Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি হত্যার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি হত্যার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আগ্রাসন চালিয়ে ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। নির্ধারতি সময়ের ৩ ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় রোববার বেলা সোয়া ১১টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে বিলম্বিত এ সময়ের মধ্যেই ইসরাইলের হামলায় নতুন করে আরও ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরার।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক ঘোষণায় জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টায় (বাংলাদেশি সময় বেলা সোয়া ৩টা) শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস যেসব ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে তাদের তালিকা প্রকাশের পর এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এর আগে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসাবে আমরা আজ রোমি গোনেন (২৪), এমিলি দামারি (২৮) এবং ডোরন শাতানবার খাইরকে (৩১) মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসাবে হামাস যেসব জিম্মিদের প্রথম দিন মুক্তি দেবে তাদের তালিকা পেয়েছে।

শুক্রবার কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে শনিবার যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি অনুমোদন করে ইসরাইলের মন্ত্রিসভা। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির একটি চুক্তি অনুমোদন করেছে ইসরাইলের মন্ত্রিসভা।

চুক্তি অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপেই হামাস ৩৩ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, এর বিনিময়ে ইসরাইলও তাদের জেলে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে। এই সময়ের মধ্যে ইসরাইলি বাহিনীকে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও ছাড়তে হবে, আর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পাবে বাড়ি ফেরার অনুমতি। এই সময়ে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় ঢোকারও সুযোগ দেবে তেলআবিব।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। এই ধাপেই মুক্তি পাবে পুরুষ ইসরাইলি সেনারা। তৃতীয় ও শেষ ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন, যা শেষ হতে লাগবে কয়েক বছর।

তবে হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি স্থায়ী না হলে এবং ইসরাইলি বাহিনী গাজা না ছাড়লে তারা প্রথম ধাপের পর আর কোনো জিম্মিকে ছাড়বে না।

তবে, চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, প্রথম ধাপে যে জিম্মিরা মুক্তি পাচ্ছেন তাদের মধ্যে বেসামরিক নারী, শিশু, নারী সেনা, বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত বেসামরিকরা রয়েছেন।

এদিকে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আল-মায়াদিনকে এক বিশেষ সূত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার সূত্রটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যে কোনো নারী বা শিশু বন্দিকে মুক্তি দিলে, প্রতি বন্দির বিপরীতে ইসরাইলি কারাগার থেকে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। একইভাবে, ৫০ বছর বা এর বেশি বয়সি বা অসুস্থ বন্দিদের ক্ষেত্রে প্রতি বন্দির বদলে ৩০ জন বয়স্ক বা অসুস্থ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে।

এ ছাড়া, একজন নারী ইসরাইলি সেনাকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি এবং ১৫ বছরের কম সাজা বাকি থাকা আরও ২০ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ২০১১ সালের বিনিময় চুক্তিতে মুক্তি পাওয়া কিন্তু পরবর্তী সময় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের হাতে পুনরায় গ্রেফতার হওয়া ৪৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

তা ছাড়া, এই চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের আগের অভিযোগে পুনরায় গ্রেফতার করা যাবে না। তাদের বাকি সাজা ভোগ করতে হবে না এবং মুক্তির শর্ত হিসাবে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে হবে না।

এদিকে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর ও ইসরাইল তা অনুমোদন দেওয়ার পরও গাজায় বন্ধ হয়নি ইসরাইলি হামলা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন ২৩ জন। আর এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪৭ হাজারে পৌঁছেছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনী তিনটি পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে ২৩ জনকে হত্যা করেছে এবং ৮৩ জনকে আহত করেছে।’

এ ছাড়া, হামাসের বরাত দিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার রাফাহ থেকে ফিলাডেলফি করিডরের দিকে তাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি হামাস বা ইসরাইল।

৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এরপর থেকে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।

ইসরাইলের ৩ মন্ত্রীর পদত্যাগ : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করে ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভিরসহ তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করা ইতামার ইসরাইলের কট্টর জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় দল জিউইশ পাওয়ার পার্টির নেতা। তার দলের আরও দুই সদস্য ইয়িস্তাহাক ওয়াসারলাউফ এবং এমিখাই এলিয়াহু নেতানিয়াহু সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। জিউইশ পাওয়ার পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আর ক্ষমতাসীন জোটের অংশ নয়। তবে দলটি বলছে, তারা সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করবে না। ইতামারের দল এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোর বিরোধিতা করে একে ‘কলঙ্কজনক’ যুদ্ধবিরতি চুক্তি বলে অভিহিত করেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম