
প্রিন্ট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৬ পিএম
লোহাগাড়ায় সড়কে নিহত ১০
শিশু আরাধ্য চোখ খুলেই খুঁজছে মা-বাবাকে
পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারিয়ে পিরোজপুরে আহাজারি

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে মারা গেছেন বাবা-মা। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া তাদের শিশুসন্তান আরাধ্য বিশ্বাসকে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। হাসপাতালের বেডে পরম মমতায় চিকিৎসক-নার্সরা তাকে সেবা দিচ্ছেন। ভর্তির পর থেকে চোখ খুলেই শিশুটি খুঁজছে তার মা-বাবাকে। কিন্তু তার মা-বাবা যে আর বেঁচে নেই সেটি জানে না শিশু আরাধ্য। তাকে এটা-ওটা বলে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। মাথায় ইনজুরি ও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে শিশুটিকে শিশু আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। এদিকে এ দুর্ঘটনায় শামীমসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। পাঁচজনকে হারিয়ে বাড়ির স্বজনরা এখন শোকাহত। ব্যুরো ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম : বুধবার সকালে লোহাগাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া চুনতি বন রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসের ১০ আরোহী নিহত হন। গুরুতর আহত শিশু আরাধ্যসহ তিনজনকে এনে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহত কিশোর দুর্জয় মণ্ডলের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অপর আহত কিশোরী প্রেমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকেও আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
ভর্তির পর যন্ত্রণাকাতর শিশুটি শুধু তার নাম ও বাবার নাম বলতে পারলেও আর কিছু বলতে পারছিল না। পরে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে চট্টগ্রাম ছুটে আসেন আরাধ্য বিশ্বাসের স্বজনরা। আরাধ্যর কাকা নিতাই রায় বারই বলেন, ‘চোখ খুললেই আরাধ্য খুঁজছে তার বাবা-মাকে। কিন্তু তাকে আমরা নানা কথা বলে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।’
আরাধ্যর বাবার নাম দিলীপ বিশ্বাস ও মায়ের নাম সাধনা মণ্ডল। বুধবার চট্টগ্রামমুখী রিলাক্স পরিবহণের একটি বাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে এ দম্পতিসহ ১০ জন নিহত হন। বেঁচে যায় শিশু আরাধ্য।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোর দুর্জয় মণ্ডল আশিষ মণ্ডলের ভাতিজা। সেও গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। নিহত আশিষ মণ্ডলের আত্মীয় অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘আশিষ কুষ্টিয়া থেকে তার ভাতিজাকে নিয়ে ঝিনাইদহ বোনের বাড়িতে যায়। সেখান থেকে বোনের পরিবারসহ বেড়ানোর জন্য কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় আরাধ্য ও দুর্জয় ছাড়া তাদের মধ্যে তিনজনই মারা গেছেন।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘লোহাগাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত পাঁচজনকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আহত তিনজনের মধ্যে তরুণীর অবস্থা সংকটাপন্ন। ওই তরুণী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তিনজনের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
চমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. ধীমান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘শিশু আরাধ্যর হেড ইনজুরি হয়েছে। শরীরের অন্যান্য স্থানেও জখম হয়েছে। মাঝে মাঝে তার জ্ঞান ফিরছে। ঝুঁকিমুক্ত রাখতে তাকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।’
পিরোজপুর : ঈদে পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে আসবেন এমন কথাই মোবাইল ফোনে চাচাতো ভাই পারভেজ ফকিরকে জানিয়েছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শামীম ফকির। ঈদের পরে বাড়ির পাশে ভাইয়ের মেয়ের বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদান করে তারপরে আবার ফিরবেন কর্মস্থল ঢাকায়। কিন্তু ঈদে বাড়িতে আসার কর্মসূচি কিছুটা রদবদল করে অফিসের বন্ধুর সঙ্গে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যান শামীম। পথে বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় শামীমসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। পাঁচজনকে হারিয়ে বাড়ির স্বজনরা এখন শোকাহত। বুধবার রাতে শামীমের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলার বাড়িতে এসব কথা বলছিলেন শামীমের ভাইয়ের ছেলে পারভেজ ফকির।
এ ঘটনায় পিরোজপর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের শামীম ফকির, আর স্ত্রী সুমি আক্তার, মো. আনিসা (১৪), ৪ মাস বয়সি ছোট মেয়ে ও বোনের মেয়ে তানু মারা যায়। নিহত শামীমের আরেক মেয়ে প্রেমা গুরুতর আহত হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
শামীম দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মিরপুরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন। শামীমের ভাই আসলাম ফকির বলেন, মঙ্গলবার রাতে ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে আমার। ঈদের ছুটিতে অফিসের আরেক সহকর্মী ও তার পরিবার ঈদের ছুটি কাটাতে কক্সবাজার যাচ্ছে। কিন্তু বুধবার বিকালে আমি ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাই।
শামীমের অপর এক আত্মীয় নাদিরা আক্তার বলেন, শামীমের বেঁচে যাওয়া মেয়েটি একা কিভাবে বাঁচবে। কারণ প্রেমা তো তার পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং খোঁজ নিচ্ছি।