জনহয়রানি বন্ধে আরও সক্রিয় ভূমি মন্ত্রণালয়
ক্রমেই বাড়ছে সেবার মান * ভালো কাজের জন্য পুরস্কার, খারাপ কাজে শাস্তি নিশ্চিত

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও ভূমি মন্ত্রণালয় জনসেবায় পিছিয়ে নেই। বরং অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় ভূমিসেবা যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ কার্যকরভাবে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার যোগদানের পর থেকে সেবার মান বৃদ্ধিসহ জবাবদিহিতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। সেবাপ্রার্থী ও ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আগামী ১০ মার্চের মধ্যে অনলাইনে নামজারি (মিউটেশন), ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান এবং ভূমি রেকর্ড-ম্যাপ নতুন সফটওয়ারে পাওয়া যাবে। সফটওয়্যার আপডেট করার জন্য বেশ কিছুদিন গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে সমস্যা হলেও বর্তমানে আর কোনো সমস্যা নেই। এতে গ্রাহকসেবায় নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বর্তমান সরকারের গত সাত মাসে বেশ কিছু ইতিবাচক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে কর্মরত কানুনগো, সার্ভেয়ার, জারিকারক, প্রসেস সার্ভেয়ার, ড্রাফটম্যান, খারিজ সহকারী এবং চেইনম্যানদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনলাইন সেবায় যেসব কর্মচারী বিশেষ অবদান রাখবে তাদের প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষর সংবলিত প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গ্রুপ ছবি করার সুযোগ পাবেন মাঠের সেরা কর্মীরা। মাঠপর্যায়ে অনলাইন সেবা প্রদানের জন্য বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস গ্রহণ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের এখতিয়ার দিয়ে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যা ভূমিসেবা সহায়তা নির্দেশিকা-২০২৫ নামে অভিহিত হবে। করণিক ভুল সংশোধনের নতুন পরিপত্রসহ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইনের অধীনে বিধিমালাও জারি করা হয়েছে। বিধিমালার আলোকে কীভাবে জনগণ প্রতিকার পাবেন সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে ওয়ার্কশপ করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে ভূমি অপরাধ আইন ও বিধি সম্পর্কে কর্মচারীরা সুস্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে। রাস্তার পাশের জমি দলগতভাবে কৃষকদের বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কর্মচারীদের শুধু শাস্তি দিয়ে কাজ করানোর পরিবর্তে তাদের যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাদের বেতন, সব ধরনের ভাতা ও বিল, শ্রান্ত বিনোদন ছুটি, পেনশনসহ সব কার্যক্রম মন্ত্রণালয় বা বিভাগীয় কমিশনারের পরিবর্তে জেলা প্রশাসককে নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এতে মাঠের কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হয়েছে। যেসব পদে পদোন্নতি দেওয়া যায় তা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ভূমি প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য মোটরসাইকেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে যারা অপরাধ করবে, তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানান।
জানতে চাইলে ভূমি ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, নতুন নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানে সফটওয়্যার চালু করেছি। নতুন সিস্টেম ও যান্ত্রিক কাজে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা সতর্কতার সঙ্গে পর্যক্ষেণ করছি। আর যদি সমস্যা না হয়, তাহলে আরও ভালো সেবা দেওয়ার জন্য সিস্টেম ডেভেলপ করার চেষ্টা করা হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি ভালো সেবা দিতে পারে, তাহলে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আরও দক্ষ করে তোলা হবে। আমরা চাই দেশের কোথাও যেন ভূমি অফিসে গিয়ে কেউ হয়রানির শিকার না হয়।
জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ভূমি অফিসে হয়রানি বলে আর কিছুই থাকবে না। সরকারি অফিসের বাইরেও ভূমিসেবা দেওয়ার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে নীতিমালা জারি করা হয়েছে। ডিসিরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেবেন। ভূমি প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। যেসব বিষয়ে তারা জানত না প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা সেসব বিষয়ে জানতে পারছে। অনেকের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ভুল ধারণা ছিল সেসব শুধরে যাচ্ছে।
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে যেসব কর্মচারী ভালো সেবা দেবে, সুমান অর্জন করবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরযুক্ত প্রশংসাপত্র পাবে তারা। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারা গ্রুপ ছবি তোলার সুযোগও পাবে। কর্মচারীদের নানা ধরনের দাবি ছিল সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে পূরণ করা হয়েছে। এখন তারা বেশ উৎসাহের সঙ্গে কাজ করছেন। তবে সব সুবিধা পাওয়ার পরও যারা অনিয়ম কিংবা দুর্নীতিতে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী আইন ও বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব আরও জানান, যেসব পদে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা নেই সেসব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যেসব পদে পদোন্নতি নিয়ে কর্মচারীরা মামলায় জড়িয়ে পড়েছে, সেসব পদে পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ নেই। মাঠের কর্মীরা মোটরবাইক দাবি করেছে, সরকার তাদের দাবি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নিয়েছে। প্রশিক্ষণ, সুযোগ-সুবিধা এবং মন্ত্রণালয়ের নজরদারি বাড়ানোর ফলে কর্মচারীরা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে পরীক্ষামূলকভাবে ৫টি ভূমি সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। ধানমন্ডি ও কেরানীগঞ্জ সার্কেলে এই ৫টি বেসরকারি সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। যেসব ব্যক্তি নামজারির আবেদন নিজে করতে পারেন না, তারা নামমাত্র কিছু ফির বিনিময়ে সরকার নির্ধারিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নামজারির আবেদন করলে তা গ্রহণ করে নিষ্পত্তি করবে এসিল্যান্ড। এছাড়া ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান ও রেকর্ড এবং ম্যাপসংক্রান্ত যাবতীয় সেবা দেবে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো। পরীক্ষামূলক চালু করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভালো সেবা দিলে দেশের সব উপজেলায় তা চালু করবে সরকার।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাস্তার পাশের পতিত ভূমি দলগতভাবে কৃষকদের চাষাবাদের জন্য বরাদ্দের চিন্তা করা হচ্ছে। এতে দখলসহ নানা ধরনের প্রতিকূলতা থেকে ভূমি রক্ষা করা সম্ভব হবে। বাড়তি ফল ও ফসল দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (বিডিএস) কার্যক্রম নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করতে ৬৯টি ওয়ার্ক স্টেশন, ১৭৪টি ডেক্সটপ, ১৬৮টি ল্যাপটপ, ৩৭টি ডকুমেন্ট স্ক্যানারসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। শিগগির তা পাওয়া যাবে। তাছাড়া সার্ভে নিয়ে সরকার আরও বড় কিছু করার চিন্তা করছে।