খসড়া আইন উঠছে আজ
সীমানায় বড় পরিবর্তনের ক্ষমতা চাচ্ছে ইসি
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংসদীয় আসনের সীমানায় বড় পরিবর্তনের সুযোগ রেখে এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই খসড়া আইনে নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোগোলিক অবস্থা ও অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের পাশাপাশি ভোটার সংখ্যার সামঞ্জস্য রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালে পাশ হওয়া ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনের’ ‘৮’ ধারায় সীমানা নির্ধারণে ইসির ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা হয়, সেটা তুলে দেওয়ার বিধান যুক্তের কথা বলা হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের ‘আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি’র বৈঠকে এ খসড়া আইন অনুমোদন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের তৃতীয় সভায় ওই খসড়া আইন অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। ওই বৈঠকে ভোটার তালিকা আইনের খসড়াসহ মোট ১১টি এজেন্ডা রয়েছে। সেখানে নতুন ভোটারদের আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে যে কোনো সময় হালনাগাদ তালিকা প্রকাশে ইসিকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই দুই খসড়া আইনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ যুগান্তরকে বলেন, খসড়া আইন দুটি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। আমরা এ দুটি আইনে কিছু প্রভিশন যুক্ত করেছি। সীমানা পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে শহরে আসন সংখ্যা বাড়ছে, গ্রামে কমছে। আমরা ঢাকাসহ শহর এলাকায় আসন যাতে না বাড়ে, সেজন্য সংশোধনীর সুপারিশ করেছি। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক মতৈক্যের আগে নির্বাচন কমিশন এ দুটি আইনের খসড়া তৈরি করায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একাধিক সদস্য। তারা জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনে ব্যাপক সংশোধনের সুপারিশ করে একটি খসড়া সরকারের কাছে জমা দিতে যাচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সেখানে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা আছে। এছাড়া এ কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনেও সীমানা আইনের সংশোধনের সুপারিশ রয়েছে। এমন অবস্থায় ইসির এমন পদক্ষেপ সংস্কার কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে কিনা-এমন প্রশ্নও তোলেন তারা। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের সুপারিশ করলেও কোনো খসড়া তৈরি করেনি ওই কমিশন। তারা আরও জানান, দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিকদের জন্য পৃথক নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। অথচ আজ অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় এসব নীতিমালা পর্যালোচনার জন্য এজেন্ডায় রাখা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। বিস্তারিত জানার আগে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।
ইসির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভোটগ্রহণ হতে পারে-এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এরই অংশ হিসাবে সীমানা আইন এবং ভোটার তালিকা আইনের সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। ভোটার তালিকা আইন সংশোধন প্রসঙ্গে তারা জানান, গত ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কাজ শুরু করেছে ইসি। জুনের মধ্যে ওই কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদে যারা নতুন ভোটার হবেন, তাদের চূড়ান্ত তালিকা আগামী ২ মার্চ প্রকাশে আইনগত বিধান রয়েছে। এমন অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরে ভোটগ্রহণ হলে হালনাগাদে যেসব ভোটার যুক্ত হবেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। নতুন ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে এ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন প্রসঙ্গে তারা জানান, জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা এবং ভোগোলিক অবস্থান ও অবস্থানকে যুক্ত করায় শহর এলাকায় আসন বাড়ার প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি গ্রাম এলাকায় আবার আসন সংখ্যা বাড়বে। ফলে সংসদীয় আসনের সীমানায় আবারও বড় পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হবে। উদাহরণ হিসাবে তারা বলেন, বর্তমানে ঢাকায় ২০টি সংসদীয় আসন রয়েছে। একটি আসন কমানো হলে বাকি ১৯ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে। একইভাবে যেই জেলায় একটি আসন বাড়বে, সেই জেলার বাকি সব আসনের সীমানায় পরিবর্তন হবে।
সীমানা আইন সংশোধন : জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিগত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই কমিশন মনে করে, ২০০৮ সালে সারা দেশে ১৩০টি আসনের যে পরিবর্তন করা হয়েছিল, তার পেছনে রাজনৈতিক বিশেষ কারণ ছিল। ওই সীমানার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যেসব আসনে পরিবর্তন আনা হয়, সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে এ কমিশনের। এমনকি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ উদ্দেশ্যে ২০২১ সালে আগের অধ্যাদেশ রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করে। সীমানা নির্ধারণ আইনের খসড়া প্রণয়নের যৌক্তিকতায় এসব বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আজ অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় বিদ্যমান আইনের ৬(২) ও ৮(৩) উপধারা সংশোধনের প্রস্তাব উঠছে। ৬(২) উপধারায় বিদ্যমান বিধানের সঙ্গে ‘যতদূর সম্ভব সংশ্লিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক অবস্থা ও অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা এবং ভোটার সংখ্যার সামঞ্জস্য রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ৮(৩) উপধারায় বিদ্যমান বিধানের উপধারা ৮(১) প্রতিস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৮(৩) উপধারায় করণিক ত্রুটির কারণে সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা তৈরির শঙ্কা ছিল। এই উপধারা সংশোধন হলে ওই শঙ্কা দূর হবে এবং ইসির ক্ষমতা অক্ষুণ্ন হবে।
ভোটার তালিকা সংশোধন : জানা গেছে, ভোটার তালিকা আইনের ধারা-৩ ও ১১তে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। উপধারা ৩(জ)-এ নির্বাচন কমিশনকে নির্ধারিত সময়ে ভোটার হালনাগাদ তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সুবিধাজনক সময়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারবে। বর্তমানে প্রতিবছর ২ মার্চ হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের বিধান রয়েছে। এছাড়া ১১(৩) উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর যৌক্তিকতায় সংশ্লিষ্টরা জানান, জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্মকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ প্রস্তাব করা হয়েছে।