Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পিলখানা ট্র্যাজেডি

দুইশ আসামির জামিন মুক্তি দুদিন পর

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুইশ আসামির জামিন মুক্তি দুদিন পর

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় প্রায় দুইশ আসামিকে জামিনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আসামিদের জামিন শুনানির দিনে কারাগারের সামনে সকাল থেকে হাজির হন স্বজনেরা। জামিন প্রার্থনায় তারা আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন। বিকালে জামিন পাওয়ার খবর শুনে শুকরিয়া জানান। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এদিন মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ ও পাঁচ শতাধিক আসামির জামিন শুনানির জন্য ধার্য ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ মেজর সৈয়দ মো. ইউসুফ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর হাজিরা দাখিল করে। বেলা সাড়ে ১১টার পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ পারভেজ হাসান সাক্ষ্য পেছানোর আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর আলহাজ মো. বোরহান উদ্দিন সাক্ষ্য নেওয়ার প্রার্থনা করেন। এ নিয়ে চলে কিছুটা তর্কবিতর্ক। পরে ১১টা ৪৭ মিনিটে সৈয়দ মো. ইউসুফ সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। সেদিন পিলখানায় কী ঘটেছিল, তিনি কীভাবে বেঁচে ফিরেছেন এসব বিষয়ে সাক্ষ্য তুলে ধরেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তার সাক্ষ্য শেষ হয়। এরপর ৫ শতাধিক আসামির পক্ষে জামিন শুনানি হয়। এদের মধ্যে ছিলেন হত্যা মামলায় ২৭৭ জন খালাসপ্রাপ্ত, ২৫৬ জন ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত, যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েক আসামি জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

আসামিদের পক্ষে মোহাম্মদ পারভেজ হাসান, আমিনুল ইসলাম, ফারুক আহাম্মদ জামিন শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে বোরহান উদ্দিন জামিনের বিরোধিতা করেন। বেলা আড়াইটার দিকে জামিনের বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। আদালত আধাঘণ্টা বিরতি দিয়ে ৩টায় জামিনের বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানান। ৩টা ১৩ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আদালত বলেন, যখন কোনো ইনজাস্টিস (অবিচার) হয়ে যায় তখন আমাদের উচিত জাস্টিস রিস্টোর (সুবিচার ফেরানো) করা। যারা হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন তাদের ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে আমার অভিমত। তবে যারা এ মামলার আসামি তারা আপাতত কারাগারেই থাকবেন। সাক্ষী তো চলবেই। বিচার শেষ হতে আর বেশিদিন লাগবে না। পরে আদালত যারা নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত ও আপিল বিভাগ থেকে খালাস পেয়েছেন তাদের জামিনের আদেশ দেন। এ ছাড়া আপিলে যে দুই আসামির এক বছর করে সাজা হয়েছে আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদিন পর দেখে শুনে জামিনপ্রাপ্তদের জামিননামা দাখিল করতে বলেছেন আদালত। যেন দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামি ভুল করে বের হয়ে যেতে না পারেন। আমরা দুদিন পর দেখেশুনে জামিননামা দাখিল করব। দুদিন পর জেলখানা থেকে তারা মুক্তি পাবেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর বোরহান উদ্দিন বলেন, আসামিপক্ষ যে দরখাস্ত দিয়েছে তারা ঠিক বলতে পারেনি যে কতজনের জন্য জামিনের দরখাস্ত দিয়েছেন। হাইকোর্টে কতজন খালাস পেয়েছেন তা নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেয়েছে এমন ৩০ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল। সেখান থেকে ১৫ জনের যাবজ্জীবন ও ১৫ জন খালাস পান। এ তথ্য ছাড়া বাকিদের সংখ্যা বলতে পারেনি আসামিপক্ষ। এ কারণে আদালতের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট না হওয়ায় আদালত শর্ত দিয়েছেন যে, যারা নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত ও আপিল বিভাগ থেকে খালাস পেয়েছেন তারাই জামিন পাবেন। তবে জামিন পাওয়ার সংখ্যা দুই শতাধিক হবে।

এদিকে জামিন শুনানির কথা শুনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ছুটে আসেন স্বজনরা। এ সময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদেশের পর এক স্বজন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বাবা কোনো দোষ করেননি। আমরা তাকে ফিরে পেলাম। এই রায়ের জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা সন্তুষ্ট। আরেক স্বজন বলেন, আমার ভাই মাত্র ১৯ দিন চাকরি করেছিলেন। এরপর ১৬টি বছর তার জীবন থেকে চলে গেছে। এই বলে কান্না ধরে রাখতে পারেননি তিনি।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে যায় ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।

বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম একপ্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।

অন্যদিকে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে ৮৩ আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম