আরসা প্রধানসহ গ্রেফতার ১০
দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

যুগান্তর প্রতিবেদন, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67d9d5ecb02d9.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ-আরসা) প্রধান আতাউল্লা আবু আম্বার ওরফে জুনুনীকে ছয় সহযোগী ও তিন নারীসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। সোমবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুল আলম।
মঙ্গলবার দুপুরে আরসাপ্রধান আতাউল্লা আবু আম্বার ওরফে জুনুনীসহ তার ছয় সহযোগীকে আদালতে তোলা হলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মঈনুদ্দিন কাদির দুটি মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে তিন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন না করায় আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাউয়ুম খান বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মো. শাহাদাত হোসেন আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুটি মামলায় ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত দুই মামলায় পাঁচ দিন করে মোট দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে সোমবার রাতে গোপন বৈঠক করার সময় সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকা থেকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির ছয়জন এবং ময়মনসিংহ থেকে আরও চারজনকে গ্রেফতার করে র?্যাব-১১। তাদের কাছে ৫১ লাখ ৩৯ হাজার ১০০ টাকা, ইউএস ডলার ও রিঙ্গিত, আরসার কমবাট ইউনিফর্ম, চাকু, ধারালো স্টিলের মোটা চেইন ও চারটি হাতঘড়ি জব্দ করা করা হয়েছে। যা মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টায় র্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
গ্রেফতার ১০ জন হলেন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্বার জুনুনী, মোস্তাক আহাম্মদ, সলিমুল্লাহ, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চর আলগী এলাকার আতিকুল ইসলামের ছেলে মনিরুজ্জামান, আসমত উল্লাহ ও মো. হাসান, সলিমুল্লাহর স্ত্রী আসমাউল হোসনা ও আরাকান রাজ্যের ১৫ বছর বয়সি এক কিশোর, শাহিনা বেগম ও কিশোরী সেনোয়ারা। তাদের মধ্যে মনিরুজ্জামান সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমি পল্লি এলাকায় ভাড়া থাকতেন। আর সলিমুল্লাহ, মোসাম্মত শাহিনা ও সেনোয়ারা কক্সবাজারের উখিয়ার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন। তাদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
মামলার এজাহারে পুলিশ জানায়, আসামিরা নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতামূলক অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য গোপন বৈঠক করে আসছিল। র্যাব ও পুলিশ গোপন সংবাদ পায় যে আসামিরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য সিদ্ধিরগঞ্জে ভূমি পল্লি আবাসন এলাকার একটি বহুতল ভবনে গোপন বৈঠক করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা বলেন, আসামিরা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য গোপন বৈঠক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করা প্রয়োজন। আদালত শুনানি শেষে দুটি মামলায় ছয় আসামিকে পাঁচ দিন করে মোট দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনুর আলম জানান, রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির পাঁচ সদস্যসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। দুটি মামলায় ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ডিজিএফআইয়ের বিশেষ একটি দল। তখন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন রিজওয়ান রশদী। গুলিবিদ্ধ হন র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সদস্য সোহেল বড়ুয়া। গুলিতে শূন্যরেখার আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গা তরুণী সাজেদা বেগমও (২০) নিহত হন।
এ ঘটনায় গত বছরের ২৩ নভেম্বর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ডিজিএফআই কক্সবাজার কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন মামলা করেন। আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্বার ওরফে জুনুনীকে প্রধান করে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৬৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর মামলার কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাহাফুজ ইমতিয়াজ ৫১ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পাঁচ মাস আগে সিদ্ধিরগঞ্জে বাসা ভাড়া নেন এআরএসএ প্রধানসহ সদস্যরা : সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ট্রলার মালিক হিসাবে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লি এলাকায় ‘ভূমিপল্লি টাওয়ার’ নামে ১০ তলা একটি ভবনের তৃতীয় ও অষ্টম তলায় ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নেন এআরএসএ প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ। ভাড়া বাসায় ওঠার সময় তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা নয়জন বলে জানিয়েছে ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকারকে। এর আগে গত নভেম্বর মাসে একই ভবনের তৃতীয় তলায় জনৈক কবির হোসেনের ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় আরসা প্রধানসহ সহযোগীরা। সে সময় কবির হোসেনকে পরিচয় দিয়েছিলেন তারা ট্রলারের ব্যবসায়ী। অসুস্থ বিধায় তারা চিকিৎসক দেখাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার কাছে এসে বাসা ভাড়া নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু তিনতলার ওই ফ্ল্যাট ছোট বিধায় অষ্টম তলার এ ফ্ল্যাট ভাড়া নেন ২০ হাজার টাকায়। আব্দুল হালিম সরকারসহ ১৮ জন সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লি এলাকার ওই ১০ তলা ভবনটি নির্মাণ করেন। যার আটতলার দুটি ফ্ল্যাটের মালিক আব্দুল হালিম সরকার। আব্দুল হালিম ইতালী প্রবাসী। তিনি তার বেয়াই খোরশেদকে এ ফ্ল্যাট দুটির ভাড়া দেওয়া এবং ভাড়ার টাকা উঠনোর দায়িত্ব দেন। স্থানীয়রা জানান, তাদের গতিবিধি সন্দেহ করার মতো কেউ কখনো কিছু পায়নি। নামাজের সময় আরসা প্রধান মসজিদেই নামাজ পড়তে যেতেন। তাছাড়া তারা শুধু নিত্যপণ্য কেনা এবং আবর্জনা ফেলতে বাসার বাইরে আসতেন তাদের কোনো না কোনো সদস্য। এছাড়া তারা এলাকার আর কারও সঙ্গে তেমন একটা যোগাযোগ করতেন না।
ভূমিপল্লি টাওয়ারের তৃতীয় তলার মালিক কবির হোসেন জানান, গত নভেম্বর মাসে তার কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেন আতাউল্লাহ। এ সময় তার সঙ্গে দুজন ছিলেন যারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিলেন। অপর আরেক ব্যক্তি ছিলেন যিনি নিজেকে একটি সংস্থার সদস্য হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
ভবনের কেয়ারটেকার ইমরান জানায়, মাঝে মধ্যে তাদের বাজারসহ নিত্যপণ্য ক্রয় করে বাসায় প্রবেশ করতে দেখতাম। বাসার ময়লা ফেলতে মাঝে মধ্যে বের হতেন। আতাউল্লাহ ও আরও দুজনকে নামজ পড়তে মসজিদে যেতে দেখতেন। তবে তাদের সঙ্গে তেমন কথা হতো না।