
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৪ এএম
কমিশনের ১১৩ প্রস্তাবে একমত এনসিপি
নির্বাচনের সময় জরুরি অবস্থা জারি নয়
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ২৯টি প্রস্তাবে আংশিক মত, ২২টিতে না * নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৭০-৭৫ দিন * তরুণ-তরুণীদের বয়সসীমা ৩৫, ভোটে প্রার্থীর ক্ষেত্রে ২৩ বছরের প্রস্তাব * জুলাই চার্টার হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা প্রস্তাব দিয়েছেন, নির্বাচনের সময় জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তারা প্রস্তাবটি দেন। তারা বলেন, কমিশনের জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব আমরা সমর্থন করেছি। এতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয় আছে। আমরা বলেছি, এটা হবে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের মেয়াদ ৭০ থেকে ৭৫ দিন হবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে এ সরকারের প্রয়োজন হবে না। কমিশন সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের যে প্রস্তাব করেছে, সেই কাউন্সিল এই দায়িত্ব নিতে পারবে। তারা বলেন, জুলাই চার্টার হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
এনসিপির নেতারা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে আমরা ১১৩টিতে পুরোপুরি একমত, ২৯টিতে আংশিক এবং ২২টিতে একমত নই। যেসব প্রস্তাবের সঙ্গে আংশিক একমত হয়েছি, সেগুলোর পাশে মত জানিয়েছি। যেগুলোর সঙ্গে একমত হইনি, সেগুলোর পাশে কেন একমত হইনি সেটা জানিয়েছি। যে সুপারিশগুলো সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, সেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আর সংবিধান সম্পর্কিত বিষয়গুলোর জন্য গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন। তারা আরও বলেন, সরকার ১১১টি সংস্কার প্রস্তাব কোনো ধরনের সংলাপ ছাড়া বাস্তবায়নের কথা ভাবছে। এ ১১১টির মধ্যে অনেক বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এগুলো কী প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হলো, এটা আমরা জানতে চেয়েছি।
রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে এনসিপি লিখিত মতামত জমা দেয়। এরপর দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনিই এসব তথ্য দেন। এ সময় দলটির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য মুনিরা শারমিন, জাবেদ রাশিম, আরমান হোসাইন ও সালেউদ্দিন সিফাত উপস্থিত ছিলেন।
সারোয়ার তুষার বলেন, এনসিপি দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। তবে নির্বাচনের আগেই উচ্চকক্ষের প্রার্থী কারা, তা দলগুলোকে ঘোষণা করতে হবে। কারণ, নির্বাচনে একজন ভোটার একটি ভোট দেবেন। সে ক্ষেত্রে তার জানার অধিকার আছে উচ্চকক্ষে কারা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে তা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। সংস্কার কমিশন বলেছে, তরুণ-তরুণীদের ১০ শতাংশ মনোনয়ন দিতে হবে। আমরা বলেছি, তরুণ-তরুণীদের বয়সসীমা সর্বোচ্চ কত, তা নির্ধারণ করতে হবে। সেটা ৩৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স ন্যূনতম ২৩ বছর হবে।
সারোয়ার তুষার বলেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি কমিশন আমাদের কাছে স্প্রেডশিট পাঠায়নি। একটা হচ্ছে পুলিশ সংস্কার কমিশন, আরেকটি স্থানীয় সংস্কার কমিশন। এ দুই কমিশনের রিপোর্টগুলো আমরা দেখিনি। এ ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান জানতে চেয়েছি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রভাষা বাংলা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা বলেছি, দাপ্তরিক ভাষাও বাংলাই হওয়া উচিত। ডেপুটি স্পিকার দুজনের কথা বলা হয়েছিল, আমরা বলেছি একজন হবেন এবং তা বিরোধী দল থেকে হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকরা বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত হবেন। আমরা এটার সঙ্গে একমত। পাশাপাশি আমরা মন্তব্য করেছি, বিভিন্ন যে জাতিসত্তা আছে, তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে।
এদিকে এনপিসি সবচেয়ে বেশি দ্বিমত পোষণ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে। সারোয়ার তুষার বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১২টি প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি, ১১টি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হতে পারিনি এবং তিনটির সঙ্গে আংশিক একমত হয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার ঘোরতর বিরোধিতা করেছি। বলেছি, এ ধারণা বিপজ্জনক। এটি নিয়ে আলোচনারই দরকার নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না।
সারোয়ার তুষার বলেন, জুলাই চার্টার হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। যেসব সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, তার ওপর ভিত্তি করে জুলাই চার্টার হবে। আমরা বুঝতে পারছি, ১৬৬টি সুপারিশমালার সব জুলাই চার্টারে থাকবে না। তাহলে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সুপারিশ জুলাই চার্টারে থাকবে না, সেগুলোর ব্যাপারে কমিশন কী ভাবছে, সেটা আমরা জানতে চেয়েছি।