১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস
কারামুক্তিতে বাধা নেই বাবরের
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![কারামুক্তিতে বাধা নেই বাবরের](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/01/15/1-(29)-6786d00b1abe0.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা পৃথক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দায় থেকে খালাস পেলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ পাঁচজন। রায়ে মামলার আসামি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ পাঁচজনের সাজা কমিয়েছেন আদালত। এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাইকোর্ট এ রায় দেন। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের পর লুৎফুজ্জামান বাবরের কারামুক্তিতে বাধা কাটল। এখন থেকে যে কোনো সময় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করবেন বলে জানান তার আইনজীবী।
এদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কখন কারামুক্ত হচ্ছেন তা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীসহ তার আত্মীয়স্বজন ও এলাকার মানুষের মাঝে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। প্রায় ১৭ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন তিনি। এরমধ্যে কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাও নেন। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের চোরাচালান মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন খালাস পান। লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়া খালাসপ্রাপ্ত অপর চারজন হলেন-রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কেএম এনামুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন। এছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ১৪ জনের মধ্যে পরেশ বড়ুয়াসহ পাঁচজনের সাজা কমানো হয়েছে। পরেশ বড়ুয়ার সাজা এখন ১৪ বছর করা হয়েছে। অপর চার আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। এরা হলেন-জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, তৎকালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ ও হাফিজুর রহমান।
মঙ্গলবার রায়ের পর লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, রায়ে আদালত বলেছেন আজকে একটি ‘অ্যাডভান্স অর্ডার’ সই করে দেবেন। আমি আশা করি আজকেই এই আদেশ কারাগারে পৌঁছানো হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। তার আইনজীবী আরও বলেন, এই মামলায় ১৪ জনের সাজা হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচজন খালাস পেয়েছেন। পাঁচজনের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুজনিত কারণে চারজনের আপিল এমনিতেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যে পাঁচজন সাজা পেয়েছেন তাদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়ার সাজা রয়েছে ১৪ বছর। আকবর, লিয়াকত, হাফিজ এবং সাহাবুদ্দিন-এ চারজনকে ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ বছর করে সাজা হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে জেলে আছেন। বিচারক বলেছেন ইতোমধ্যে তারা যে সময়টুকু জেল খেটেছেন, তা তাদের জেল খাটার পরিপূর্ণ মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাক ভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে লুৎফুজ্জামান বাবরকে ৭৮ দিন রিমান্ডে রাখা হয়। তার আইনজীবী জানান, রিমান্ডে নিয়ে লুৎফুজ্জামান বাবরের ওপর নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান এ ঘটনায় জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ তাকে রাজসাক্ষী হওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাতেও তিনি রাজি হননি। হাইকোর্ট শুনানিকালে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েছেন বলে জানান লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল একই দিনে দুটি মামলায় রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। দণ্ডিত ১২ জন পৃথক আপিল করেন। মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
আপিলের পরিসমাপ্তি হলো নিজামীসহ মৃত চারজনের : মারা যাওয়ার কারণে চারজনের আপিল ‘অ্যাবেট’ (পরিসমাপ্তি) ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তারা হলেন-সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ ও ট্রলার মালিক হাজি সোবহান। আদালতে আসামি পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, মোহাম্মদ আহসান শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। এর আগে সবশেষ ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান লুৎফুজ্জামান বাবর। বিএনপির এই নেতা দুর্নীতি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের (দুই মামলা) মতো ঘটনায় করা মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর এসব মামলার আপিল শুনানি শেষে খালাস পাচ্ছেন লুৎফুজ্জামান বাবর। ২০০৭ সালের ২৮ মে আটক হন লুৎফুজ্জামান বাবর। এরপর বিভিন্ন মামলায় তার দণ্ড হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয় এবং একটিতে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন দণ্ড। ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে এবং ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে খালাস পান তিনি। সবশেষ ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেলেন তিনি।
আনন্দ মিছিল : নেত্রকোনা ও মদন প্রতিনিধি জানান, বাবরের মুক্তিতে তার নিজ এলাকা মদনে আনন্দ মিছিল করছে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন মদন উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল আলম তালুকদার ও পৌর বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দন। এ সময় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির, সাবেক উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হেলিম ভুলু ও সাবেক পৌর বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান সম্রাটসহ অঙ্গও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলে অংশ নেন। এদিকে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মুক্তির খবরে নেত্রকোনা জেলা শহরেও আনন্দ মিছিল হয়েছে। জেলা যুবদলের সাবেক ১নং সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন রণির নেতৃত্বে মিছিলটি করা হয়। শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইসলাম উদ্দিন চঞ্চল, সেলিম আহমেদ, জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফাজ উদ্দিন খান চন্দন প্রমুখ।