Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন: আসিফ নজরুল

এক সপ্তাহের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইনের সব মামলা প্রত্যাহার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন: আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত না দিলে সেটি হবে প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। আর সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা বাকস্বাধীনতা সম্পর্কিত (স্পিচ অফেন্স) সব মামলা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিগত সরকারের সময়ে করা ২ হাজার ৫০০টি গায়েবি মামলা প্রত্যাহারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এতে জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠন প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই কাউন্সিল উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত অধ্যাদেশ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার অগ্রগতি কতদূর-জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা তাকে প্রত্যর্পণে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি লিখেছি। এরপরও ভারত যদি প্রত্যর্পণ না করে তবে সেটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল থেকে রেড অ্যালার্ট জারির লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের যা যা করণীয়, তা করছি। আরও কিছু করণীয় থাকলে ক্ষেত্রবিশেষে চিন্তা করে করব।

তিনি বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করায় ‘স্পিচ অফেন্স’ হিসাবে আওয়ামী লীগের আমলে সাইবার নিরাপত্তা আইনে ৩৩২টি মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে ১১৩টি মামলা প্রত্যাহার হয়েছে, বাকিগুলো (২১৯টি) দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। এ আইন প্রত্যাহার বা সংশোধনের কাজটি করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তারা যখন আমাদের পরামর্শ চান, তখন পরামর্শ দিই। সাইবার সিকিউরিটি আইনের ব্যাপারে বিভিন্নরকম পরামর্শ এসেছে। যতবারই খসড়া করা হয়, দেখা যায় কারও না কারও আপত্তি থেকে যাচ্ছে। সেজন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ আইনের ওপর আরও বিস্তারিত আলোচনা করবে।

তিনি বলেন, আমরা চিন্তা করলাম, এজন্য তো বসে থাকা যায় না। সাইবার সিকিউরিটি আইনে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। এটাই তো মূল বিষয়। আস্তে-ধীরে আলোচনা করে আইনটি সংশোধন বা বাতিলের বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।

ড. আসিফ নজরুল জানান, ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার ২ হাজার ৫০০টি গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ওই মামলাগুলো ২৫ জেলার। গায়েবি মামলা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিস্ফোরক, অস্ত্র, বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলা। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলা। যে মামলায় কিছুসংখ্যক আসামির নাম উল্লেখ করে হাজার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। যেসব মামলায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। বিরোধী দলের বড় কোনো সভা-সমাবেশ ও নির্বাচনের আগে করা মামলাগুলো গায়েবি মামলা বলে ধরা হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় থেকে আজ (মঙ্গলবার) উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ-২০২৫ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতির একটি খসড়া পেয়েছি, বিচারবিভাগীয় সংস্কার কমিশন থেকে মতামত পেয়েছি, ২০০৮ সালে এ ধরনের একটি অধ্যাদেশ জারির প্রক্রিয়া ছিল, সেই কপি পর্যালোচনা করেছি। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ সভা করেছি। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন আইনজ্ঞ, বিচারপতি এবং আইনের শিক্ষকদের মতামত নিয়েছি। চেষ্টা করা হয়েছে একটি ভালো আইন করার। অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কাউন্সিলে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের দুজন বিচারক (একজন অবসরপ্রাপ্ত, আরেকজন কর্মরত), হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারক এবং অ্যাটর্নি বেঞ্চ নিয়ে এ কাউন্সিল গঠন করা হবে। কাউন্সিল নিজ উদ্যোগে বিচারকদের নাম সংগ্রহ করবে। একই সঙ্গে যে কোনো আইনজীবী স্বেচ্ছায় বিচারক হিসাবে নিয়োগ লাভের জন্য আবেদন করতে পারবেন অথবা অন্য কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। সংগ্রহ করা নাম, আবেদন ও প্রস্তাবিত নাম কাউন্সিল যাচাই-বাছাই করে তাদের ইন্টারভিউ নেবে। অর্থাৎ একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার আশা করছে উচ্চ আদালত উদ্যোগ নিলে তিন মাসের মধ্যে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো প্রক্রিয়ায় বিচারক নিয়োগ দেওয়া যাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচারক নিয়োগে যে অধ্যাদেশ করা হয়েছে, তা সংবিধানের বিদ্যমান বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ, সাবেক বিচারপতিদের মতামত নেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে অতীতের মতো বিচারক নিয়োগ হবে না, এটাই জাতির প্রত্যাশা ও বিশ্বাস।’ কতজন নিম্ন আদালতের বিচারক থেকে আর কতজন আইনজীবীদের মধ্য থেকে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ হবে, তা ঠিক করা হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে আইনজীবীদের মধ্য থেকে বেশি বিচারক নিয়োগ দেওয়া হতো। কারণ, আইনজীবীরা দলীয় আনুগত্য বেশি দেখাতে পারেন। এ বিষয়টি কাউন্সিলের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এছাড়া পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। আশা করা যায়, শিগ্গিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে পাবলিক প্রসিকিউটররা (পিপি) যেহেতু দলীয়ভাবে নিয়োগ লাভ করেন, এ কারণে তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। তারা রাষ্ট্রের পক্ষে ভূমিকা না রেখে দলের পক্ষে ভূমিকা রাখেন। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে স্বতন্ত্র অ্যাটর্নি সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে আইন তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। হয়তো এক মাসের মধ্যে আইন চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় ৩৬ ধরনের কাগজপত্র সত্যায়ন করে। ইতোমধ্যে এ সত্যায়নের কাজ অনলাইনে করার পদ্ধতি চালু হয়েছে। আগে এ কাজের জন্য মানুষকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো। বর্তমানে ঘরে বসেই দু-একদিনের মধ্যে সত্যায়নের কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে। এর ফলে জনগণের বছরে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা বেঁচে যাবে। বিবাহের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক কর ছিল। আইন মন্ত্রণালয় তা বাতিল করেছে। বিয়ের সময় নিকাহ রেজিস্টারে মেয়েকে কুমারী লেখা হতো, তা তুলে দিয়ে অবিবাহিত লেখার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে বিভিন্ন ধারা সংশোধন করা হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন, দমন-নিপীড়ন ও চড়ম নির্যাতন শিকারের বড় এক প্ল্যাটফর্ম ছিলেন উচ্চ আদালত। কারণ, মানুষ উচ্চ আদালতে এসে বিচার পেত না। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য লোকদের বিচারক নিয়োগ দেওয়া হতো। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, যোগ্য ও নিরপেক্ষ লোকরা যদি নিয়োগ না পান, তাহলে দেশের ১৮ কোটি মানুষের মানবাধিকারের বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারে সিদ্ধান্ত হলো-উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম