
প্রিন্ট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ এএম
ইসরাইলের গুলি কেড়ে নিল শিশু লায়লার জীবন

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনার গুলিতে নিহত হয়েছে আড়াই বছরের শিশু লায়লা। শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম তীরের জেনিনের মার্টিয়ার্স ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় সেনারা লায়লার মাথায় গুলি করে। নির্মম এ হত্যার ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। খবর এএফপি, হারেৎজ, আলজাজিরা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শনিবার পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরাইলি সেনারা তল্লাশি অভিযানের সময় আড়াই বছরের এক শিশুর মাথায় গুলি করে। এতে শিশুটি গুরুতর আহত হয়। মেয়ে শিশুটির নাম লায়লা মোহাম্মদ আয়মান আল-খাতিব। দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা লায়লাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযানের সময় লায়লার সন্তানসম্ভবা মাও আহত হয়েছেন। তিনি এক হাতে আঘাত পেয়েছেন, তবে তার আঘাত গুরুতর নয়। এছাড়া লায়লার নিহতের ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। তাদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা লুকিয়ে আছে-আগে থেকে পাওয়া এমন তথ্যের ভিত্তিতে একটি ভবন লক্ষ্য করে ইসরাইলি সেনারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে ছিল।
আইডিএফ আরও স্বীকার করেছে, গুলি চালানোর পর তারা বুঝতে পারে যে তাদের গুলি ওই শিশুকে আঘাত করেছে। তাদের দাবি, বিষয়টি টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্স ডেকে শিশুটি ও তার আঘাতপ্রাপ্ত মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।
গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গাজায় ৩৮ হাজার শিশু এতিম, বিধবা ১৪ হাজার নারী : দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় ইসরাইলের ভয়াবহ আগ্রাসনে গাজায় এতিম হয়েছে ৩৮ হাজারেরও বেশি শিশু। আর স্বামীহারা হয়ে বিধবা হয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার নারী। বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জাহের আল-ওয়াহিদি এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশু এতিম হয়ে গেছে। জাহের আল-ওয়াহিদি বলেন, ‘ইসরাইলি এই বর্বরতায় কমপক্ষে ১৩ হাজার ৯০১ জন নারীও বিধবা হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ এই আগ্রাসনে প্রায় ৩২ হাজার ১৫১ জন শিশু তাদের বাবাকে হারিয়েছে। এছাড়া ৪ হাজার ৪১৭ শিশু তাদের মাকে হারিয়েছে এবং ১ হাজার ৯১৮ শিশু তাদের মা-বাবা উভয়কেই হারিয়েছে।’
এদিকে গাজায় ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের আপাতত অবসান ঘটলেও গাজায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের মিসর, জর্ডানে পাঠিয়ে গাজা খালি করবেন ট্রাম্প : ইসরাইলের মানবতাবিরোধী হামলায় লন্ডভন্ড গাজা উপত্যাকাকে ‘পুরোপুরি খালি’ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের অংশ হিসাবে গাজাবাসীদের মিসর ও জর্ডানে পাঠানো হবে। শনিবার এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান।
ইসরাইল-হামাসের মধ্যকার সাম্প্রতিক যুদ্ধে গাজা ‘লন্ডভন্ড’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে ট্রাম্প জানান, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি ইতোমধ্যে কথা বলেছেন। রোববার মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সঙ্গেও ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করার বিষয়ে কথা বলবেন বলে ট্রাম্প জানান।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই মিসর তাদের গ্রহণ করুক। আমি আরও চাই, জর্ডানও কিছু ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দিক। আমরা এখানে সম্ভবত ১৫ লাখ মানুষ নিয়ে কথা বলছি। আসুন আমরা ওই পুরো জায়গাটি পরিষ্কার করে ফেলি। শত বছরেরও বেশি সময় ওই ভূখণ্ড নিয়ে একের পর এক সংঘাত হয়েছে। (এ সমস্যার সমাধানে সেখানে) কিছু একটা হওয়া উচিত।’
ট্রাম্প জানান, ফিলিস্তিনের শরণার্থী গ্রহণ করার জন্য তিনি জর্ডানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি জর্ডানের বাদশাহকে বলেছেন, ‘আরও কিছু শরণার্থীকে গ্রহণ করলে আমি খুশি হব। কেননা আমি এখন সমগ্র গাজা উপত্যকার কথা বলছি। পুরো জায়গাই এখন একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’
ইতোমধ্যে ইসরাইলের গণহত্যার কারণে গাজার ২৪ লাখ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার পর ইসরাইলের পালটা হামলায় প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। যারা বেঁচে গেছেন, তাদেরও বারবার বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে ফিলস্তিনিদের।
ট্রাম্প বলেন, গাজাবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগটি ‘সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি’ হতে পারে। জায়গাটা আক্ষরিক অর্থেই পুরোপুরি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সেখানে প্রায় সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে এবং প্রতিনিয়তই মানুষ মারা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এমন কিছু হতে না দিয়ে বরং কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন অবস্থানে তাদের থাকার জায়গা তৈরি করে দিয়ে তাদের ভাগ্যে পরিবর্তন আনতে চাই। তারা শান্তিতে বসবাস করুক, এটাই আমার চাওয়া।
প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে এবং এর মাধ্যমে ‘যুদ্ধাপরাধের’ বিষয়টি উৎসাহিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। ট্রাম্পের এ ধারণাকে ‘দুঃখজনক’ হিসাবে উল্লেখ করে যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত হামাসের পাশে থেকে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করা পিআইজে বলেছে, ট্রাম্পের প্রস্তাব আমাদের জনগণকে তাদের ভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য করে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে উৎসাহিত করার কাঠামোর মধ্যে পড়ে। মিসর ও জর্ডানকে ট্রাম্পের এ পরিকল্পনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে।