বাধ্যতামূলক অবসর বাতিলের সুপারিশ
বন্ধ হবে প্রশাসনের রাজনৈতিক হাতিয়ার
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
বিগত সরকারগুলো বাধ্যতামূলক অবসরের আইনকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর নির্বিচারে অপপ্রয়োগ করেছে। চাকরির বয়স ২৫ বছর হলেই সরকারের ‘অপছন্দের’ কর্মচারীদের পাঠানো হতো অবসরে। কিন্তু কেন পাঠানো হলো-এর ব্যাখ্যা দিতে হতো না কর্তৃপক্ষকে। এই বিধানটি বাতিলসহ ১৪টি বিভিন্ন শিরোনামে দুই শতাধিক সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সুপারিশের মধ্যে আরও আছে-কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৫ বছর চাকরি করলেই সব সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে পারবেন, এমন সুবিধা রাখার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বর্তমানে ২৫ বছর চাকরি করলে পেনশন-সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুযোগ পান কর্মকর্তারা। এছাড়া সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কাউকে ওএসডি করা যাবে না। অতীতের সরকারগুলো ক্ষমতায় এসেই বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে কোনো কারণ ছাড়াই যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাকে বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হতো।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আরও আছে-ডিসি ও ইউএনওর পদবি পরিবর্তন, ডিসিকে ফৌজদারি মামলার অভিযোগ গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান, বিসিএসে ‘ক্যাডার’ বাদ দিয়ে আলাদা নাম, নিয়োগ-পদোন্নতির জন্য তিন পিএসসি, মন্ত্রণালয় কমিয়ে ২৫, প্রাদেশিক সরকারের প্রস্তাব, উপসচিব পদে ক্যাডার-নন-ক্যাডারদের জন্য পদোন্নতি হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় এবং প্রশাসন ও অন্যদের হবে ৫০:৫০, উপসচিব ও তদূর্ধব কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি সুবিধা বাতিল, ঢাকাকে নয়াদিল্লির আদলে ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট গঠন এবং বিগত সময়ে ভোট ডাকাতি, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তার বিচারে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, সরকারি সেবার প্রাপ্যতা নিয়ে সংসদীয় কমিটির আদলে জেলা-উপজেলায় গণশুনানির আয়োজনসহ একগুচ্ছ নতুন ধারণা দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। বুধবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয় সংস্কার কমিশন। পরে সেখানে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন মুয়ীদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বল্পমেয়াদি কিছু সুপারিশ করেছি যেগুলো ছয় মাসের মধ্যে করা যাবে, মধ্যমেয়াদি কিছু সুপারিশ করেছি যেগুলো এক থেকে দুই বছরের মধ্যে করা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি কিছু সুপারিশ আছে যেগুলো পরবর্তীকালে ক্রমান্বয়ে দেখা যেতে পারে।’
জনপ্রশাসন সংস্কারকে একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া আখ্যায়িত করে সাবেক এই আমলা বলেন, ‘এজন্য আমরা সুপারিশ করেছি একটা স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের জন্য। একই সঙ্গে এই কমিশন যাতে এবারের কমিশনগুলোর রিপোর্ট বাস্তবায়ন তদারকি করতে পারে। জনপ্রশাসনে একটা উদ্ভাবনী ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সেখানে গতানুগতিকের পরিবর্তে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে আসবে।
সরকারি সেবা নিয়ে গণশুনানির সুপারিশ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগ শোনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে একটা গণশুনানি ব্যবস্থা যাতে করা যায়। পাশাপাশি নাগরিক কমিটি গঠনের ওপর সুপারিশ করেছি। জেলা নাগরিক কমিটি এবং উপজেলা নাগরিক কমিটি যাতে গঠিত হয়। যাতে করে নাগরিকদের প্রতিনিধিরা নিয়মিতভাবে সরকারের কাজকর্ম দেখতে পারে। এর সঙ্গে স্থানীয় এনজিও এবং সামাজিক সংগঠনের সংযুক্তির কথা আমরা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন মোট ৪৩টি মন্ত্রণালয় ও ৬১টি বিভাগ আছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা হ্রাস করে ২৫টি মন্ত্রণালয় ও ৪০টি বিভাগের সীমাবদ্ধ করতে বলেছি। পাঁচটি গুচ্ছে মন্ত্রণালয়গুলোকে ভাগ করার জন্য আমরা বলেছি।’ প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়ে কমিশন প্রধান বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করার একটা প্রস্তাব করেছি। আমাদের লোকসংখ্যার কারণে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন খুব একটা কার্যকর থাকে না। যদি চারটা প্রদেশ করা যায়, তাহলে একদিকে এই সমস্যাগুলো যেমন দূর হবে, তেমনি রাজনৈতিক দিক থেকেও একটা প্রভাব আসবে। কারণ একটা কেন্দ্রীয় সরকার একবার বসে গেলে সে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। প্রদেশ হলে আমরা মনে করি সেটা সম্ভব হবে না। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল বিভিন্ন দেশে এই ব্যবস্থা আছে।’
ঢাকার সাভার, গাজীপুরের টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ নিয়ে একটা ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট বা অথরিটি করার সুপারিশ করার কথা তুলে ধরে মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘জেলা পরিষদ বাতিল করার জন্য বলেছি। বিভিন্ন ক্যাডারকে কোনো জায়গায় একত্রিত বা একীভূত করার সুপারিশ করেছি। সুপিরিয়র্স এক্সিকিউটিভ সার্ভিস গঠন করার সুপারিশ করেছি। যাতে শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ সবার হয়। বাইরে থেকেও অর্থাৎ বিদেশে অবস্থান করছে- এমন কোনো প্রতিভাবান যেন আসতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘উপসচিব পর্যায়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এখন প্রশাসনিক সার্ভিসের জন্য ৭৫ শতাংশ কোটা আছে। আমরা এটাকে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছি। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ অন্যান্য সার্ভিসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আমরা সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা কমিটির মাধ্যমে করার সুপারিশ করেছি। যাতে সরকারপ্রধান এটা না করেন।’
বিধিবদ্ধ প্রশাসন, অর্থ-শিল্প ও বাণিজ্য, ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগ, কৃষি ও পরিবেশ, মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন-এই পাঁচটি গুচ্ছে ভাগ করার সুপারিশ করার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন তিনি।
মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পুনর্গঠনের কথা আমরা বলেছি। সেখানে মন্ত্রণালয় আলাদা হয়ে যাবে। এর অধীনে আয়কর, শুল্ক-আবগারি এবং মূল্য সংযোজন কর-এ তিনটা অধিদপ্তর হবে।’
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদবি পরিবর্তন করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা কমিশনার করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে ডিসিদের ফৌজদারি প্রকৃতির মামলার অভিযোগ গ্রহণের ক্ষমতা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) পদবি পরিবর্তন করে উপজেলা কমিশনার করার সুপারিশ করে কমিশন। সব সার্ভিসের মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদগুলো নিয়ে সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস) গঠনের প্রস্তাব করেছে কমিশন। সব সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামূলক পীরক্ষার মাধ্যমে এসইএস নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে মেধার প্রাধান্য পাবে এবং আন্তঃসার্ভিস অসমতা দূর হবে মনে করেন কমিশনসংশ্লিষ্টরা।
মুখ্য সচিব ও সচিব নিয়োগে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করে অতিরিক্ত সচিবদের মধ্য থেকে সচিব এবং সচিবদের মধ্য থেকে মুখ্য সচিব নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করে বাছাই করে কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যমান সুপরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমান সিনিয়র সচিব পদটি বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব এবং সচিবদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা সরকার নির্ধারণ করবে। পদোন্নতি না পেয়েও গুরুদণ্ডের মামলায় অভিযুক্ত না হলে পাবে পরবর্তী উচ্চতর বেতন স্কেল। সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে থেকে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অতীতে যারা পিএস হয়েছেন পরে তাদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের অভিপ্রায় অনুসারে ক্যাডারের বাইরে থেকে পিএস ও এপিএস নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিশন। সরকারের সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদ-সদস্যকে বার্ষিক সম্পদ বিবরণী দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
প্রশাসনিক ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি ও সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে কমিশন। অতীতে যেসব কর্মকর্তা ভোট জালিয়াতি, অর্থ পাচার, দুর্নীতি এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদের বিচারে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। এর পক্ষে মাঠ পর্যায়ে জনমত রয়েছে। পদোন্নতির আগে পুলিশসহ গোয়েন্দা বিভাগের কাছে কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচয় চাওয়ার প্রথা বাতিল করা হয়েছে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার আগে চাকরি প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করা হল। এছাড়া পাসপোর্ট, দ্বৈতনাগরিকত্বসহ অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
সিনিয়র এক্সিকিউিটিভ সার্ভিসে প্রবেশের পর সিনিয়রিটি নির্ধারণ হবে পিএসসির পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেধাক্রম অনুসারে। এসইএসের পরীক্ষার রেজাল্টের ভিত্তিতে সব সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। কোনো কর্মকর্তা দুইবার অকৃতকার্য হলে সে তৃতীয়বার আর এসইএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। বর্তমানে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত সবাই এসইএসের অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া সরকারের সব সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইএসের সদস্য হবেন।
সব সার্ভিসের লাইন পদোন্নতির ক্ষেত্রে যারা এসইএস পরীক্ষা দেবেন না অথবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবেন তারা পদোন্নতি পাবেন। তবে তাদের মান এসইএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সমান হবে না। প্রস্তাবিত বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিসের (বর্তমান প্রশাসন ক্যাডারের) এক নম্বর পদ কোনো পদবির প্রস্তাব করেনি কমিশন। পক্ষান্তরে এসইএসের এক নম্বর পদ হলো মন্ত্রিপরিষদ সচিব। প্রশাসনিক সার্ভিসের এক নম্বর পদ প্রস্তাব করা হয়েছে প্রধান কমিশনার এবং এসইএসর এক নম্বর পদ প্রস্তাব করা হয়েছে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। প্রশাসনিক সার্ভিসের গ্রেড-১ পদ হলো বিভাগীয় কমিশনার। এসইএসের গ্রেড-১ পদ সচিব। অন্য সার্ভিসের গ্রেড-১ পদ ডিজি।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) আওতায় বিদ্যমান একীভূত ক্যাডার সার্ভিস বাতিল করে সার্ভিসের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা নামকরণের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এক্ষেত্রে বিদ্যমান ২৬টি ক্যাডারকে কমিয়ে ১৩টি প্রধান সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের এসব সার্ভিসে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সার্ভিস ছাড়া বাকি সার্ভিসের নিয়োগ ও পদোন্নতির পরীক্ষার জন্য একটি পিএসসি হবে। এর নাম হবে পিএসসি (সাধারণ)। শিক্ষা সার্ভিসে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (শিক্ষা) এবং স্বাস্থ্য সার্ভিসের নিয়োগ ও পদোন্নতির বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) জন্য পৃথক দুটি পিএসসি করার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমান বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগে একটি পিএসসি কাজ করছে।
পুলিশের পরিবর্তে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অফিসার নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিশন। কারণ বিমানবন্দরে কর্তব্যরত পুলিশের আচরণে দেশি-বিদেশি যাত্রীরা অসন্তুষ্ট বলে মনে করছে কমিশন। জনগণের জন্য সেবা সহজীকরণে ভূমি রেজিস্ট্রেশন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিবাহ নিবন্ধন অফিস ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করা এবং ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। জেলা পরিষদ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে ৯টির পরিবর্তে ১১টি ওয়ার্ড সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র মধ্যে চলমান রেষারেষি নিরসনে সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদ সচিব নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিশন।
বর্তমানে পিএসসির অধীন তিন ধাপের নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। চাকরিপ্রার্থীদের পছন্দ অনুসারে ও পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ক্যাডার নির্ধারণ করা হয়। ক্যাডারগুলো হলো প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কর, কৃষি, আনসার, নিরীক্ষা ও হিসাব, সমবায়, শুল্ক ও আবগারি, পরিবার পরিকল্পনা, মৎস্য, খাদ্য, বন, সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, পশুসম্পদ, ডাক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, রেলওয়ে প্রকৌশল, রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক, সড়ক ও জনপথ, পরিসংখ্যান ও বাণিজ্য ক্যাডার। একেকটি চাকরির কাজের ধরন একেকরকম। পদ-পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধায় ভিন্নতা আছে। এসব নিয়ে ক্যাডারগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বও আছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, এসব ক্যাডারকে ১৩টি সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো প্রশাসনিক সার্ভিস, বিচারিক সার্ভিস, জননিরাপত্তা সার্ভিস, পররাষ্ট্র সার্ভিস, হিসাব সার্ভিস, নিরীক্ষা সার্ভিস, রাজস্ব সার্ভিস, প্রকৌশল সার্ভিস, শিক্ষা সার্ভিস, স্বাস্থ্য সার্ভিস, কৃষি সার্ভিস, তথ্য সার্ভিস এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সার্ভিস।
এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান কিছু ক্যাডার কিছু সার্ভিসে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন বিসিএস খাদ্য ও সমবায়কে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিসের (বর্তমানের প্রশাসন ক্যাডার) সঙ্গে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এই দুটি সার্ভিসে নতুন নিয়োগ করা যাবে না।
বিসিএস (হিসাব ও নিরীক্ষা) সার্ভিসকে দুটো সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। একটি হবে ‘বাংলাদেশ হিসাব সার্ভিস’ এবং আরেকটি হবে ‘বাংলাদেশ নিরীক্ষা সার্ভিস’। কমিশন সুপারিশ করেছে এলজিইডি এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মরত প্রকৌশলীদের প্রকৌশল সার্ভিস’ হিসাবে একীভূত করা হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগদানের তারিখ থেকে পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে।
বর্তমানে বিসিএস (সাধারণ তথ্য) ক্যাডারের অধীনে তিনটি সাব-ক্যাডার আছে। যাদের মধ্যে পদোন্নতির সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য রয়েছে। এসব বৈষম্য দূর করার জন্য তিনটি সাব-ক্যাডারকে বিলুপ্ত করে সহকারী পরিচালক, তথ্য কর্মকর্তা, গবেষণা কর্মকর্তা ও সহকারী অনুষ্ঠান পরিচালক এবং সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক পদগুলো নিয়ে একটি একীভূত সার্ভিস গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে। সম্মিলিত মেধা তালিকার ভিত্তিতে তাদের জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি ও পদায়নের সুপারিশ করেছে কমিশন। সরকারি দপ্তরের আইসিটি কর্মকর্তাদের ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সার্ভিসে’ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিসিএসকে (তথ্য প্রকৌশল) এই সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিসিএস (বন)-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিবেশ সার্ভিসের কর্মকর্তাদের একীভূত করে বাংলাদেশ কৃষি সার্ভিসের উপসার্ভিস হিসেবে ‘বন ও পরিবেশ সার্ভিস’ করারও সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ রকমভাবে আরও কিছু ক্যাডারকে বিভিন্ন ক্যাডারে একীভূত করার কথা বলেছে কমিশন। এছাড়া পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চূড়ান্ত নিয়োগের আগে ডোপটেস্ট করার সুপারিশ করা হয়েছে।