অবিবেচকভাবে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে: ড. দেবপ্রিয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাম্প্রতিক সময়ে অবিবেচকভাবে পণ্যেমূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষ কর আহরণে কোনো পরিকল্পনা দেখিনি। অর্থাৎ যারা কর দেন না, তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানা গেল না। অর্থনৈতিক সংস্কারে সরকারের মনোযোগ নেই।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁও বিআইসিসিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সিম্পোজিয়ামে অর্থনীতিবিদ এবং এসডিজিবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। সিম্পোজিয়ামের বিষয় ছিল ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’। একই অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা এসকে বশিরউদ্দীন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, টিসিবির এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখ ভুয়া। তার মতে, ‘সমাজে বৈষম্য তৈরি হয়েছে বলেই আন্দোলন হয়েছে। যা দূর করা সম্ভব নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে।’ করের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় করই গুরুত্বপূর্ণ। আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এর প্রয়োগ করা।’ অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও গত ডিসেম্বরে অনৈতিকভাবে লাভ করেছে ব্যাংকগুলো, যা খতিয়ে দেখা উচিত।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, আমরা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি, কীভাবে অবিবেচকভাবে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। কর সংগ্রহ করতে হলে ক্রমান্বয়ে প্রত্যক্ষ কর প্রদানকারীর কাছে যেতে হয়। আমরা প্রত্যক্ষ কর আহরণে কোনো পরিকল্পনা দেখিনি। যারা কর দেন না তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটা জানা গেল না। আমাদের এটা চিন্তিত করেছে। আশঙ্কা করছি আগামী গরমে জ্বালানি পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। রেকর্ড পরিমাণ আমন উৎপাদন করেও সংগ্রহ অভিযানে সাফল্য নেই। তিনি বলেন, সংগ্রহ অভিযানে আগে যেমন দুর্নীতি ছিল, তা এখনো আছে। কৃষক তার ফসলের মূল্য পাচ্ছেন না। সামাজিক সুরক্ষা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে আছে। এই সরকার কী ধরনের অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার রেখে যাবে প্রশ্ন তোলেন এই অর্থনীতিবিদ। সুষম অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে যে ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো বা সংস্কার দরকার। কিন্তু সে রকমের কোনো রূপরেখা আমরা দেখলাম না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো সংশোধিত বাজেট দিতে পারেনি। এটা না থাকার কারণে অন্যান্য বাজেটের কিছু সূচক পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। আগামী বাজেটকে কেন্দ্র করে সরকারের অর্থনৈতিক আলোচনা দরকার। প্রবৃদ্ধির ধার কমে গেছে। কমেছে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ। কর্মসংস্থানে সমস্যা রয়ে গেছে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক খাত সংস্কারে বর্তমান সরকার যেভাবে মনোযোগ দিচ্ছে, অর্থনৈতিক খাতে সেভাবে মনোযোগ নেই। বর্তমান সরকারের সংস্কারের যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে, এর মধ্যে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কিছুটা উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, শ্বেতপত্রে যেসব সুপারিশের কথা বলা হয়েছে, আগামী বাজেটে সেসব জোরদার করা দরকার। একই সঙ্গে যেসব নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। তার মতে, দেশ মধ্যমেয়াদি ফাঁদে ঢুকে গেছে। শ্বেতপত্রে কিছু উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে কৃষকরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের কথা বলা হয়েছে। তাতে হয়তো বা ব্যয় কিছুটা বাড়ানো হবে। তবে এই বরাদ্দ কারা পাবে সেটা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, শ্বেতপত্রে অসহায়-দুস্থ মানুষের কথা বলা হয়েছে। তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে। সেটাও সেভাবে করা হচ্ছে না।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন ঋণখেলাপি, অর্থ পাচার, ব্যাংক ব্যবস্থার দুরবস্থাসহ দেশের অর্থনীতির নানা দুর্বল দিক। এর কোনোটিই নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে। তবে বিগত সরকারের অপশাসন ঋণখেলাপির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হিসাবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। পুরো আর্থিক খাত রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তবে তারা কিছু শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের ওপর গুরুদায়িত্ব পড়বে। তাদের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে।