আবাসিক হোটেলে আগুন, প্রাণ গেল চারজনের
ছেলেকে বিদায় জানাতে এসে বাবার চিরবিদায়

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর শাহজাদপুরে বীরউত্তম রফিকুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে একটি আবাসিক হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে সোমবার চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হোটেল সৌদিয়া নামের ছয়তলা ওই ভবনে দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ আগুন লাগে। এ সময় ভেতরে থাকা অনেকে কাচের দেয়াল ভেঙে লাফিয়ে নিচে নামেন। প্রাণ বাঁচাতে ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনজন। কিন্তু গেট তালাবদ্ধ থাকায় তাদের মুখোমুখি হতে হয় চরম নির্মমতার। আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় এক কক্ষের শৌচাগারে। মৃতদের চারজনই পুরুষ। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত মিরন জোয়ারদার নামে একজনের পরিচয় জানা গেছে। প্রবাসগামী ছেলেকে বিদায় দিতে পিরোজপুর থেকে সকালেই ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।
মিরনের ছেলে মুনিম জোয়ারদার জানান, আজ সন্ধ্যায় তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা। শনিবার তিনি ঢাকায় এসে রামপুরায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠেন। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে সোমবার ভোরে তার বাবা ও মামা ঢাকায় আসেন। সকাল ৮টার দিকে হোটেল সৌদিয়াতে ওঠেন তারা। আগুন লাগার আগে তিনি (মুনিম) ও তার মামা বাইরে যান নাস্তা খেতে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, ছয় ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত সামনের অংশে হার্ডওয়্যার ও বিউটি পার্লারের দোকান। বাকিটা আবাসিক হোটেল। স্থানীয়রা জানান, গোল্ডেন টিউলিপ নামের ওই বিউটি পার্লার থেকে আগুনের সূত্রপাত। প্রত্যক্ষদর্শী সাগর নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ১২টার দিকে বিউটি পার্লার থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া বের হতে থাকে। মুহূর্তেই সব ভবনে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিন ও চারতলা থেকে গ্লাস ভেঙে কয়েকজন লাফিয়ে নিচে পড়েন।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) কাজী নজমুজজামান বলেন, ১২টা ১৭ মিনিটে আমরা আগুন লাগার সংবাদ পাই। আমাদের বারিধারা ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট ১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। দ্বিতীয় তলায় আগুন ও প্রচণ্ড ধোঁয়া দেখা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দুটি ইউনিট কাজ শুরু করে। তাদের সাহায্য করতে তেজগাঁও স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট পাঠানো হয়। ৩০ মিনিটের ভেতরেই আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং ১টা ৪০ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়।
নজমুজজামান আরও বলেন, আমরা চিলেকোঠায় তিনজনকে মৃত অবস্থায় পাই। একজনকে বাথরুমে। চিলেকোঠার যে দরজা সেটি বন্ধ ছিল। অর্থাৎ প্রচণ্ড ধোঁয়া হওয়ার কারণে এই আবাসিক হোটেলের ভেতরে যারা ছিল তারা বাঁচার জন্য উপরে উঠে গেছে। কিন্তু উপরে উঠলেও ছাদের দরজা বন্ধ অবস্থায় থাকায় তারা আর বের হতে পারেনি। ধোঁয়ার কারণে লোকগুলো মারা যায়। এ ছাড়া দুজনকে আহত অবস্থায় আমরা উদ্ধার করি।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে নজমুজজামান বলেন, আগুনের কারণটা তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, রাজউকের নিয়মমাফিক বিল্ডিং তৈরি করা হয়নি। এই বিল্ডিংয়ে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান ও কোনো ফায়ার সেফটি ব্যবস্থাও ছিল না। সিঁড়িগুলো ছিল সরু। তিন ফিটের মতো একটি সিঁড়ি ছিল। সিঁড়ির পাশের জানালাগুলোও কাচ দিয়ে বন্ধ করা ছিল। কাচ দিয়ে বন্ধ করা না থাকলে কিন্তু ধোঁয়া বের হয়ে যেতে পারত। তাহলে এই লোকগুলো বাঁচতে পারত।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তিনজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মিরন জোয়ারদারের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। ময়নাতদন্তের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।