Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সেহরির পর ভয়ংকর হামলা গাজায়

নিহত ৪১৩, আহত ৫২৬

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সেহরির পর ভয়ংকর হামলা গাজায়

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিনের মতোই মঙ্গলবার ভোরেও সেহরি খেয়েই বোমার ভয় ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়েছিল বিধ্বস্ত গাজা। হঠাৎ বিকট শব্দ। বৃষ্টির মতো হামলে পড়ে কামানের গোলা। আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধবিমান। সেকেন্ডে সেকেন্ডে আতশবাজির মতো ভয়ংকর বিস্ফোরণ। ঘুমন্ত মানুষগুলোর ওপর আবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসরাইল বাহিনী। মুহূর্তে নরক হয়ে গেল শান্তির ঘুম। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। চিৎকার-হাহাকার, দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ভেস্তে দিয়ে কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই গাজয় এদিন আবারও নৃশংস হামলা চালায় ইসরাইল। ১৯ জানুয়ারি ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। এতে অন্তত ৪১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৫২৬ জন। লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়ে আছে আরও লাশ! আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, এএফপি।

মাসদুয়েক অনেকটা নিশ্চিন্তেই ছিল গাজা। দোহায় পুরোদমে চলছে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি আলোচনা। আকস্মিক হামলার ভয় নেই। ধসে পড়া দালানকোঠার মাঝেই বড় হচ্ছিল ছোট ছোট স্বপ্ন। ধুলোয় মিশে যাওয়া সংসারটাকে নতুন করে গড়ে তোলার ছন্দেই কাটছিল সারাদিন। ঘরবাড়ি, স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি দূরে ঠেলে পবিত্র মাহে রমজানের আনন্দেও মন মাতিয়েছিল হতভাগ্য গাজা। কিন্তু সুখ গাজাবাসীর কপালে নেই! ইসরাইলের নৃশংস হামলায় ফের রক্তাক্ত হলো অবরুদ্ধ গাজার অসহায় জনপদ। হাসপাতালগুলোর সামনে শুধু লাশ আর লাশ। সবচেয়ে বড় দুই হাসপাতাল আল শিফা, আল আকসায় আহতদের আহাজারি। প্রথমে উত্তর-পশ্চিম গাজায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা বলেছেন, প্রথমদিকে গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর ২০টিরও বেশি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান গাজার ওপর দিয়ে উড়তে থাকে। সেনারা খুব দ্রুত গাজা শহর, রাফাহ এবং খান ইউনিসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে শুরু করে। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এ হামলায় নিহতদের বেশির ভাগই নারী, শিশু (শতাধিক) এবং বয়স্ক নাগরিক। হামলায় হামাস সরকারের প্রধানমন্ত্রী ইসাম আল-দা’আলিস, উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হামাসের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফা নিহত হয়েছেন। নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় আবারও শোকের ছায়া পড়েছে গাজায়। ২৪ বছর বয়সি নারমিন আবু নাসর বলেছেন, ‘হঠাৎ আমরা গুলির শব্দে জেগে উঠি। বাচ্চারা চিৎকার করে বলতে শুরু করে যে তারা আর একটি যুদ্ধ চায় না। এটি যেন আবার ফিরে না আসে।’ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির জেরে বুধবার জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। গাজায় আবার ঝাঁপিয়ে পড়বে ইসরাইল। ৬ মার্চ ট্রুথ স্যোশালে জিম্মি ফেরতে হামাসকে লক্ষ্য করে দেওয়া ট্রাম্পের ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’য়েই তার পূর্বাভাস ছিল। কিন্ত সেই ‘লাস্ট হুঁশিয়ারি’ যে ভয়াবহ হবে, তা হয়তো ধারণা করতে পারেননি হামাস নেতারাও।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কার্টজ এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে এই শেষ নয়। গাজায় আরও বড় হামলা চালাবে বলেও জানিয়েছে ইসরাইল। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের শত্রুদের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না।’ হামাসকে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে সতর্ক করেই এ কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপে না যাওয়া পর্যন্ত তারা কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেবে না। ইসরাইলের বিধ্বংসী হামলার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে জনগণকে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ভয়াবহ এ হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, চীন ও রাশিয়া। হামলা বন্ধে সরব হয়ে উঠেছেন ইউরোপের নেতারাও। 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরামর্শ করেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট। এদিন ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামলা চালানোর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করেছে ইসরাইল। লিভিট বলেছেন, ‘ট্রাম্প বরাবরই স্পষ্ট করেছেন, হামাস, হুথি, ইরান শুধু ইসরাইলকে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকেও আতঙ্কিত করতে চায়। তাদের কঠোর মূল্য দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ হুথি, হিজবুল্লাহ, হামাস, ইরান ও ইরান সমর্থিত সংগঠনগুলোর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত বলেই মনে করেন তিনি। ২ মার্চ থেকে ইসরাইলের অবরোধে বিদ্যুৎ, পানি ও খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। চরম খাদ্য সংকটে বেঁচে থাকার লড়াই করছে ১০ লাখ শিশু। 

উল্লেখ্য, প্রথম ধাপের এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ১ মার্চ শেষ হয়। দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। কিন্তু এ নিয়ে টালবাহনা করছে ইসরাইল। আলোচনার শুরু থেকেই দ্বিতীয় ধাপে না গিয়ে প্রথম ধাপ বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়ে আসছে তারা। 

জামায়াত ও হেফাজতের উদ্বেগ : যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরাইলি হামলায় শিশুসহ চার শতাধিক লোক নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গাজায় ইসরাইলি হামলায় হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে এ হামলা চালিয়েছেন। এ হামলার মাধ্যমে ইসরাইলিদের যুদ্ধবাজ জঙ্গি মনোভাবই আবার নগ্নভাবে প্রকাশিত হলো।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি খতিবে বাঙ্গাল মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, বর্বর দখলদার ইসরাইলি বাহিনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে আবারও গাজায় নির্মম গণহত্যা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ জনগণের ওপর এ হত্যাযজ্ঞ শুধু ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নয়, বরং গোটা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম