Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পুতুল কানাডার নাগরিক!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ পেতে জালিয়াতি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ পেতে জালিয়াতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পদ নেওয়ার সময় সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কানাডার (পাসপোর্টধারী) নাগরিক ছিলেন। বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে মায়ের প্রভাব খাটিয়ে তিনি ডব্লিউএইচওর পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিং শেষে আলাপকালে দুদক কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের আশ্রয় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদক। অভিযোগের ওপর পরিচালিত অনুসন্ধানে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা গেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে বাংলাদেশের মনোনয়নের ভিত্তিতে পদায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

আরও জানা গেছে, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে-যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ ছাড়াই সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে সঙ্গী করা হয়। তাছাড়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসাবে প্রদত্ত তথ্য যথাযথ ছিল না। ওই মনোনয়নকালে তিনি কানাডার পাসপোর্টধারী তথা কানাডার নাগরিক ছিলেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম সম্মেলন উপলক্ষ্যে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লিতে বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে শতাধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদল উপস্থিত হয়। এক্ষেত্রে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজের পারিবারিক প্রভাব এবং তার নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারের বিপুল অর্থ ক্ষতিসাধন করেছেন।

জানা গেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। তাকে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

দুদকের প্রস্তুত করা চিঠিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। কোনো কারণ ছাড়াই মেয়েকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী করেছেন। সায়মা ওয়াজেদের ক্ষেত্রে, প্রার্থীর যোগ্যতা হিসাবে যেসব অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে, তা শুধু কাগুজে ও ফরমায়েশি। মেয়ের অযোগ্যতাকে ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২৩ সালে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা তার মেয়ে পুতুলকে সঙ্গে করে ভারত নিয়ে যান। নিজের পারিবারিক প্রভাব এবং তার নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের বিপুল অর্থ ক্ষতিসাধন করেছেন এবং একই সঙ্গে তাদের কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাষ্ট্রীয় সম্মানহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পুতুল নিজ নামে পূর্বাচল নতুন শহরে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ, ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন আদায় ও স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্প রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ফাউন্ডেশনের নামে উপার্জিত অর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে করমুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে চূড়ান্ত করা চিঠিতে।

পুতুলকে অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে প্রস্তুত করা দুদকের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এহেন ব্যক্তি বাংলাদেশের কর্তৃক মনোনীত হয়ে ডব্লিউএইচওর একটি সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর এবং বিশ্বমণ্ডলে দেশের সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায়, তাকে (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদ বাতিলপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে ১২ জানুয়ারি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বেআইনিভাবে বরাদ্দের অভিযোগে পুতুলকে প্রধান আসামি ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের নামে মামলা করেছে দুদক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম