মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ
ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণে নেই যথাযথ উদ্যোগ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে ১৯৫২ সালের এই দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রচিত হয়েছিল স্বাধীনতার সোপান। পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালি জাতি ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছে। কিন্তু ৭৩ বছর পরে এসে প্রশ্ন উঠছে-গৌরবমময় সেই ইতিহাস আমরা কতটা সংরক্ষণ করতে পেরেছি। কিংবা এখনো করতে পারছি।
সাত দশকেরও বেশি সময় পার হলেও ভাষাসংগ্রামী বা ভাষাসৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ভাষাশহিদদের চূড়ান্ত তালিকা দেখতে পায়নি জাতি। কারা আমাদের গৌরবের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন-‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। সেইসব বীরদের পরিচয় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি দীর্ঘদিনেও। শুধু তাই নয়, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও স্থাপনাগুলোও হারাতে বসেছে। চিহ্নিত বা সংরক্ষণ করা যায়নি সব ভাষাশহিদের কবর। রাজধানীসহ সারা দেশে এ ধরনের স্মৃতি নিদর্শনগুলোর সংখ্যাও সীমিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতিহাস ও চেতনার অভাব এবং সংরক্ষণে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে চোখের সামনে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিত পারি’-ভাষা আন্দোলন নিয়ে কালজয়ী এ গানের কথায় রয়েছে একুশ এবং একুশের ইতিহাসকে না ভোলার আকুলতা। সেই আকুলতা আজও জাগ্রত প্রতিটি বাঙালির মনে। আজ প্রভাতফেরি নামবে সারা দেশের পথে পথে। ফুলে ফুলে ভরে উঠবে দেশের সব শহিদ মিনার। দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ ও দেশের ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, যা দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার পরেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলা ভাষার গৌরবের আন্দোলনে সম্পৃক্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশে এক বছর পরে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ১৪ নারীসহ জীবিত ৬৮ জনকে ভাষাসৈনিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেখানে কিছু নামে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি ওই তালিকার। হাইকোর্টের নির্দেশনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির একটি বৈঠক হয়েছিল, যাতে কাজের পদ্ধতির জটিলতা নিয়েই শুধু আলোচনা হয়।
ভাষাশহিদদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে গবেষণাও থমকে আছে। ২১ ফেব্রুয়ারি কতজনকে কবর দেওয়া হয়েছিল সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য নেই কারও কাছে। আজিমপুরে ভাষাশহিদদের কবরগুলোও সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় থাকে। ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ নামের একটি সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে ১১ দফা দাবি জানিয়ে আসছে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে-শহিদদের কবর শনাক্ত ও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা। শহিদ ও সংগ্রামীদের নামে চত্বর, তোরণসহ বিভিন্ন স্থাপনা, স্থান, সড়ক নির্মাণ ও নামকরণ করা। আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত রশিদ বিল্ডিং, শহিদ মিনার হয়ে আজিমপুর কবরস্থান পর্যন্ত সড়কটিকে ‘শহিদ সরণি’ বা ‘ভাষা আন্দোলন স্মৃতি সড়ক’ নামকরণ করা এবং নামফলক লাগানো। ১৮ নভেম্বর ভাষাশহিদ আব্দুল সালামের কবর সংরক্ষণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর একটি আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি।
জানতে চাইলে ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ভাষাশহিদ তো জানা যায় ছয়জন। আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, সালাম, শফিউল, রফিক ও ওলিউল্লাহ। এর বাইরে ছিলেন আওলাদ। কিন্তু তাকে ঠিকমতো চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তবে আসলে যদি ওই সময়ের হিসাব করা যায়, ২১ তারিখের সংখ্যাটা অনেক ছিল। কিন্তু তখন বেশিরভাগ লাশ গায়েব করে ফেলা হয়। ফলে তাদের শনাক্ত করা যায়নি। ২২ তারিখে নবাবপুরে যে মিছিল হয়েছিল, সেখানে ওলিউল্লাহ মারা গেছেন। সেখানেও নাকি অনেকে শহিদ হয়েছিলেন। সেই লাশগুলোও গায়েব করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এতদিন পর্যন্ত আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, শফিউর রহমানের কবর শনাক্ত করা ছিল। আমরা লাস্ট মোমেন্টে এসে পরিবার ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সহায়তায় সালামের কবর শনাক্ত করেছি। আমরা ধারণা করছি, সালামের কবরের পাশে যে জায়গাটা, আবুল বরকতের মাঝের যে জায়গা রফিকের কবর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর ওলিউল্লাহর কবরের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আর যারা তখন শহিদ হয়েছিলেন তাদের নামই পাওয়া যায়নি। ফলে কবরের খোঁজ কিভাবে হবে? ভাষাশহিদ ও সংগ্রামীদের স্মৃতি সংরক্ষণে গবেষণসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এখনো কাজ করার সুযোগ আছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে বিভিন্ন কমিটি করে কাজ করলে এই ইতিহাস ও স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে। এটা না করলে আগামীতে আরও গোঁজামিল হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারাও ভাষাশহিদ ও ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমাদের সবকিছু রক্তের বিনিময়ে অর্জন করতে হয়েছে। ২০২৪ সালে সংগঠিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ধরে রাখতে সবকিছু করতে হবে। এই অর্জন করতে যে রক্ত ও ত্যাগ করতে হয়েছে তা আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যারা রক্ত ও জীবন দিয়েছেন তাদের তালিকা করতে হবে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুব সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসক গোষ্ঠীর চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসেন। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে; সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। আহত হন অনেকে। সবার রক্তের বিনিময়ে বাংলা এ দেশের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়। যার ধারাবাহিকতায় পরে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
৫ বছরে ২৮৫ আইন ও বিধি প্রমিত করেছে বাবাকো : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ (বাবাকো) থেকে গত ৫ বছরের ২৮৫টি আইন, বিধিমালা, নীতি ও নীতিমালা প্রমিতকরণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রমিতকরণ করা হয়েছে ২০টি আইন ও বিধি। সীমিত জনবল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর বসার স্থান বা কক্ষ সংকট রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ অধিশাখায়। নেই পর্যাপ্ত অর্থের বরাদ্দ। মাত্র তিনজন কর্মকর্তা বাংলা প্রমিতকরণের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে একজন ভাষা বিশেষজ্ঞ, একজন সিনিয়র অনুবাদ কর্মকর্তা এবং একজন অনুবাদক কাজ করছেন। এই তিনজনই প্রেষণে কর্মরত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের প্রেষণে আনা হয়েছে। টাকার অভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যাচ্ছে না। এই অধিশাখার জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের নিয়মিত বরাদ্দ থেকে এ শাখার কাজে অর্থ ব্যয় করা হয়।
ওই অধিশাখায় কর্মরত যুগ্ম সচিব খালেদ মোহাম্মদ জাকি যুগান্তরকে বলেন, আগের চেয়ে বাবাকোর কাজ অনেক বেড়েছে। সরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোয় এখন বাংলা ভাষা সম্পর্কিত কোর্স ঢুকানো হয়েছে। অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে সত্যিকার অর্থে দাপ্তরিক কাজে প্রমিত বাংলা লেখার চর্চা হচ্ছে কিনা। এ এখতিয়ার আগে ছিল না।
কর্মসূচি : একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কুরআনখানির আয়োজনসহ সব মসজিদে ভাষাশহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন সড়কদ্বীপে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানগুলোতে বাংলা ভাষার বর্ণমালা সংবলিত ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। এছাড়া দিনটি উপলক্ষ্যে জাতীয় সংবাদপত্র বিশষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
প্রতীকী পদযাত্রা অনুষ্ঠিত : ১১ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবিতে প্রতিবছরের মতো এবারেও বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ১৪৪ ধারা ভঙ্গের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক আমতলা প্রাঙ্গণে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট) থেকে প্রতীকী পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ। এতে উপস্থিত ছিলেন ড. মোমতাজ উদ্দিন আহাম্মদ, ডা. ম আ আ মুক্তাদীর, ভাষাসৈনিক মন্টু কাজী, আওলাদ হোসেন বুলবুল, কবি সৈয়দ নাজমুল আহসান, মীর শামসুল আলম বাবু, মুহাম্মদ হাসানুল বান্না, লুতফুল বাবু, কবি আব্দুস সালাম, অভিনেতা নজরুল ইসলাম, বিজু মোহাম্মদ কবি শশী ইয়াসমিন, ফারজানা রাখী, রিয়াদ হোসেন, রিয়াদ মাহমুদ খান প্রমুখ। পদযাত্রা শেষে ৮ ফাল্গুন ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহিদ দিবসে প্রভাতফেরি করার আহ্বান জানানো হয়।
ভাষাশহিদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা : একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার পরেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতি ১১টা ৫৯ মিনিটে শহিদ মিনারে আসেন। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান এবং সদস্য সচিব সাইফুদ্দীন আহমেদ।
প্রধান উপদেষ্টা রাত ১২টা ১০ মিনিটে শহিদ মিনারে আসেন। তাকেও উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান, একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান এবং সদস্য সচিব সাইফুদ্দীন আহমেদ অভ্যর্থনা জানান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাত ১২টা ১৩ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা রাত ১২টা ১৪ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর রাত ১২টা ১৬ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনার এবং কূটনীতিকরা। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান এবং সদস্য সচিব সাইফুদ্দীন আহমেদসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন ও কমিশনাররা শহিদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ফুল দিতে আসেন। ভাষাসৈনিক, ভাষাসৈনিকদের পরিবারের সদস্যরা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতা, শহিদ পরিবারের সদস্যরা শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমসহ র্যাব, বিজিবি, আসনার বাহিনীর প্রধানরাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রাত ১২টা ৪০ মিনিট থেকে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ অন্যরা শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।
কঠোর নিরাপত্তা : কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ প্রতিটি মোড়ে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। টিএসসি থেকে শহিদ মিনার ও দোয়েল চত্বরগামী সড়কসহ আশপাশের সড়কগুলোতে সব ধরনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত হেঁটে চলাচল করেন।
প্রস্তুত শহিদ মিনার, শ্রদ্ধা নিবেদনে ডিএমপির নির্দেশনা : ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। রং-তুলির আঁচড়ে শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন একুশের আবহ। এদিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রুট অনুসরণে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রুটগুলো হলো-পলাশী ক্রসিং-ভাস্কর্য ক্রসিং-জগন্নাথ হল ক্রসিং হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রবেশ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রমনা ক্রসিং-দোয়েল চত্বর হয়ে প্রস্থান। শাহবাগ ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং, চানখাঁরপুল ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং এবং বকশীবাজার ক্রসিংয়ে ডাইভারশন থাকবে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে না দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় শহিদ মিনারের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে নতুনভাবে এই দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রপতিকে আমরা শহিদ মিনারে ঢুকতে দেব না। আমরা রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবি জানাচ্ছি।