Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

ডিসেম্বরে নির্বাচন, সংস্কার এর মধ্যে করতে হবে

ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান * পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না * আমরা দুনিয়ার মাঠের খেলোয়াড়, ছোট মাঠের নয়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডিসেম্বরে নির্বাচন, সংস্কার এর মধ্যে করতে হবে

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তৃতা করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস -পিআইডি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। ইতোমধ্যে আমরা সাত মাস পার করেছি। ‘আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই, করে ফেলতে হবে।’ পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারও জন্য অপেক্ষা করে কোনো ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে। আর পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। 

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সোমবার মাঠপর্যায়ের ১২৭ জন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ দুনিয়ার মাঠে খেলার খেলোয়াড়, ছোট মাঠে খেলার খেলোয়াড় নয়। স্বপ্নের, সাধের বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে দলবদ্ধ খেলোয়াড় হিসাবে খেলতে হবে। টিমওয়ার্ক জরুরি এবং বাংলাদেশে যতগুলো টিম আছে তার মধ্যে পুলিশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অনেক গাড়ি পুড়েছে। স্থাপনা ভাঙচুর হয়েছে। এগুলো সংস্কার এবং পুলিশের আবাসন সমস্যা। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ ও রাজশাহী পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে একটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে। দেশে যত টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুলিশ। সরকার যা কিছুই করতে চায়, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তারা সব করে দেয় না, তারা পরিবেশটা সৃষ্টি করে। যে পরিবেশটা না থাকলে কোনো কাজই আর হয় না। পুলিশের কথা প্রসঙ্গে বারবার আমরা দুটি শব্দ বলছি আইন ও শৃঙ্খলা। পুলিশের হাতেই এটাকে কার্যকর করতে হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে সরকার, গণতান্ত্রিক ও নাগরিকের অধিকারের কিছুই থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই বাকি জিনিসগুলো হয়। আইনশৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করতে পুলিশের অত্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে। এগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।’ 

ড. ইউনূস বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে আমরা মস্তবড় সুযোগ পেয়েছি। এটাকে যেন হারিয়ে না ফেলি। আমরাও সেটা চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে যারা আসবে তারাও আশা করি চেষ্টা করবে। পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দিই। এই পথ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী একটা মস্তবড় ভূমিকা পালন করতে পারে। লন্ডভন্ড অবস্থার মধ্যে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। সারা দুনিয়ার যত দেশ আছে, সবাই আমাদের সমর্থন করল। শুধু মিনমিনে সমর্থন নয়। উৎসাহভরে এগিয়ে এলো। তারা মনে করেছে, এই দেশ উঠে দাঁড়াতে পারলে ভালো সঙ্গী হবে সবার। আমাদের ওপর তারা ভরসা করে।’ একইভাবে নিজেদের ওপর ভরসা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর মুশকিল হলো, ওই অন্ধকার যুগে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। তবে নিজের ইচ্ছায় নয়, সরকারি কাজ করতে গিয়ে হয়েছে। কাজেই নতুন দেশে পুলিশকে দেখিয়ে দিতে হবে আমরা মানুষ খারাপ না, খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। দেখো আমরা কী করতে পারি। কাজের মাধ্যমে আমরা দেখাব যে, আমাদের হাত দিয়েই এই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে। আমরা বড় রকম ভূমিকা পালন করব। আমরা ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে, মানুষ অতীতের সব কথা ভুলে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘১৬ বছরের ইতিহাস আমরা বদলাতে পারব না। এতদিনের কালিমা সারা গায়ে মাখা আছে। রাতারাতি সেটা পালটাতে পারব না। একজন মানুষ হিসাবে আমি কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারি। নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী হিসাবে আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে।’

তিনি বলেন, অতীত নিয়ে কান্নাকাটির দরকার নেই। নতুনের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং এটা করে দেখাব। পুলিশের ব্যাপারে ধারণা হলো তারা খারাপটাই আগে দেখে। কিন্তু আমরা ভালোটা আগে দেখব, ভালোটা আগে করব। দু-একজন দুর্নীতিবাজ হলে বাহিনী পালটায় না। বাহিনী সামগ্রিকভাবে একটা কাঠামো এবং এই কাঠামোর অনেক শক্তি। পুলিশকে নতুন শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষকে বাধা দেব না। তার পথকে সহজ করব। তার পাশে থাকব। তাহলে দেখব যে, এ দেশের কোনো সমস্যা হবে না। শুধু মানুষের পাশে থেকে তাদের আইনের ভেতরে রাখতে হবে। তাকে বলতে হবে, আইনের ভেতরে থাকেন, আপনার যা দরকার আমি করে দেব।’ 

নির্বাচন আসন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন আসছে, নানারকমের সমস্যা হবে, চাপ আসবে। অনেকে ডেসপারেট হয়ে যাবে আমার কেন্দ্রে জিতাতে হবে, ওর কেন্দ্রে জিতাতে হবে। সেখানে পুলিশ আইন মানতে চাইলে তারা ক্ষ্যাপাক্ষেপি করবে। আমাদের সেখানে শক্ত থাকতে হবে, আইনের ভেতরে থাকতে হবে। যাতে করে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, সে সরকার আইনের সরকার হয়। যে আইন ভেঙে আসবে, সে কখনো আইন ধরে রাখতে পারবে না। কারণ, আইন ভাঙাই তার অভ্যাস।’ ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বৈঠকে উপস্থিত একজন অতিরিক্ত আইজিপি যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের অনেক সমস্যা আছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের অনেক গাড়ি পুড়ে গেছে। থানাগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশি স্থাপনায় ভাঙচুর হয়েছে। এগুলো সংস্কার করা দরকার। একটি ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এসপি ফারজানা ইসলামের বক্তব্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের আবাসন অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যারাকগুলোতে পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত গাদাগাদি অবস্থায় বসবাস করেন। সারাদিন অনেক কষ্ট করার পর তারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। তাই ব্যারাকগুলোতে সুন্দরভাবে বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। 

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী যুগান্তরকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের খুবই সাধারণ আলোচনা হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে নতুন উদ্যমে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এর আগে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বসেছিলেন। এর পরই তিনি এসপিদের সঙ্গে বসার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এরই ধারাবাহিতায় আজকের (সোমবার) বৈঠক। বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহীর এসপি ফারজানা ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার কাছে বক্তব্য তুলে ধরেন। 

নাম প্রকাশ না করে বৈঠকে থাকা ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের মনোবলের ঘাটতির বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ একটু অ্যাডভান্স থাকলেও লোকালে যারা আছে তাদের মনোবলের ঘাটতি রয়েছে। মনোবল ফেরানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। এ প্রেক্ষিতে উৎসাহমূলক পজিটিভ কথা বলে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা যেন আইনের মধ্যে থেকে যথাযথ নাগরিকসেবা দিই এ বিষয়ে তিনি জোর দিয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংস্কার কমিশন পুলিশের যে সংস্কার নিয়ে কাজ করছে সেটা পুলিশেরও দাবি।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম