
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২১ এএম
বিমসটেক ইয়ং জেনারেশন ফোরামে ড. ইউনূস
তরুণরা উদ্যোক্তা হলেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব
শুরুতে ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা চালু করার পরামর্শ * নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কুশল বিনিময়

বাসস
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
তরুণদের চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। তরুণরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুললেই শুধু টেকসই উন্নয়ন ‘সম্ভব’। বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক ইয়ং জেনারেশন ফোরামে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা কি-নোট স্পিকার ছিলেন।
শুরুতে বা ক্ষুদ্র পরিসরে তরুণদের ব্যবসা চালু করার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তুমি একবারে রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। তাই ছোট পরিসরে শুরু করে পরিবর্তনের সূচনা কর।’ তিনি বলেন, শুরুতে বড় পরিসরে ব্যবসা চালু করা ভুল পথ। সবার জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তরুণদের সামাজিক ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মানুষ অন্য কারও অধীনে কাজ করার জন্য জন্মগ্রহণ করেনি। বরং তারা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা মাথায় রাখতে বলেন।
পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে তরুণ প্রজন্মকে ‘থ্রি-জিরো ব্যক্তি’ হিসাবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, বিশ্ব এখন আত্মবিধ্বংসী সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, কার্বন নিঃসরণ, বর্জ্য উৎপাদন এবং সম্পদ পুঞ্জীভূতকরণের পুরোনো অর্থনৈতিক মডেল অনুসরণ করেই চলেছে। তিনি বলেন, যদি আমরা টিকে থাকতে চাই, তাহলে আমাদের নতুন ‘থ্রি-জিরো’ সভ্যতার দিকে যেতে হবে। শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য বর্জ্য এবং শূন্য সম্পদকেন্দ্রিকতার দিকে যেতে হবে। প্রকৃতির সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনার সম্পদ যদি ভাগাভাগি না করেন, তাহলে সমাজে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম হিসাবে অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেন, জীবন হলো সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য, তাই ‘থ্রি-জিরো’ সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে। ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’-এর গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, পাঁচজন একসঙ্গে হলে তারা একটি থ্রি-জিরো ক্লাব গঠন করতে পারে, যেখানে তারা ব্যক্তিপর্যায়ে কার্বন নিঃসরণ, বর্জ্য উৎপাদন এবং সম্পদকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত থাকবে এবং নিজেরাও থ্রি-জিরো ব্যক্তি হয়ে উঠবে। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি একদিনে পৃথিবী বদলে দিতে পারবেন না, যদি পরিবর্তন আনতে চান, তাহলে নিজের গ্রাম থেকেই শুরু করুন।’
নৈশভোজে যোগদান প্রধান উপদেষ্টার : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থাইল্যান্ডের ব্যাংককের একটি হোটেলে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন। এ সময় থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে তিনি ছবি তোলেন। ২ থেকে ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ব্যাংককে ইউনূস-মোদির কুশলাদি বিনিময় : প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বিমসটেক সম্মেলনের নৈশভোজে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কুশলাদি বিনিময় করেছেন। বৃহস্পতিবার ব্যাংককে নৈশভোজে উভয় নেতাকে বেশ কিছু সময় ধরে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলতে দেখা গেছে। বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষ্যে তারা বর্তমানে ব্যাংককে অবস্থান করছেন। শুক্রবার সম্মেলনের সাইডলাইনে তারা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সকালে ২০তম বিমসটেক মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের একদিন আগে বিমসটেকের সাতটি সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ বৈঠকে অংশ নেন। বিমসটেক মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএ) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাস্তবসম্মত ও ফলপ্রসূ সহযোগিতার ওপর জোর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একটি অভিন্ন বিমসটেক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন তিনি। বৈঠকের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিমসটেক সমুদ্র পরিবহণ সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদের সঙ্গে বিমসটেক মহাসচিবের সাক্ষাৎ : ব্যাংককে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বিমসটেক মহাসচিব ইন্দ্র মণি পান্ডে সাক্ষাৎ করেছেন। বিমসটেক সচিবালয় জানায়, বৈঠকে তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা গভীরতর করা, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং বিমসটেকের সাফল্যে পরবর্তী সভাপতি হিসাবে ঢাকার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন।