োজন। তরুণদের জন্য কীভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়, সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা কিভাবে বাড়ানো যায় এগুলো নিয়ে কাজ করেছেন। ১৬ জুলাই যেদিন আবু সাঈদ শহিদ হয়েছিলেন, সেদিন কিন্তু উনার ডাকে চট্টগ্রামে ওয়াসিম আকরাম নামের ছাত্রদলের একজন নেতাও শহিদ হয়েছিলেন। উনি অন্যের অবদানকে বড় করে দেখিয়েছেন, প্রত্যেককে আরও বেশি মূল্যায়ন করেছেন, অনেক বেশি স্বীকৃতি দিয়েছেন। রাজনৈতিক জিঘাংসার ওপরে উঠে একটি স্ব-অবস্থান তৈরি করতে চেয়েছেন। এটাকেই তো আমরা মনে করি রাষ্ট্রনায়কোচিত একটি অবস্থান, যেটি বাংলাদেশের সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন। ৫ আগস্টের পরেও উনি এখন পর্যন্ত একটা বক্তব্য দেননি, যেটা নিয়ে কোনো বিতর্ক হতে পারে।
যুগান্তর : বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? প্রধানমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি উপপ্রধানমন্ত্রীর পদও কি সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি?
মাহদী আমিন : হ্যাঁ। আমাদের যে ৬২টি সংস্কার প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপরাষ্ট্রপতি, উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ আমরা প্রস্তাব করেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই সব রাজনৈতিক দল একটা প্ল্যাটফর্মে এসে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে। একটি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে উনি শুধু দলকেই না, যুগপৎ আন্দোলনে শরিক সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্যে এনেই ৩১ দফা প্রণয়ন করেছেন। উনার ডাকেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে গত ১৬ বছরে। নেমে এসেছে গণ-অভ্যুত্থানে। সেই দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেই নেতৃত্বে আমরা আজকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। ইনশাআল্লাহ জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তারেক রহমান বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন।
যুগান্তর : তারেক রহমান বহু বছর ধরে রাজনীতি করছেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। তারপরও কেউ কেউ পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কথা কেন বলছেন?
মাহদী আমিন : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির একজন সাধারণ মাঠপর্যায়ের কর্মী হিসাবে রাজনীতি শুরু করেছেন। উনি বিশাল কোনো পদ দিয়ে রাজনীতি করেননি। সেই ১৯৮৮ সালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সাধারণ একজন বিএনপির সদস্য হিসাবে রাজনীতি শুরু করেছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে আজকে ২০২৫ সাল-এই ৩৭ বছরে উনি একটিবারের মতো এমপি হননি, মন্ত্রী হননি, হুট করে উপদেষ্টা হননি। আজকে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হওয়া উচিত এটাই, ৩৭ বছর রাজনীতি করার পরও উনি কেন দলের শীর্ষ পদটুকুও নেননি। কারণ তারেক রহমান ধাপে ধাপে উঠে এসে আজকের এই জায়গায় এসেছেন। আমরা সেটাকেই দলীয় রাজনীতিকরণ বলব যেখানে পরিবারের সদস্য এসেই হঠাৎ করে উপদেষ্টা হয়ে গেলেন, এসেই একটা বড় পদ নিয়ে নিলেন। গণমানুষের সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পৃক্ত থাকার পরও, একটা অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তা থাকার পরও উনি একটা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ না নিয়ে সেটাকে বারবার ছেড়ে দিয়েছেন। চাইলেই কিন্তু ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে এমপি হতেই পারতেন। একবারও হননি। এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন কেন বারবার তারেক রহমান নিজে নেতৃত্বে না এসে অন্যদের সুযোগ করে দিয়েছেন। কেন দল ও দেশের মানুষের এত চাপ থাকার পরও উনি রাজনৈতিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে নিজে পদায়িত না হয়ে অন্যদের রাজনৈতিক, সংস্কৃতির পরিবর্তনের অংশ হিসাবে আরও বড় পদে ধাবিত করেছেন। আমরা মনে করি যারা পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কথা বলছেন, এটা উনাদের অজ্ঞতা হতে পারে, হতে পারে ঐতিহাসিকভাবে উনারা সচেতন না, হতে পারে অপপ্রচারের অংশ, নিজেদের হীনন্মন্যবোধকে ঢাকবার জন্য সেটা বলছেন হয়তোবা। কারণ গণ-অভ্যুত্থানে যদি আমরা দেখি যে মানুষটার ডাকে সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নেমে এসছিলেন, গত ১৬ বছরে যে নেতার নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছিলেন, সেটা তারেক রহমান। তিনি আজকে জনগণের মনে মহানায়ক হিসাবে অবস্থান নিয়েছেন। তার প্রতিফলন দেখব ভোটে। যার কারণেই আমরা বলছি, আমরা জানি এবং সে বিশ্বাস রয়েছে জনগণের কাছে এই বাংলাদেশে একজনই নেতা তিনি তারেক রহমান। এবং সেটা প্রমাণের জন্যই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসাবে ভোটের কথা বলছি।
[ড. মাহদী আমিন : ২০১৪ সালে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার শিক্ষা ও গবেষণা উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক বাংলাদেশ পলিসি ফোরাম ক্যামব্রিজের সভাপতি ড. মাহদী আমিনকে। ২০২৪ সালে বিএনপির স্পেশাল অ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদীকে সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি আইবিএম, ব্রিটিশ টেলিকম, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, ওয়েস্টফিল্ড, লন্ডন ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কনসালটেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।]