Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ইফতারে শুধুই কাঁদেন শহিদ ফাইয়াজের মা-বাবা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইফতারে শুধুই কাঁদেন শহিদ ফাইয়াজের মা-বাবা

ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারের হিংস্র দানবরা ১৮ জুলাই গুলি করে হত্যা করেছে কলেজছাত্র ফারহান ফাইয়াজকে। ছেলের আকস্মিক এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু শূন্য করে দিয়েছে পুরো পরিবারকে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফাইয়াজের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকাহত স্বজনদের অপেক্ষা। ২২৫ দিন আগে শহিদ হওয়া ফাইয়াজের জন্য তাদের অপেক্ষা! কিন্তু ফাইয়াজ আসে না। তার থাকার রুম, পড়ার টেবিল, বই-খাতা সবই পড়ে আছে-নেই শুধু ফাইয়াজ।

ফাইয়াজের বাবা, মা আর ছোট্ট বোন ইফতার তৈরি করছিলেন। চোখে-মুখে এখনো তাদের শোকের ছাপ। এক এক করে টেবিলে যখন ইফতার সাজানো হচ্ছিল তখন মা ফারহানা দিবা শুধু কাঁদছিলেন। ছোট্ট বোন সায়ীমা ইসলাম মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেও কাঁদছিলেন। পাশে থাকা বাবা শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়াও চেয়ারের কোনায় বসে বিলাপ করছিলেন। একটি প্লেটে ইফতার সাজাচ্ছিলেন মা। তার অশ্রুতে ভিজে যাচ্ছিল ইফতার। টেবিলের চারপাশে ৪টি চেয়ার। একটি চেয়ার খালি। যে চেয়ারে মা-বাবা আর বোনের সঙ্গে বসে ইফতার করতেন ফাইয়াজ। ১৭ বছরের ফাইয়াজ রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে পড়তেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজধানীতে শহিদদের তালিকায় প্রথম নামটি ফাইয়াজের। তার মৃত্যুতেই পুরো রাজধানীতে আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

শুধু শহিদ ফাইয়াজের পরিবারে নয়, শহিদ পরিবারে সেহরি-ইফতার শুধু নামেই হচ্ছে-থাকছে না আনন্দ উচ্ছ্বাস। গত রমজানেও যে পরিবারগুলোতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল, এ রমজানে শুধুই অপেক্ষা আর ক্ষোভ। ক্ষোভের সঙ্গে ক্রোধের আগুনে জ্বলছে এক একটি পরিবার। স্বজনরা ক্ষোভ ঝেড়ে বলছেন, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। হাসিনাসহ খুনিদের ফাঁসি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না। সর্বপ্রথম বিচার নিশ্চিত করা হোক জুলাই হত্যার।

মঙ্গলবার বিকালে শহিদ ফাইয়াজের বাসায় তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র যখন ঘুরে দেখছিলেন যুগান্তরের এই প্রতিবেদক তখন দেখা হয় ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়ার সঙ্গে। চোখে-মুখে স্পষ্ট কান্নার ছাপ। তিনি বললেন, ‘আমাদের ইফতার বলতে কিছুই নেই। দয়া করে ইফতার করে যাবেন। ছেলে ছাড়া ইফতার-খাওয়া-দাওয়া কেমন যে লাগে... বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় বাবা।’

ফাইয়াজের বোন সায়ীমা বললেন, ‘ভাই নেই-আমাদের কোনো আনন্দ নেই। এ চেয়ারে বসেই ভাই ইফতার করতেন। আম্মা যখন ইফতার তৈরি করেন সারাক্ষণই কাঁদেন। আম্মার কান্না দেখে আমিও কাঁদি, বাবাও কাঁদেন। কেঁদে কেঁদেই আমাদের ইফতার করা হয়। ভাইকে খুন করা হয়েছে, খুনিদের বিচার হবে সবচেয়ে দ্রুত। দ্রুত বিচার হলেই কেবল আমরাসহ শহিদরা শান্তি পাবে।’

খালি চেয়ারের এক পাশে মা বসে কাঁদছিলেন। তার দুচোখের পানি গড়িয়ে ইফতারের প্লেটে পড়ছিল। সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বাবাও বারবার কেঁদে উঠছিলেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব সমন্বয়ক মিশু আলী সুহানও দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন, সঙ্গে কাঁদছিলেন দুই বন্ধু সেবা ও সুমাইয়া। ইফতারের আগে মাইকে আজান পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহায় মায়ের কান্না আরও বেড়ে যায়। খালি চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে তিনি শুধুই কেঁদে যাচ্ছিলেন।’

বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, ছেলে গরুর চাপ, নান রুটি, পিৎজ্জা খেতে খুব ভালোবাসত। ঘরে মা ও বোনের রান্না করা খাবার খুব মজা করে খেত। আমার কাছে সরাসরি কোনো কিছু চাইত না-তার যত চাওয়া-পাওয়া ছিল মা ও বোনের কাছে। ছেলে বলত, সরকারি চাকরি করবে না। এইচএসসি পাশ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাবে, মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করবে। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে, এমনটাই আশা ছিল ফাইয়াজের।

শহিদ ছেলের নামে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন একটি হলের নামকরণ করা হয়-এমনটাই তিনি অনুরোধ করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং খোদ প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যে করেই হোক ছেলের নামে যেন একটি হলের নামকরণ করা হয়।

মা ফারহানা দিবা বলছিলেন, যার সন্তান যায়, সে বুঝে। আমরা শোকে পাথর হয়ে গেছি। যাদের রক্তে নতুন দেশ হলো, তাদের হত্যাকারীদের যেন খুব দ্রুত বিচার করা হয়। ফাইয়াজসহ সব শহিদের জন্য তিনি দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, রমজানে যেন শহিদদের জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দোয়া পড়ানো হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম