Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গুম কমিশনের সংবাদ সম্মেলন

এবার পুলিশ লাইনেও গোপন বন্দিশালা

ভারতে আটক ১০৬৭ বাংলাদেশির তালিকা পাওয়া গেছে

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এবার পুলিশ লাইনেও গোপন বন্দিশালা

পুলিশ লাইনে গোপন বন্দিশালা পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। বগুড়া পুলিশ লাইনে এ বন্দিশালা পাওয়া গেছে, যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো বলে জানিয়েছেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। নূর খান বলেন, পুলিশ লাইনের ভেতরে কারাগারের মতো গোপন বন্দিশালা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। যেটি একেবারেই এবসার্ট একটা ব্যাপার। সেটি আমরা বগুড়ায় পেয়েছি। আমাদের ধারণা অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের বন্দিশালা আরও পাব।

এসব বন্দিশালা গত ১৫ বছরে করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নূর খান বলেন, এগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যেই বানানো হয়েছে। সম্ভবত গত ১০-১২ বছরের মতো। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দিদের এনে রাখা হতো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো এবং এখান থেকেও অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।

একই সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গত দুই-আড়াই বছরে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক ১০৬৭ বাংলাদেশির নাম-ঠিকানাসহ একটি তালিকা পাওয়া গেছে। গুমের শিকার লোকদের কেউ কেউ সেখানে থাকতে পারেন। বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, কমিশনের কাছে গুমের শিকার এমন ৩৩০ জনের তালিকা আছে। ওই ব্যক্তিদের ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায় রয়েছে। এ দায় বাহিনীর ওপর বর্তায় না।

মইনুল ইসলাম বলেন, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। সেখানে আটক বাংলাদেশিদের নাম ঠিকানাসহ একটি তালিকা পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তালিকায় গুমের শিকার কোনো ব্যক্তির নাম আছে কিনা তার অনুসন্ধান চলমান। তিনি বলেন, পুলিশ ও বিজিবির পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ তথ্যপ্রাপ্তি সাপেক্ষে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তবে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের গুমের শিকার ব্যক্তিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর বর্ডার দিয়ে পুশইন করা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং কালিমা মোচন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ রয়েছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কমিশন অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এই তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই কমিশনের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, অপরাধীরা অনেক সময় আইনের হাত থেকে বাঁচতে নিজেদের ধর্ম, সম্প্রদায় বা সামাজিক গোষ্ঠীর আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করে। এই প্রবণতাকে বলা হয় ‘আইডেন্টিটি বেজড ডিফেন্স’ বা ‘কমিউনিটি শিল্ডিং’। তবে ফৌজদারি অপরাধ সর্বদাই ব্যক্তিগত দায়ের মধ্যে পড়ে, এতে গোটা বাহিনীকে দায়ী করার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য গুমের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গুম তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধান অনুযায়ী, প্রতিটি গুমের ঘটনা তৎকালীন সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পরিচালিত হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত গুমের ঘটনায় সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্দেশ ছিল। গুম তদন্ত কমিশনে এ পর্যন্ত ১,৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১,০০০টি অভিযোগের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৪৫ জন কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। কমিশন জানায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ১৪০ জনের একটি তালিকা যাচাই করে সেখানে গুম হওয়ার কারও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, ‘গুমের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা আমাদের বলেছেন যে, তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ মেনেই কাজ করতেন।’

সংবাদ সম্মেলনে এসময় গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী এবং মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম