Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

যুগান্তরে চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী রিপোর্ট

আলোচিত ২ এসপিকে স্ট্যান্ডরিলিজ

সাহসী রিপোর্টের জন্য ফোন করে আইজিপির ধন্যবাদ জ্ঞাপন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আলোচিত ২ এসপিকে স্ট্যান্ডরিলিজ

অবশেষে আলোচিত দুই পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বেশুমার দুর্নীতি ও মাদক কারবারে জড়িত থাকার বিষয়ে যুগান্তরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সোমবার তাদের স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ‘আওয়ামী লীগ আমলের অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ, সুনামগঞ্জে এসপির ঘুসের হাট’ শিরোনামে এসপি আফম আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং ‘মিলেমিশে সাড়ে তিন লাখ পিস বিক্রি, এসপির ইয়াবা কারবার’ শিরোনামে ১৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের এসপি মুহাম্মদ রহমত উল্লাহকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। শুরু হয় ব্যবস্থা নেওয়ার অফিশিয়াল প্রক্রিয়া।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এ সংক্রান্ত আদেশে দুই পুলিশ সুপারকে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা পুলিশের পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে দায়িত্বভার অর্পণ করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

এর আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সংশ্লিষ্ট দুই সাংবাদিক যথাক্রমে যুগান্তরের (অনুসন্ধানী সেল) সিনিয়র রিপোর্টার নেসারুল হক খোকন এবং কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনকে ফোন করে এ ধরনের সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। জড়িতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুইদিনের ব্যবধানে যুগান্তরে দুই এসপিকে নিয়ে আলোচিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সারা দেশে তোলপাড় হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনলাইন সংস্করণ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজার হাজার শেয়ার হয়। অনেকে ফেসবুক পেজে মন্তব্য করেন, ‘জুলাই বিপ্লবে যে পুলিশের বিরুদ্ধে শত শত মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ; অথচ শহিদ হওয়া ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ না শুকাতেই আবারও লুটপাটের সাম্রাজ্য কায়েম করেছে একশ্রেণির পুলিশ! আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি।’

এদিকে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম যুগান্তরকে বলেন, কক্সবাজারে মাদক জব্দ করে বিক্রির ঘটনায় যদি কারও সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়, তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি জানান, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এর অংশ হিসাবেই এসপি রহমত উল্লাহকে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়েছে।

প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ফাঁস : অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সোমবার এক জরুরি বৈঠক ডাকেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ। বৈঠকে পুলিশের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন এবং মাদক ব্যবসায় জড়িত কিছু পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এসপি রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বাঁচতে হলে সাংবাদিক জসিমকে মাদক মামলায় ফাঁসাতে হবে। তদন্ত টিমকে বলতে হবে যে, ওই ইয়াবা চালানের সঙ্গে সাংবাদিক জসিম জড়িত। সেটি জব্দ করার কারণেই তিনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ করেছেন।’ পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বৈঠকের এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

‘শ্যালক’ পরিচয়ে হুমকি : প্রতিবেদন প্রকাশের পর সোমবার পিন্টু নামে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে একজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতার শ্যালক পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। একপর্যায়ে তিনি অনেকটা নির্দেশের সুরে প্রতিবেদককে বলেন, ‘এসপি রহমত উল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি যেভাবে বলেন, সেভাবে যুগান্তরে প্রতিবাদ পাঠান...।’ প্রতিবেদকের কাছে ওই ফোনকলের রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।

এদিকে পরিচয় দেওয়া বিএনপি নেতার সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ফোন করা ব্যক্তিকে পাত্তা না দিয়ে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ সাংবাদিককে ফাঁসানোর বৈঠক ও ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করেন। তবে পিন্টু নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ফোন করানোর বিষয়টি স্বীকার করেন।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ইয়াবা বিক্রির ঘটনায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের অন্য কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তাও তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে।

আরও দুই জেলার এসপি স্ট্যান্ডরিলিজ : সোমবার পৃথক চিঠিতে যশোরের এসপি মো. জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ ও নীলফামারীর এসপি মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমকেও পুলিশ সদর দপ্তরে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তবে তাদের কী কারণে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়েছে, সেটি জানা সম্ভব হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম