Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ই-টেন্ডার নিয়ে টিআইবি

কেনাকাটায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে দুর্নীতি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কেনাকাটায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে দুর্নীতি

ছবি: সংগৃহীত

সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম কমাতে ২০১২ সালে চালু হয়েছিল ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) বা ই-টেন্ডার ব্যবস্থা। কিন্তু এক যুগ পার হলেও সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি কমেনি। এটি বরং আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় বলা হয়েছে, সরকারি ক্রয় খাত এখনো জিম্মি হয়ে আছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ঠিকাদারদের হাতে।

রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ক্রয় প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্মকর্তাদের একাংশ, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক ধরনের আঁতাতের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ই-জিপি ব্যবস্থা দুর্নীতি কমানোর বদলে আরও ডিজিটালাইজড ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির রূপ পেয়েছে।’

গবেষণা বলছে, ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারি কেনাকাটার ৯২ শতাংশই হয়েছে মাত্র ১০টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। যেখানে মাত্র ৫ শতাংশ ঠিকাদার পেয়েছেন ৬১ শতাংশের বেশি কাজ, অন্যদিকে ১০ শতাংশ ঠিকাদারের হাতে বাজারের ১ শতাংশেরও কম অংশ রয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, কয়েকজন ঠিকাদার বারবার একই প্রকল্পের কাজ পাচ্ছেন, কখনো এককভাবে, কখনো যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান খুলে। এতে প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নতুন ঠিকাদাররা সুযোগ পাচ্ছেন না, আর নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দখলে চলে যাচ্ছে সরকারি প্রকল্পগুলো।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সরকারি ক্রয় খাত বর্তমানে একদল বিশেষ ঠিকাদারের হাতে জিম্মি। হাতবদল হলেও নিয়ন্ত্রণ থাকে একই গোষ্ঠীর হাতে। ফলে প্রকৃত প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে না, বরং একই চক্র বছরের পর বছর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, ই-টেন্ডার ব্যবস্থা চালুর পরেও এক শ্রেণির ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের মধ্যে অনৈতিক সমঝোতা রয়েছে। যাতে নির্দিষ্ট ঠিকাদার ছাড়া অন্য কেউ সুযোগ না পান। এছাড়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে নতুন উদ্যোক্তারা দরপত্র জমা দিতেও ভয় পান।

টিআইবি বলছে, এই ব্যবস্থা চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। তবে বাস্তবে এটি ঠিকাদারদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতার প্রবণতা রয়েছে। শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্পমূল্যের ৬১.৩১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে সর্বনিু ১০ শতাংশ ঠিকাদারদের দখলে রয়েছে মাত্র ১ শতাংশেরও কম বাজার।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্পমূল্যের ৭৪.৯৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া, গত এক দশকে শীর্ষ ঠিকাদারদের বাজার দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ (আরটিএইচডি) : মাত্র ১১ শতাংশ ঠিকাদার ৯৩.৫৫ শতাংশ প্রকল্পমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে। ১ শতাংশ ঠিকাদারই ৭২.৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে। এই বিভাগে ৯টি বড় ঠিকাদারি নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় : ৯ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্পমূল্যের ৯১.৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। মাত্র ৩৮ জন ঠিকাদার ৩০.৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় : ৭.৪৫ শতাংশ ঠিকাদার ৭১ শতাংশ বাজার শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করছে। ৮১ জন ঠিকাদার ৩২.৩২ শতাংশ বাজারের মালিক।

স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি) : ৯.৭৪ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্পমূল্যের ৬২.৮৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। মাত্র ১ শতাংশ ঠিকাদার (২৯৪ জন) ২৭.৭ শতাংশ বাজার দখল করেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনের সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) কাছে বেশকিছু সুপারিশ জানায় টিআইবি। সেগুলো হলো-যুগ্ম উদ্যোগে (জেভি) ফার্মগুলোর কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যালোচনা করতে স্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে ঠিকাদারদের যোগসাজশ ও বাজার দখলের প্রবণতা রোধসহ বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম