কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে বার্তা
বিরোধ ও সহিংসতা এড়িয়ে চলবে বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যে কোনো ধরনের বিরোধ ও সহিংসতা এড়িয়ে চলবে বিএনপি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন নিয়ে যেন কোনো ভুল বার্তা না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে দলটি। আবার কোনো তৃতীয় পক্ষ যেন সুযোগ নিতে না পারে, সে ব্যাপারেও নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ঘটনার পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় যুবদলের স্থানীয় এক নেতাকে বহিষ্কার করে ইতিবাচক রাজনীতির নজিরও স্থাপন করেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দল ও সংগঠনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই তারা পথ চলবে। তবে তাদের কাছে তথ্য আছে-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে তৃতীয় একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। ওই পক্ষ পরিস্থিতি ঘোলাটে করে একটা ফায়দা নিতে চায়। তৃতীয় পক্ষের কোনো ষড়যন্ত্রে পা দেওয়া যাবে না-এমন বার্তাও তৃণমূলে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির দাবি-সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ছাত্রদল যখন ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে কাজ করছে, ঠিক তখনই ছাত্রদলকে ঘিরে একটা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। একটি পক্ষ নিজেদের বিভিন্ন অপকর্মের দায় ছাত্রদলের ওপর চাপিয়ে দিতে মরিয়া। তারা ছাত্রদলের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে হেয় করা এবং তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে তারা এমনটা করছে। এ প্রচেষ্টাকে ‘সুদূরপ্রসারী পরিকল্পিত চক্রান্ত’ বলে মনে করছে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকেই এ ভূখণ্ডে ছাত্ররাজনীতি ছিল। ছাত্ররাজনীতি এ দেশের মানুষের স্বাধিকার ফেরত এনেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ছাত্ররাই করেছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনও করেছে ছাত্ররা। চব্বিশে ছাত্ররাই আরেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিনির্মাতা এই ছাত্ররাজনীতি। বাংলাদেশের রাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতি একটি আরেকটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সুতরাং ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা অশুভ সংকেত।’
ছাত্রদলের নেতারা জানান, কোনো অশুভ চক্রান্ত বাস্তবায়ন হতে তারা দেবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ ছাত্ররাজনীতির চর্চা বহাল রাখবে। ছাত্ররাজনীতিতে তারা গুণগত পরিবর্তন আনতে চায়। সংগঠনটি মনে করে, ক্যাম্পাসগুলোয় ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়সহ পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি জড়িত। সুতরাং ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কোনো সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে যত বাধা আসবে, সেগুলোকে অতিক্রম করেই ক্যাম্পাসগুলোয় ছাত্ররাজনীতি বহালে তারা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ছাত্রদলকে যথেষ্ট সংযম ও ধৈর্যের সঙ্গে পথচলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের সংঘর্ষে যাতে না জড়ায়, সে ব্যাপারেও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসগুলোয় শান্তিপূর্ণ উপস্থিতি বহাল রাখতেও বলেছে বিএনপি। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘কোনোরূপ তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সঙ্গে কুয়েট শিক্ষার্থীদের ন্যক্কারজনক সহিংসতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদলের হামলা বলে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ওই ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি বলছে, বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি জড়িত। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতি একটি আরেকটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দলটির প্রশ্ন, এই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির মধ্য দিয়ে ছাত্রদলকে টার্গেট করা হচ্ছে কি না। কারণ, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফরম থেকেই রাজনীতি করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে তারা কমিটি দিচ্ছে, সরব রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলও গঠন করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরও ক্যাম্পাসগুলোয় সক্রিয়। কোথাও প্রকাশ্যে, কোথাও গোপনে ছাত্রশিবির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাহলে তো ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত হচ্ছে না। সেখানে ক্যাম্পাসগুলোয় ছাত্রদলের রাজনীতি করতে পরিকল্পিতভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি চক্রান্ত, যা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।