বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা
হত্যায় জড়িত ৪ পুলিশ কর্মকর্তা আটক

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের এক ডিআইজিসহ চার কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী ছিলেন। তাদের দাপটে তটস্থ ছিল পুলিশ বাহিনী।
আটকরা হলেন-রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার ও ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম, নীলফামারীর ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান, রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসনাত।
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে শুক্রবার তাদের আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে আনা হয়েছে। শনিবার তাদের আটকের বিষয়টি ডিবির একটি সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে। তবে তাদের কোন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে তা জানায়নি ডিবি। এ বিষয়ে ডিবির দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য দেননি। শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত তাদের আদালতে তোলার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন এসব কর্মকর্তা। তবে সম্প্রতি পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের একটি ভিজুয়াল মিটিংয়ের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই আটক হলেন পুলিশের এ চার কর্মকর্তা। আটক পুলিশ কর্মকর্তারা বেনজীরের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে তারা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ১২টার পর নীলফামারীর ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আটক করে। পরে দুপুরে তাকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলামকেও আটক করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে ঢাকায় পাঠানো হয়। রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসনাতকেও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আটক করেছে।
সূত্র আরও জানায়, আটক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম এক সময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও অন্যান্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
বিসিএস ২৭তম ব্যাচের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বাগেরহাটের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ২০২৪ সালের নির্বাচন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন।
আর পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান কুমিল্লা ও সিলেটে কর্মরত থাকাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কঠোর অবস্থান নেন। এর আগে সিটিটিসিতে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি নাটক’ সাজানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বিসিএস ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। নোয়াখালীতে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন ও আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা করা হয়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিলে ৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসারীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কনফারেন্সে অংশ নেন। সেখানে দেওয়া তার বক্তব্য পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বক্তব্যে বেনজীরকে বলতে শোনা গেছে, পুলিশ ও প্রশাসনে ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগ। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে বেনজীরের। কি করা যায় সেগুলো নিয়ে প্ল্যান করছেন তিনি। আপাতত অধ্যাপক ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না। ইউনূসকে অসহযোগিতা করে ব্যর্থ করে তাড়াতাড়ি নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তারপর বিদ্রোহ করে বিএনপিকে হটাবে। যখন আওয়ামী লীগ সংগঠিত হবে তখন পুলিশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে।
তাকে আরও বলতে শোনা গেছে, ‘প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের অ্যারেস্ট করে কারা, ধরা (অ্যারেস্ট) হচ্ছে ওই পার্টি। কারণ আপনারা জানেন ৫ (৫ আগস্ট) তারিখের পরে একটি বিশাল অফিসার গ্রুপ কর্মস্থল ত্যাগ করেছে। তিন থেকে চারশ অফিসারকে ডিউটি থেকে তুলে নিয়ে সংযুক্ত করে অকার্যকর করে রাখছে। আবার একটি বিশালসংখ্যক লোককে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে। আর রিটায়ার্ড লোককে চাকরিতে নিয়ে আসছে। এরশাদের সময়, বিএনপি ক্ষমতায় ছিল একাধিকবার ওদের সময়, জিয়াউর রহমানের সময়, আশির দশকে রিক্রুট হয়েছে যারা তারা অনেকে এখনো চাকরিতে রয়ে গেছেন। ৯০ দশকে যারা ঢুকছে তারাও অনেকে এখনো চাকরিতে রয়ে গেছেন। সেইগুলোকে ওরা সামনে নিয়ে আসছে। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। আপনারা যখন সংগঠিত হবেন তখন পুলিশকে পাশে পাবেন।