Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো চক্রান্তে লিপ্ত: খালেদা জিয়া

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো চক্রান্তে লিপ্ত: খালেদা জিয়া

রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ আজ এক সংকট সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের (সরকার) কাছে জনগণের প্রত্যাশা ন্যূনতম সংস্কার করে সবার কাছে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে দলটির বর্ধিত সভার প্রথম অধিবেশনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিনিয়র নেতারা আপনাদের (দলীয় নেতাকর্মী) নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন-এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান খালেদা জিয়া। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনাদের এতদিনের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সব সময় শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ।’

এখনো ফ্যাসিস্টের দোসররা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ এক ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে। এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররা এবং বাংলাদেশের শত্রুরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। আসুন জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে আগের মতো আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনার নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংহতভাবে গড়ে তুলি।

বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে খালেদা জিয়া পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওদের চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আসুন আমরা আগামী দিনগুলোতে শহিদ জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের আধুনিক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি এবং এত ত্যাগের বিনিময় এই অর্জনকে সুসংহত এবং ঐক্যকে আরও বেগবান করি।’

প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ নয়-এ মন্তব্য করে খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে ছাত্র-যুবকসহ দেশবাসীর কাছে আহ্বান রাখতে চাই, আসুন প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয়, পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।’

লন্ডনে নিজের ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন। গত ৭ জানুয়ারি তাকে কুয়েতের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডন নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেয়। বর্ধিত সভায় দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার বক্তব্যের ঘোষণা দিলে উপস্থিত নেতারা দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। খালেদা জিয়া যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন পাশে ভার্চুয়ালি বসেছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের চেয়ারপারসনের বক্তব্যের সময় তৃণমূলসহ সিনিয়র নেতারা পিনপতন নীরবতার মধ্যে তাদের নেত্রীর কথা শোনেন। এ সময় অনেক নেতাকে আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়তে দেখা যায়।

বক্তব্যের শুরুতেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে যারা শহিদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসনের নির্মম ভয়াবহ দমননীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাান। একই সঙ্গে যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি জানান আন্তরিক সমবেদনা। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর পর নেতারা আবার একসঙ্গে ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হয়েছে। সেজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও আমি সব সময় আপনাদের পাশেই আছি। দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন। আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লাখ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। এখনো তারা আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে।’

সকাল ১১টায় বিএনপির এই বর্ধিত সভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। বর্ধিত সভায় সারা দেশের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার নেতা এতে অংশ নেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম