জোর করে উপঢৌকন আদায়
অস্তিত্ব মেলেনি পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের
‘অটিস্টিক সেল’ ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্পে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ * এমন ব্যক্তি ডব্লিউএইচও’র সম্মানজনক পদে থাকা দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের অফিসের ঠিকানায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানকালে দুদক কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। পরে সূচনা ফাউন্ডেশনের কর মওকুফসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের নথি সংগ্রহ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট টিম।
দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম জানান, বুধবার সকালে এনবিআর ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া সূচনা ফাউন্ডেশনের ধানমন্ডির অফিসের ঠিকানায় অভিযান চালায় দুদকের একটি দল। কিন্তু সেখানে অফিসের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন আদায় করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় ‘অটিস্টিক সেল’ ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্পে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এনবিআরের ওপর অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ফাউন্ডেশনের নামে আনা অর্থ করমুক্ত করা এবং মানুষকে জোর করে চাঁদা দিতে বাধ্য করেন পুতুল।
এছাড়া পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক পদ থেকে অপসারণে স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মায়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই পদে পুতুলকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে মনে করে সংস্থাটি।
দুদকের প্রস্তুত করা চিঠিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা তার মেয়ে পুতুলকে ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। কোনো কারণ ছাড়াই মেয়েকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী করেছেন। পুতুলের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসাবে যেসব অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে, তা কেবল কাগুজে ও ফরমায়েশি। মেয়ের অযোগ্যতাকে ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা পুতুলকে সঙ্গে করে ভারতে নিয়ে যান। নিজের পারিবারিক প্রভাব এবং তার নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের বিপুল অর্থ ক্ষতিসাধন করেছেন এবং একই সঙ্গে তাদের কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাষ্ট্রীয় সম্মানহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পুতুল নিজ নামে পূর্বাচল নতুন শহরে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ, ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন আদায় এবং স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্পে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ফাউন্ডেশনের নামে উপার্জিত অর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে করমুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে চূড়ান্ত করা চিঠিতে।
দুদকের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এমন ব্যক্তি বাংলাদেশের হয়ে ডব্লিউএইচওর একটি সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর এবং বিশ্বমণ্ডলে দেশের সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় তার (পুতুল) ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক পদ বাতিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এর আগে ১২ জানুয়ারি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বেআইনিভাবে বরাদ্দের অভিযোগে পুতুল, তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের নামে মামলা করে দুদক।