বিএসএফ ও ভারতীয়দের সাউন্ড গ্রেনেড ও পাথর নিক্ষেপ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ফের উত্তেজনা, হামলায় আহত ৫
পতাকা বৈঠকে বিএসএফের দুঃখ প্রকাশ ও তদন্তের প্রতিশ্রুতি * সীমান্তে বিজিবির অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন * বিএসএফ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে-বিজিবি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্তে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শনিবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতীয়রা বাংলাদেশি কৃষকের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিএসএফ। মুহুর্মুহু পাথর ছোড়ে ভারতীয়রা। তাদের হামলায় ৫ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তাৎক্ষণিক তৎপরতায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। দিনভর চরম উত্তেজনার পর বিকালে পতাকা বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএসএফ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় বাহিনী সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময়ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
এদিকে সাতক্ষীরার ভোমরায় লক্ষ্মীদাড়ি সীমান্তে জিরো পয়েন্টের বিভিন্ন গাছে সার্চ লাইট লাগিয়েছে বিএসএফ। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টায় কিরণগঞ্জ সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার-১৭৭-এর সাব পিলার ৩/৪এস পিলারের কাছে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, গম কাটার অভিযোগে নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আম ও পেয়ারা গাছ কাটতে থাকে। একপর্যায়ে তারা বাংলাদেশিদের বরইবাগানও তছনছ করা শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় ভারতীয় নাগরিকরা হাঁসুয়া ও লাঠিসোঁটাসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশিদের ওপর চড়াও হয়। তাদের ছোড়া পাথর ও অস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৫ জন গুরুতর আহত হন। এ সময় বিএসএফ একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তখন বিজিবি সদস্যরা বাংলাদেশি নাগরিকদের নিবৃত্ত করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুই বাহিনীর ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করে বিএসএফ।
কয়েকজন কৃষক একই রকম তথ্য দিয়ে বলেন, বিএসএফ ও ভারতীয়রা নোম্যান্স ল্যান্ড অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। তাদের হামলায় আহত পাঁচ বাংলাদেশিকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলার ঘটনা জানাজানি হলে সীমান্তে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার ভয়ে বিজিবি আমাদের থামিয়ে দেয়।
তারা আরও বলেন, এর আগে ৬ জানুয়ারি বিএসএফ ১৭৭নং আন্তর্জাতিক মেইন পিলারের ২এস সাব পিলার এলাকায় নোম্যান্স ল্যান্ডের ১০০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করলে সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়। আবারও তারা সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বাংলাদেশিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের জীবন থাকতে আমরা এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়ব না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৯ মহানন্দ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, চৌকা সীমান্তের পর আজ (শনিবার) পাশের কিরণগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশের আমগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশি কৃষকদের ফসল ও গাছপালা কেটে ফেলে। সীমান্তে তারা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। আমরা এ ঘটনা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। এ নিয়ে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের এক ইঞ্চি মাটিও ছাড় দেব না। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা তৎপর রয়েছি। সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছি।
সাতক্ষীরা সীমান্তে সার্চলাইট বসিয়েছে বিএসএফ : সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরা ভোমরার লক্ষ্মীদাড়ি সীমান্তের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় সার্চলাইট লাগিয়েছে বিএসএফ। রাতে যার আলো এসে পড়ে বাংলাদেশ সীমান্তে। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত জ্বলে লাইটগুলো। স্থানীয়রা জানান, এর আগে এখানে কোনো লাইট ছিল না। ৫ আগস্টের পর থেকে এসব লাইট লাগানো হয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ২০ থেকে ২৫ গজ অন্তর অন্তর ধাপে ধাপে বসানো হয়েছে লাইটগুলো। স্থানীয়দের অভিযোগ, লাইট বসানোর সময় নিষেধ করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি বিএসএফ। উলটো হুমকি দিয়েছে। ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের প্রশ্ন, ভারতের আলো বাংলাদেশে কেন। এ বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশরাফুল হকের মোবাইলে ফোনে একাধিক কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিজিবির সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি এখনই যাচাই করা সম্ভব নয়। যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক সীমানা। কাজেই কনভেশনের বাইরে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই। এই কাজটি অনেক আগে থেকেই সীমান্তে চলমান ছিল বলে তিনি জানান।
এদিকে ১১ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সীমান্তের কৃষক নজরুল ইসলামের ধান রোপণে বাধা দেয় বিএসএফ। এ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকেও মেলেনি সমাধান। সীমান্তের জমি নিয়ে বিরোধের এ ঘটনা ২০ জানুয়ারি দুই দেশের ভূমি কর্মকর্তা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে মাপ জরিপের মাধ্যমে সমাধান হবে বলে জানিয়েছে বিজিবি।