চাঁদাবাজি-দখলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে: জামায়াত আমির
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একমাত্র কুরআনের শাসন দেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম করতে পারে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের ন্যায়ের যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধ কতক্ষণ? যতক্ষণ না রাষ্ট্র ও সমাজে ইনসাফ কায়েম হয়। এই ইনসাফ দিতে পারে একমাত্র আল কুরআন। এই কুরআনের শাসনের আলোকে আমরা বাংলাদেশ গড়তে চাই।
শনিবার দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর জামায়াত আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের সন্তানরা এত এত রক্ত কেন দিল? কারণ তারা চেয়েছে এই সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে সব ধরনের দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কবর রচিত হোক। আমরা একটা কল্যাণময় রাষ্ট্র কায়েম করব।
সারা দেশে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা এসব করছেন, বিনয়ের সঙ্গে তাদের বলি, এগুলো বন্ধ করুন। তবে যদি আমাদের এই বিনয়ী অনুরোধ কেউ না মানেন, তাহলে বলছি, আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। সন্তানরা স্লোগান দিচ্ছে-আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। যুদ্ধ চলবে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী, যেটাকে শিক্ষার ভিলেজ বলা হয়, শিক্ষার গ্রাম, শিক্ষানগরী। আমি আশা করি, ৫ আগস্টের পর রাজশাহীতে আর কোনো চাঁদাবাজি হয় না। এখানকার মানুষ ভদ্র, বিনয়ী ও সৎ। কেউ চাঁদাবাজি এখানে করে না, ঠিক নয়? এ সময় নেতাকর্মীরা ‘চাঁদাবাজি হয়’ বলে আওয়াজ তোলেন। আমির প্রশ্ন করেন, এখানেও চাঁদাবাজি হয়? এখানেও ফুটপাত দখল হয়? হাটবাজার, বালুমহাল, জলমহাল, যানবাহন স্ট্যান্ড, সবগুলোতে দখলদারি হয়? তখনো মাঠভরা নেতাকর্মীরা ‘হয়’ বলে আবার আওয়াজ তোলেন।
ডা. শফিকুর বলেন, তাহলে আমাদের শহিদদের রক্তের প্রতি এটা কী ভালোবাসা? অফিস আদালতে ঘুস বাণিজ্য আছে, আবার মামলা বাণিজ্যও অনেকে করেন। তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ-এই কাজ করবেন না। আমাদের শহিদদের আত্মা বড় কষ্ট পাবে।
তিনি আরও বলেন, ১৫টি বছর আলেম-ওলামাদের ওপর সরকার নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছে। জামায়াতের দুজন আমিরসহ ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করেছে তাদের গুম করেছে। অসংখ্য ভাইকে খুন করেছে। চাকরি কেড়ে নিয়েছে। ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়েছে। কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেয়নি। মানুষের কল্যাণে কাজ করার কারণে অনেকে জিন্দা শহিদ হয়ে আছে। হাত-পা টুকরা-টুকরা। এই কষ্টের জীবন নিয়ে তারা বেঁচে আছেন।
শফিকুর রহমান বলেন, যারা রক্ত দিয়ে আজকের এই পরিবেশ দিয়ে গেছেন, আমরা তাদের প্রতি ঋণী ও কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজীবন শোধ করতে হবে। এমন সাহসী সন্তান থাকলে বাংলাদেশকে নিয়ে আর ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা প্রশ্ন করেছেন-আপনাদের দলের কতজন শহিদ হয়েছে। আমরা বলেছি, যারা শহিদ হয়েছেন আমরা তাদের দলের মানুষ। তাদের কোনো দলীয় পরিচয়ে আমরা সংকীর্ণ স্থানে নামাতে চাই না। তারা জাতীয় সম্পদ। তাদের আমরা মাথার ওপরে তুলে রাখতে চাই।
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. মো. কেরামত আলী। আর সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগরের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল।
অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোবারক হোসাইন, রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।
কর্মী সম্মেলন ছাড়াও এদিন দুপুরে চিকিৎসক সমাবেশ এবং বিকাল ৩টায় জামায়াতের মহিলা সদস্য সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির। সন্ধ্যার পর তিনি ব্যবসায়ীদের নিয়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ভবনে একটি সমাবেশ করেন।