Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

সালমানের পকেটে টিকার ২২ হাজার কোটি টাকা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সালমানের পকেটে টিকার ২২ হাজার কোটি টাকা

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আমদানির নামে ২২ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট রাষ্ট্রের এই বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ আছে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সোমবার দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক আফরোজা হক খানের নেতৃত্বে চার সদস্যদের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপর তিন সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার এবং দুই উপসহকারী পরিচালক মো. জুয়েল রানা ও কাজী হাফিজুর রহমান।

অভিযোগে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির সময় ২০২১ সালে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার জন্য সে বছরের ডিসেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। এতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।

বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে টিকা কেনার ওই চুক্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, সেই টিকা কেনার ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করা হয়নি। বেক্সিমকো ফার্মার চাপে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একটি উৎস ছাড়া বিকল্প উৎস অনুসন্ধানে উদ্যোগেরও ঘাটতি ছিল। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত প্রতিনিধিদের মধ্যে সরকারদলীয় সংসদ-সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও আছেন। আইন লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টিকা আমদানি করে তৃতীয় পক্ষকে লাভবান হওয়ায় সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে টিকা আমদানিতে তৃতীয় পক্ষ হিসাবে বেক্সিমকো ফার্মাকে অন্তর্ভুক্ত করায় অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি দামে বাংলাদেশকে সেরামের টিকা কিনতে হয়েছে। সরকার সরাসরি সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে টিকা আনলে প্রতি ডোজে যে টাকা বাঁচত, তা দিয়ে আরও ৬৮ লাখ বেশি টিকা কেনা সম্ভব হতো। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ভারত থেকে আমদানি করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোডিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজ থেকে অন্য সব খরচ মিটিয়ে ৭৭ টাকা করে লাভ করেছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ৭০ মিলিয়ন ডোজ পেয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, চীন থেকে সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের ৩ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডোজ আমদানিতে ২৭ দশমিক ৪৭৫ বিলিয়ন টাকা খরচ হয়েছে, যা প্রতিটি ৮ হাজার ৭২২ টাকা বা ১০০ ডলারে নেমে আসে। কিন্তু ওই বছরের ২৭ মে একটি সরকারি কমিটি ১৫ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন প্রতিটি ১০ ডলারে কেনার অনুমোদন দেয়। এভাবেই ভ্যাকসিন কেনার ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা ঘটে।

এছাড়াও সরকারিভাবে পরিচালিত একটি কোভিড পরীক্ষার জন্য ৩ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। একই পরীক্ষা প্রাইভেট স্বাস্থ্য সুবিধাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এ খাতেও সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। চার বছর আগে ওই মহামারির সময় করোনা ভ্যাকসিন আমদানিকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে ওই ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছিল বলে অভিযোগে বলা হয়।

সিন্ডিকেটে অন্য সদস্যদের মধ্যে তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের নাম থাকার কথাও বলা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে টিকা আমদানি করে চক্রটি অন্তত ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, কোডিড-১৯ টিকা ক্রয় এবং বিতরণের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ খরচ সর্বোচ্চ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সালমান এফ রহমান আলাদা কমিশন নিয়েছেন, যা আর কোনো দেশে ঘটেনি। সালমান এফ রহমান তার নিজের প্রতিষ্ঠানকে তার প্রভাব খাটিয়ে লাভবান করে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করেছেন।

এছাড়া একই সিন্ডিকেটের শক্তির বলয়ে দেশীয় আবিষ্কার গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্সে টিকা প্রক্রিয়া আটকে যায় উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, চক্রটি তাদের পকেট ভারী করতেই মূলত বাংলাদেশ আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদনের বিষয়ে গড়িমসি করেছে। বঙ্গভ্যাক্সের অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অন্তত অর্ধডজন চিঠি দিয়েও কোনো সহায়তা মেলেনি। প্রতিষ্ঠানটির অফিসে হামলা করা হয়েছে। গবেষকদের হুমকি দেওয়া হয়। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান নিয়েও ক্ষমতাধরদের দাপটে সবকিছু মুখ বুজে মেনে নিয়েছিল গ্লোব বায়োটেক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম