Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

মোবাইল, রেস্টুরেন্ট ওষুধের ভ্যাট কমছে

Icon

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মোবাইল, রেস্টুরেন্ট ওষুধের ভ্যাট কমছে

জনরোষের মুখে মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, রেস্টুরেন্ট এবং ওষুধের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমাতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে দিকনিদের্শনা দিয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যে নতুন ভ্যাট হারের আদেশ জারি হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশকে কর-জিডিপি অনুপাত দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দেয়। টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার (৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা) সঙ্গে যোগ করে আদায় করতে হবে। একই সঙ্গে আইএমএফ শর্ত দেয় যে, বকেয়া আদায় বা মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় করলে চলবে না, অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে বাজেট পদক্ষেপের মাধ্যমে। অর্থাৎ করহার বাড়িয়ে-কমিয়ে। এ অবস্থায় এনবিআর ভ্যাটহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ জানুয়ারি প্রায় শতাধিক পণ্যের ভ্যাট- সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়। এ তালিকায় ছিল-জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ/সস, সিগারেট, জুস, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন, ফলমূল, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পল (স্যান্ডেল), বিমান টিকিট। নতুন আদেশ অনুযায়ী, জীবনরক্ষাকারী ওষুধের ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। এ কারণে ওষুধের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ওষুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এনবিআরকে জানানো হয়। একইভাবে মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়। এ নিয়ে সব মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হোটেল-রেস্টুরেন্টের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এ ব্যাপারে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয় হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, বাংলাদেশে হোটেল, রেস্তোরাঁ মালিকরা সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছে। প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের দাম ওঠানামা করলেও খাবারের দাম সমন্বয় করা যাচ্ছে না। তার ওপর ভ্যাটহার বাড়ানোয় মালিকরা বিপদে আছে। এত বেশি হারে ভ্যাট চাইতে গিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে বচসা এবং কোথাও কোথাও হাতাহাতির মতো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় ভ্যাট না কমালে হোটেল, রেস্তোরাঁ মালিকদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছি। আশা করছি এনবিআর অতিরিক্ত ভ্যাটহার প্রত্যাহার করবে।

দেশি ব্র্যান্ড টুয়েলভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, পোশাকের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের ফলে শিল্প, ভোক্তা ও সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ব্র্যান্ডগুলো মাত্র উঠতে শুরু করেছিল। এ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ছিল। এই মুহূর্তে ভোক্তারাই ভ্যাটের ১৫ শতাংশ অর্থ দিতে চাইবে না। এ সিদ্ধান্তের পোশাক খাতে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার আরও বড় হবে। যারা ক্যাশ টাকায় বিক্রি করেন, তারা লাভবান হতে পারে। কিন্তু যারা স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করতে চায়, তাদের জন্য বুমেরাং হবে। তিনি আরও বলেন, পোশাক খাতের ভ্যাট হার বাড়াতে হলে সেটা এক লাফে বাড়ানো ঠিক হয়নি। সরকার ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে ভ্যাটহার বাড়ালে ক্রেতার ওপর প্রভাব ফেলত না এবং ব্যবসায়ীরাও বর্ধিত ভ্যাটের সঙ্গে এডজাস্ট করে নিত। এ অবস্থায় সরকার পোশাক খাতের ভ্যাটহার কমাবে বলে আশা করছি।

অবশ্য বৃদ্ধির পর ভ্যাট হার অপরিবর্তিত থাকছে পটেটো ফ্ল্যাকস; কর্ন স্টার্চ; বিস্কুট; কেক; আচার; চাটনি; টমেটো সস, টমেটো কেচাপ; আম, আনারস, পেয়ারা, তেঁতুলের পেস্ট; লুবব্লেন্ডিং অয়েল; আমদানিকৃত বিটুমিন; রড তৈরি কাঁচামাল ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ; এইচ আর কয়েল, সিআর কয়েল; টয়লেট টিস্যু. ন্যাপকিন; সানগ্লাস, চশমার ফ্রেমের। আমদানি পর্যায়ে বৃদ্ধির পর সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত থাকছে, সেগুলো হচ্ছে-বাদাম, তাজা-শুকনা সুপারি, তাজা-শুকনা আম, কমলা লেবু, লেবুজাতীয় ফল, আঙুর, তরমুজ, তাজা ফল, ফলের রস, সাবান-ডিটারজেন্ট, রং তৈরির কাঁচামালের। অপরিবর্তিত থাকতে পারে বিমান টিকিটের আবগারি শুল্ক হারও। অভ্যন্তরীণ পথে বিমান টিকিটের আবগারি শুল্ক ৭০০ টাকা, সার্কভুক্ত যে কোনো দেশের টিকিটের আবগারি শুল্ক ১ হাজার টাকা, সার্কভুক্ত দেশের বাইরে এশিয়ার মধ্যে যে কোনো দেশের টিকিটের আবগারি শুল্ক আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপ ও আমেরিকার বিমান টিকিটের আবগারি শুল্ক চার হাজার টাকা অপরিবর্তিত থাকছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আইএমএফের শর্তে ভ্যাট হার বৃদ্ধির পর সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ অবস্থায় ওষুধ, মোবাইলের মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতের ভ্যাটহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম