সর্বত্র প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদের ঝড়
ভারতীয় প্রোপাগান্ডায় তুলসীর তাল

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67d9d55742e00.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
ভারতে বসে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই এই ধরনের বিভ্রান্তিকর অভিযোগ অন্যায় ও অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। তুলসীর এই মন্তব্য ভারতীয় প্রোপাগান্ডানির্ভর এবং সত্যের অপলাপ বলে মনে করছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল এবং কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারাও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমনির্ভর হয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের দেওয়া এই ধরনের অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় প্রোপ্রাগান্ডার সুরে তাল মিলিয়েছেন। অন্যদিকে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলেও তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে কিছু সহিংসতা হয়েছে, যার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এর বেশির ভাগই ছিল রাজনৈতিক ঘটনা। রাজনৈতিক কারণে হামলা হলেও আওয়ামী লীগের হিন্দু নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা করে। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশে প্রায় দুই হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হলেও তা এড়িয়ে যাওয়া ভারতীয় গণমাধ্যম ৫ আগস্টের পরের প্রত্যেকটি ঘটনাকে প্রচার করছে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ভারতীয় গণমাধ্যমে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তুলসী গ্যাবার্ড তিন দিনের সফরে ভারতে এলে তার সামনেও বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ‘কাল্পনিক’ চিত্র উপস্থাপন করা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে তুলসী নিজেও ভারতের প্রোপ্রাগান্ডার সুরে সুর মেলান। ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুলসী বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ‘গভীর উদ্বিগ্ন’ বলে মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা নানা দেশে ‘ইসলামি খেলাফতে’র আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদে’র বিপদ বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে বলে পাশাপাশি বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া দ্বিতীয় আর একটি সাক্ষাৎকারেও এমন মন্তব্য করেন তুলসী গ্যাবার্ড।
অন্যদিকে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই এই ধরনের বিভ্রান্তিকর অভিযোগ তোলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে সোমবার রাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। সরকার বিবৃতিতে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে বলেছে, ‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি বলে বাংলাদেশ সরকার ওই বিবৃতিতে দাবি করেছে। সরকার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে পুরো বাংলাদেশকে অন্যায় ও অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সরকার যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তার সঙ্গে একমত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘এটা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে সারা দেশবাসী একমত। তিনি আরও বলেন, সরকার বলেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেসব মিস ইনফরমেশন, তার ভিত্তিতে (তুলসী গ্যাবার্ড) বক্তব্য দিয়েছে। সরকার এটা কনডেম করেছে। আমরাও কনডেম করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার যুগান্তরকে বলেন, আমরা এর (তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের) তীব্র নিন্দা জানাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান হিসাবে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাদের ভাষায় সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার, তাদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে, কিন্তু এই কথাগুলো একেবারেই অসত্য। এগুলো আবার ভারতীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের স্থিতিশীল পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বলেই আমরা মনে করি। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার যুগান্তরকে বলেন, তুলসী গ্যাবার্ড ভারতে এসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ দেখিয়েছেন। আমরা মনে করি-তার এমন মন্তব্যের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বা রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়নি। এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মন্তব্য। ভারতে বাংলাদেশবিরোধী যেসব প্রোপাগান্ডা হয় তিনি সেটা দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে এই মন্তব্য করছেন। বাস্তবতা হচ্ছে তার কাছে প্রকৃত সত্য নেই। তিনি যা বলেছেন তা ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অন্য যে কোনো সময়ের থেকে অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছেন। এমন অবস্থার মধ্যেই তার এমন মন্তব্য নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন।
এদিকে ‘তুলসী গ্যাবার্ড’ নাম হিন্দু হলেও তিনি ভারতীয় নন। তুলসীর পুরো পরিবার আমেরিকান খ্রিষ্টান। কিন্তু তার মা ক্যারল এক সময় হিন্দুধর্মে দিক্ষা নেন। এরপর তাদের ৫ ভাইবোনের নামের মধ্যে হিন্দু ছোঁয়া স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায় জন্ম নেওয়া তুলসীর বয়স এখন ৪৩ বছর। রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগে ২০ বছর চাকরি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে। তিনি ইরাক ও কুয়েত যুদ্ধে অংশ নেন। তুলসী গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হিন্দু কংগ্রেস সদস্য। কংগ্রেসের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভগবৎ গিতার ওপর হাত রেখে শপথ নেন তিনি।
এছাড়া তিনি হিন্দুধর্মের একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ইসকনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ইসকন ছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি প্রায় বক্তৃতা করেন। মোদ্দা কথা, তুলসী একজন আপদমস্তক প্র্যাকটিসিং হিন্দুধর্মের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। যে কারণে শুরু থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তর রাষ্ট্র ভারত ও ভারতের জনগণের প্রতি তুলসীর রয়েছে একধরনের ধর্মীয় অনুভূতি ও আবেগ। গোয়েন্দা সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার তিনদিনের সফরে ভারতে এলেও এর আগে তিনি বেশ কয়েকবার ভারত সফর করেন। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবে হিন্দুদের প্রতি তার একধরনের ভাবাবেগ কাজ করবে এবং সেই ধর্মীয় আবেগ থেকেই তিনি এভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ও অসত্য মন্তব্য করছেন। এমন অভিযোগ এনে অনেকে বলছেন, ভারতের যেসব মৌলবাদী হিন্দুরা বাংলাদেশ সম্পর্কে সংখ্যালঘু কার্ড খেলতে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত, তুলসী সেখানে তাল দিয়েছেন মাত্র। তারা বলছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করে আসছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের অনুসারীরা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন যুগযুগ ধরে। রাজনৈতিক কারণে এখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ট্রাম্পকার্ড খেলা হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত এ খেলা শুরু করেছে। পতনের পর আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনারাও নানাভাবে সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। দিচ্ছে নানা ধরনের উসকানিও। তারা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা সামনে আনার চেষ্টা করছে। তবে তাদের অভিযোগের বেশির ভাগই যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা সরকারের পক্ষ থেকে নানা সময় তথ্যপ্রমাণসহ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যেসব প্রোপাগান্ডা ভারতীয় মিডিয়া চালাচ্ছে, তার সঙ্গে অন্য কোনো দেশ একাত্মতা জানায়নি। ভারত ছাড়া আর একটি দেশও এ নিয়ে উদ্বেগ পর্যন্ত জানায়নি। বরং এবার তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, তা নিজেদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছে ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাস। ফরাসি দূতাবাসের ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে বিবৃতিটি শেয়ার করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি দূতাবাসের পক্ষ থেকে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শহিদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, আঞ্চলিক শান্তির জন্য তুলসী গ্যাবার্ডকে বাংলাদেশ যে হুমকি মনে করে, এটা তাদের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও পেন্টাগনে জানিয়ে দেওয়া উচিত। সে (তুলসী গ্যাবার্ড) সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিপ্রায়ে তার যে ধর্মবিশ্বাস, তার প্রভাবে ভারতের হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা সমর্থন করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে। এটা যে কত বড় মিথ্যা, এর প্রমাণ হচ্ছে পৃথিবীর আর কোনো দেশ এমন কোনো অভিযোগ আনেনি। তিনি আরও বলেন, তুলসী গ্যাবার্ডের এ মন্তব্য একেবারে অকূটনৈতিক। তুলসী গ্যাবার্ডকে তার পদ থেকে না সরালে তিনি মার্কিন জাতীয় স্বার্থকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব বিজন কান্তি সরকার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে যে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলা হয়, ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয়েছে আওয়ামী লীগের সময়ে। অন্য সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা আসলে রাজনৈতিক কারণে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলা হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা চাইব, সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটা ঘটনাও যেন না ঘটে। তবে আমি মনে করি না যে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এখন তিনি (তুলসী গ্যাবার্ড) এ তথ্য কোথায় থেকে পেয়েছেন আমি জানি না। তার তথ্য যদি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমনির্ভর হয়, তাহলে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ, এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ভারতীয় মিডিয়া ৫ আগস্টের পর থেকে শুরু করেছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি না।
এদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা যেভাবে বলা হয়েছে, সে মাত্রায় হয়নি বলে দাবি করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে সরকার।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বহুপক্ষীয় বা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। গণ-আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকারবিহীন এ তিনদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের বিভিন্ন স্থাপনার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তারা কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন, তবে সংখ্যালঘু বলে কেউ আক্রমণের শিকার হননি। একই সঙ্গে সরকার এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপও নিতে শুরু করে।
পরবর্তী সময়ে দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘুদের মন্দির ও স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারও করা হয়। এমনকি দেশের অনেক স্থানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাত জেগে পূজামণ্ডপ পাহারা দেন। পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে গত বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ এবং পরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতারের পর। সেই সময় আদালতে চিন্ময় দাসের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন আইনজীবী নিহত হয়। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পর ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলো আরও আগ্রাসি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করে। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডাও বেড়ে যায়। সর্বশেষ সেই সুরেই কথা বললেন তুলসী গ্যাবার্ডও।