সাবেক মন্ত্রী ফরহাদের স্ত্রী
ক্যাসিনো সম্রাজ্ঞী মোনালিসা রিমান্ডে

মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী ক্যাসিনো সম্রাজ্ঞী সৈয়দা মোনালিসা ইসলামকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সোমবার মেহেরপুরের আদালত তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার ইস্কাটনের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার গ্রেফতারের খবরে রোববার রাতেই মেহেরপুর জেলা শহর ছাড়াও গ্রামগঞ্জে মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। উৎসবের শহরে পরিণত হয় মেহেরপুর।
কোর্ট ইন্সপেক্টর মানষ রঞ্জন দাস জানান, মোনালিসাকে সোমবার দুপুরে মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আমলি আদালতে হাজির করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের করা একটি মামলায় পুলিশ তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালতের বিচারক শারমিন নাহার তিন দিনের মঞ্জুর করেন। এছাড়া পলি খাতুন নামের এক নারীর করা আরেক মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মামলায় ১২ নম্বর আসামি। মোনালিসা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।
স্থানীয়রা জানান, স্বামী ফরহাদ হোসেন যতটা না ক্ষমতাধর ছিলেন মোনালিসা ছিলেন তার চেয়ে বেশি। মোনালিসা ঢাকা থেকে মেহেরপুরে এলে দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও তদবিরকারীরা ভিড় করতেন। যে ক’দিন অবস্থান করতেন ওই কয়দিন স্থানীয় আবাসিক হোটেলে মানুষের লাইন পড়ে যেত।
অনলাইন জুয়ার নিয়ন্ত্রকও ছিলেন মোনালিসা। জেলার কয়েক হাজার তরুণ এই অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। অনলাইন জুয়াড়িদের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেও প্রশাসন জুয়া বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। অনলাইন জুয়াড়িদের দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষা।
যা স্বীকার করেছেন সাবেক মন্ত্রী ফরহাদের ছোট ভাই দুই মামলায় গ্রেফতার জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেন মৃদুল। গ্রেফতার হওয়ার আগে ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপে তিনি বলেন, মোনালিসা অনলাইন জুয়ার নিয়ন্ত্রক ছিলেন। পুলিশকে ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে মাসে ৪-৫ কোটি টাকা কামাতেন।
মৃদুল আরও বলেছেন, ভাইয়ের দুর্নীতির কারণেই আজ আমরা সবাই ঘরছাড়া, পালিয়ে বেড়াচ্ছি এবং মামলার আসামি হয়েছি। ফরহাদ হোসেন নিয়োগ, বদলিবাণিজ্য প্রভৃতি দুর্নীতির মাধ্যমে ন্যূনতম দুই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি আছে। ঢাকায় একাধিক বাড়ি আছে। সবকিছুর নিয়ন্ত্রক ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও তার স্ত্রী। টাকা ছাড়া টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি কিছুই হতো না।
তিনি বলেন, মোনালিসা ক্যাসিনো সম্রাজ্ঞী হয়ে পুলিশের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন। ক্ষমতা হারানোর পর ৫০ কোটি টাকা দিয়েছেন মামলা থেকে রক্ষা পেতে। তাই তার নামে কোনো মামলা হয়নি। ভাবীর কারণেই আমার ভাই নষ্ট হয়েছে।